আম আদমি পার্টির দাপট, নাকি ২৭ বছর পর ফিরবে বিজেপির আধিপত্য?

বিধানসভা নির্বাচন নিয়ে সরগরম ভারত

এশিয়া
বিদেশে এখন
0

টানা চতুর্থবারের মতো আম আদমি পার্টির দাপট, নাকি ২৭ বছর পর ফিরবে বিজেপির আধিপত্য? জবাব পেতে হাইভোল্টেজ দিল্লি বিধানসভা নির্বাচন নিয়ে সরগরম গোটা ভারত। মোদি সরকারের দমন পীড়নের পাশাপাশি অনেকেই দল ত্যাগ করায় কিছুটা বেকায়দায় কেজরিওয়াল। যদিও সামাজিক উন্নয়নমূলক বিভিন্ন প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নের কারণে জনপ্রিয়তার তারা। সফল কৌশলের কারণে বিজেপিও হেঁটেছে একই পথে।

২০২৫ সালের প্রথম বিধানসভা নির্বাচনে শতকোটি ভারতীয়ের চোখ এখন রাজধানী নয়াদিল্লীতে। কেন্দ্র শাসিত অঞ্চল দিল্লির মসনদে টানা চতুর্থবারের মতো আম আদমি পার্টি সরকার গঠন করবে? নাকি ২৭ বছর পর ফিরবে বিজেপির আধিপত্য তা নিয়ে গোটা ভারতে চলছে চুলচেরা বিশ্লেষণ।

৫ ফেব্রুয়ারির এই নির্বাচনে মোট আসন ৭০টি। যাতে লড়ছেন ৬৯৯ প্রার্থী। দেড় কোটির বেশি ভোটার জনপ্রতিনিধি বেছে নিতে ভোট দিচ্ছেন প্রায় ১৪ হাজার পোলিং স্টেশনে। যাদের নিরাপত্তায় রয়েছেন প্রায় ৩৬ হাজার দিল্লি পুলিশ, ১৯ হাজারের বেশি হোম গার্ড ও ২২০ প্যারা-মিলিটারি প্রতিষ্ঠান।

২০১৩ সালে প্রথম মেয়াদে কংগ্রেসের সঙ্গে জোট সরকার গঠন করলেও পরের দুই নির্বাচনে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিশ্চিত করে আম আদমি পার্টি। যদিও মাঝের পাঁচ বছর সুখকর ছিল না নতুন এই দল ও তাদের নেতাকর্মীদের জন্য। বিধানসভায় দাপট দেখালেও এখনো রাজ্যসভায় খাতা খুলতে পারেনি কেজরিওয়ালের দল। এর মধ্যে আবগারি শুল্ক নীতির দুর্নীতি মামলায় জেল খাটতে হয়েছে দলের প্রধানসহ শীর্ষ নেতাদের। নির্বাচনের মাত্র কয়েকদিন আগেই কেজরিওয়ালের সঙ্গে বিরোধিতায় দল ছেড়েছেন ৭ এমপি।

এমন পরিস্থিতিতে সামাজিক উন্নয়নমূলক প্রতিশ্রুতির সফল কৌশলেই ব্যস্ত আম আদমি পার্টি। শিক্ষার্থীদের জন্য বিনামূল্যে বাসে চলাচল, ট্যাক্সি ও অটো ড্রাইভারদের জন্য বীমা, দরিদ্র নারীদের জন্য মাসিক ২ হাজার রুপি বরাদ্দের পাশাপাশি সরকারি স্কুলের উন্নয়ন, বিনামূল্যে স্বাস্থ্য ও বিদ্যুৎ সেবা দেয়ার কথা নির্বাচনি প্রতিশ্রুতিতে উল্লেখ করেছে দিল্লির ক্ষমতাসীন দল। যদিও অসাম্প্রদায়িকতার চর্চা করলেও শুধুমাত্র মন্দিরের পুরোহিত ও গুরুদুয়ারার গ্রন্থিদের জন্য মাসিক ১৮ হাজার রুপি সম্মানীর কথাও বলা হয়েছে।

এদিকে বিজেপির পরিস্থিতি পুরোটাই উল্টো। গোটা দেশেই গেরুয়া বাহিনীর দাপট থাকলেও দিল্লিতে পায়ের নিচে মাটি পাচ্ছেন না নরেন্দ্র মোদি। ভোটারদের মধ্যে জনপ্রিয়তা অর্জনে আম আদমি পার্টির মতো সামাজিক উন্নয়নমূলক বিভিন্ন প্রতিশ্রুতি দিচ্ছে বিজেপি। শিক্ষা, স্বাস্থ্য, বিদ্যুৎ ও হত দরিদ্র নারীদের জন্য একই প্রতিশ্রুতি থাকলেও চমক হিসেবে এসেছে গর্ভবতীদের এককালীন ২১ হাজার রুপি সহায়তা ও ৫০০ রুপিতে এলপিজি সিলিন্ডার বিতরণের প্রতিশ্রুতি।

এদিকে বেকারদের জন্য মাসিক সাড়ে ৮ হাজার রুপির প্রতিশ্রুতি দিয়েও নির্বাচনের লাইম লাইটে নেই কংগ্রেস। শীর্ষ নেতৃত্বের দিল্লির প্রতি গা ছাড়া মনোভাবের কারণে তেমন প্রচারণাও লক্ষ্য করা যায়নি। বিশ্লেষকরা বলছেন, এবারের নির্বাচনে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হতে পারে। যদিও শেষ মুহূর্তে জয় ছিনিয়ে আনার দৌড়ে এগিয়ে দুর্নীতি বিরোধিতার প্রতীক অরবিন্দ কেজরিওয়াল।

ভারতের রাজনীতি বিশ্লেষক আরতি জেরাঠ বলেন, ‘তিনি পপুলিজমকে শিল্পে পরিণত করেছেন। তাই বিজেপি ও কংগ্রেস উভয়ই কেজরিওয়ালের মতো পপুলিজম পলিটিক্সের প্রতি ঝুঁকতে বাধ্য হয়েছে। আমি কখনোই এমন পপুলিস্ট নির্বাচন দেখিনি।’

মুখ্যমন্ত্রীর বাসভবন শীষমহলে কেজরিওয়ালের প্রত্যাবর্তন নাকি হতে যাচ্ছে নতুন কারো অভিষেক, তা জানতে অপেক্ষা করতে হবে আগামী ৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত।

এএইচ