ইউক্রেনে রাশিয়ার আগ্রাসনের এক হাজার দিন পার হয়ে গেছে। এরমধ্যে অনেক চড়াই উতরাই পেরিয়ে পশ্চিমাদের অস্ত্র সহায়তার কারণে এখনও যুদ্ধক্ষেত্রে টিকে আছে ইউক্রেন। ডোনাল্ড ট্রাম্প ক্ষমতায় আসায় সমরাস্ত্র সরবরাহ নিয়ে অনিশ্চয়তা থাকায় বিদায় বেলায় বাইডেন প্রশাসন যেনো খুলে দিয়েছেন জাদুর ঝুলি। আতাকামাস ব্যবহারের অনুমতির পর এবার ইউক্রেনকে দিচ্ছেন অ্যান্টি পার্সোনেল মাইন।
এই ধরনের বিস্ফোরক মাইনগুলো রাশিয়া অনেক আগে থেকেই যুদ্ধক্ষেত্রে ব্যবহার করছে। ইউক্রেন ভূখণ্ডের অভ্যন্তরে শত্রুপক্ষের সেনাদের কাবু করতেই এই মাইন ব্যবহারের অনুমতি পেয়েছে কিয়েভ। এতদিন ধরে যুক্তরাষ্ট্র আর ইউরোপীয় ইউনিয়ন একযোগে ইউক্রেনকে সহযোগিতা করে আসায় রাশিয়াকে উস্কে দেয়ার মতো বাইডেনের একের পর এক সিদ্ধান্তে সমর্থন দিচ্ছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন। পাশাপাশি নিন্দা জানাচ্ছেন, রাশিয়ার পরমাণু নীতিমালায় পরিবর্তন আনার ইস্যুতে।
এদিকে, নিউক্লিয়ার ডকট্রিনে পরিবর্তন আনলেও রাশিয়া সাফ জানিয়েছে, পরমাণু যুদ্ধ এড়াতে যা যা করা প্রয়োজন সব করবে মস্কো। রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই ল্যাভরভ জানান, কিন্তু পশ্চিমা অস্ত্র ব্যবহার করে রাশিয়াতে ইউক্রেন যে হামলা করছে, তা রীতিমতো উস্কানিমূলক এবং জাতিসংঘের নীতিমালাবিরোধী।
রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই ল্যাভরভ বলেন, ‘পরমাণু যুদ্ধকে পশ্চিমারা বারবার উস্কে দিচ্ছে। সব পদক্ষেপ পরমাণু যুদ্ধের পক্ষে নিচ্ছে। আমরা শক্ত অবস্থান নিয়েছি কোনোভাবেই পরমাণু যুদ্ধ হবে না। সোভিয়েত ইউনিয়ন প্রথম যুক্তরাষ্ট্রকে পরামর্শ দিয়েছিল পরমাণু যুদ্ধ যেনো না হয়। কারণ পরমাণু যুদ্ধ কখনোই জেতা যায় না, তাই এটা শুরু করাও উচিত না।’
এদিকে, ইউক্রেনে রাশিয়ার আগ্রাসন শুরুর হাজারতম দিনে আতাকামাস আর অ্যান্টি পার্সোনেল মাইনের জন্য বাইডেন প্রশাসনকে ধন্যবাদ জানিয়ে জেলেনস্কি বলেছেন, আগামী বছর দেশেই সমরাস্ত্র উৎপাদন সক্ষমতা আরও বাড়াবে ইউক্রেন। দেশের স্বাধীনতা রক্ষায় সর্বোচ্চ চেষ্টা করবেন তারা। অপেক্ষা ট্রাম্পের মিরাকেলের।
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি বলেন, ‘ কোনো স্বৈরশাসকের অধীনে থাকবো না, মুক্ত হয়ে বাঁচবো। ট্রাম্পের মিরাকেলের জন্য অপেক্ষা করছি। দেশের স্বাধীনতা রক্ষায় কাজ করে যেতে হবে। সম্মুখসারিতে সক্ষমতা বাড়াচ্ছি। আগামী বছর দূরপাল্লার ৩০ হাজার ড্রোন প্রস্তুত করবো। ৩ হাজার ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র আর মিসাইল ড্রোন তৈরি করবো। সব ধরনের ড্রোন আমরাই বানাবো।’
ইউক্রেনের স্বার্থে একের পর এক সিদ্ধান্ত নেয়ার মধ্যেই কিয়েভে ভয়াবহ বিমান হামলার হুমকি এসেছে। কিয়েভে মার্কিন দূতাবাস কর্মীদের সরিয়ে দূতাবাস বুধবার বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।
এদিকে, ইউক্রেন-রাশিয়ার মধ্যে চলা উত্তেজনা যখন নতুন মোড় নিচ্ছে, তখন সংবাদ মাধ্যম রয়টার্সে এসেছে আরেক তথ্য। বলা হচ্ছে, ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে ইউক্রেনে যুদ্ধবিরতি চুক্তি নিয়ে আলোচনায় বসতে রাজি ভ্লাদিমির পুতিন। কিন্তু ন্যাটোতে যোগদানের চিন্তা থেকেই বিরত থাকতে হবে কিয়েভকে। নব নির্বাচিত মার্কিন প্রেসিডেন্ট আগেই বলেছেন, নির্বাচনে জিতলে ইউক্রেন-রাশিয়ার যুদ্ধ বন্ধ করবেন তিনি। প্রায় তিন বছর ধরে চলা এই সংঘাতে যুক্তরাষ্ট্রের ভার্জিনিয়ার সমান এলাকা ইউক্রেন থেকে দখলে নিয়েছে রাশিয়া।