রাজধানীর খিলক্ষেত এলাকায় পাইলিং এর কাজ করেন মোশাররফ। মশার কামড়ে চুলকানিতে ঘাঁ হয়ে যাওয়া হাত দেখালেন বললেন ডাবল মশারি টানিয়েও রেহাই পাচ্ছেন না।
ঢাকার উত্তর এবং দক্ষিণের বিভিন্ন জায়গায় খাল, রাস্তাসহ নানা সংস্কারের কাজ চলছে ফলে এসব জায়গায় পানি জমে বেড়েছে মশার উপদ্রব। জনপ্রতিনিধি শূন্য সিটি করপোরেশনের মশক নিধনে কার্যকরী পদক্ষেপ না থাকার অভিযোগ নগরবাসীর।
যদিও এই মশার বেশিরভাগই কিউলেক্স মশা। কিন্তু বৈশাখের হঠাৎ বৃষ্টি চোখ রাঙাচ্ছে ডেঙ্গু প্রকোপের। সাধারণত জুন থেকে ডেঙ্গু মৌসুম ধরা হলেও গত দুএক বছরে কোন নিয়ম মানছে না ডেঙ্গু।
চলতি বছর এপ্রিল পর্যন্ত ডেঙ্গুতে আক্রান্ত ছাড়িয়েছে ২ হাজার এবং মৃতের সংখ্যা ২০ ছুঁই ছুঁই। যা বিগত যেকোনো বছরের এই সময়ে আগে কখনো দেখা যায়নি।
ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের প্রশাসক জানালেন, মশক নিধনে দ্রুতই ম্যাসিভ ক্যাম্পেইন শুরুর কথা। মশা নিয়ন্ত্রণে এবার উত্তরে কাজ করবে সেনাবাহিনী। পুরো কার্যক্রম বাজেট নির্ভরতা বের হয়ে আসবে।
ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের প্রশাসক মোহাম্মদ এজাজ বলেন, ‘আমরা ইমারজেন্সি কিছু ট্র্যাপ বসানোর চেষ্টা করছি। আগে যে ওষুধগুলো ব্যবহার করা হতো বা কেনা হয়েছে সেগুলো কতটা কার্যকর ছিল তা জনগণকে দিয়ে টেস্ট করাতে চাই।’
তিনি বলেন, ‘যে ওষুধগুলো ছিটানো হচ্ছে সেটা যেন পারফেক্টলি ছিটানো হয়। এবং এখানে যেন কোনো ধরনের গাফিলতি না থাকে সেজন্য আগে যাদের সঙ্গে আমাদের চুক্তি ছিল সেটা বাদ দিয়ে সেনাবাহিনীর সাথে নতুন চুক্তিতে আবদ্ধ হচ্ছি।’
অন্যদিকে দক্ষিণ সিটি প্রতিটি ওয়ার্ড পর্যায়ে সপ্তাহব্যাপী কর্মশালা আয়োজনসহ চালাবে চিরুনি অভিযান।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা বলেন, ‘আমাদের ১ হাজার ৫০ জন স্টাফ আছে। তাদের দিয়ে আমরা ৭৫টা ওয়ার্ডে আমাদের কাজ করাই। কোনো এলাকা বেশি রোগী হলে সেটিকে লাল চিহ্নিত করে চিরুনি অভিযান পরিচালনা করা হবে। আর পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার ওপর এবার বেশি জোর দেয়া হচ্ছে।’
ব্রুটো ইনডেক্স অনুযায়ী যে কোন বছরের তুলনায় এবছর এডিস মশার ঘনত্ব বেশি। যা এরইমধ্যে বিপদজনক সূচকে পৌঁছে গেছে। কীটতত্ত্ববিদরা বলছেন, বর্ষার সময়কাল দীর্ঘ হলে এ বছর ঢাকা এবং ঢাকার বাইরে ডেঙ্গু পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার ধারণ করতে পারে।
কীটতত্ত্ববিদ ড. কবিরুল বাশার বলেন, ‘এডিস মশার ঘনত্ব নিয়ে যে কাজটা করি, গবেষণা করি সেখারে দেখছি ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের সঙ্গে সঙ্গে বেশ কয়েকটি জেলায় এডিস মশার ঘনত্ব বেশি পাচ্ছি। এবং নিশ্চিতভাবে বলতে পারি এসব এলাকায় এবার ডেঙ্গু বাড়বে। এখনই যদি আমরা এডিস মশার প্রজনন, নিয়ন্ত্রণ, ব্রিডিং সোর্স ম্যানেজম্যান্ট এবং ডেঙ্গু রোগী ম্যানেজম্যান্ট সঠিকভাবে শুরু করতে না পারি তাহলে এ বছর পরিস্থিতি খারাপ হওয়ার ঝুঁকি আছে।’
মশার বিস্তার রোধে পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতায় জনসম্পৃক্ততা বাড়ানোর ওপর জোর দিচ্ছেন জনস্বাস্থ্যবিদরা। আক্রান্ত হলেও মৃত্যুর হার কমানোর দিকে বিশেষ নজর দেয়ার পরামর্শ তাদের।
জনস্বাস্থ্যবিদ ড. মুশতাক হোসেন বলেন, ‘মশার উপদ্রব বন্ধ করার জন্য একটা কাজ হচ্ছে চিকিৎসার কাজ বিকেন্দ্রীকরণ। গতানুগতিক কাজ করলে মশার উৎপাদন কমবে না। এ দুটো কাজ করলে এবছর আমরা রোগীর সংখ্যা না কমাতে পারলেও মৃত্যুহার কমাতে পারবো।’
আর এক মাস পরই ডেঙ্গুর ভরা মৌসুম। অথচ এখনও প্রস্তুতির তোড়জোড়েই আটকে আছে কর্তৃপক্ষ।