এ যেন হলিউডের কোনো সিনেমার চিরচেনা দৃশ্য। ভোরের আলো না ফুটতেই অভিযানে নেমেছে পুলিশ। নিরাপত্তার চাদরে ঘিরে ফেলা হয়েছে একটি বাসভবন। বাইরে উপচে পড়ছে মানুষের ভিড়। হয়ত আর কিছুক্ষণ পরেই কুখ্যাত কোনো অপরাধীকে গ্রেফতার করে আনবে গোয়েন্দা সংস্থার চৌকস কর্মকর্তারা।
দৃশ্যটি দক্ষিণ কোরিয়ার রাজধানী সিউলের। যে বাড়িটিকে ঘিরে এত তোড়জোড় সেটি মূলত সদ্য অভিশংসিত দক্ষিণ কোয়ীয় প্রেসিডেন্ট ইয়ুন সুক ইওলের বাসভবন। গেল ডিসেম্বরে ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর ইওলের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি হয়, ৩ বার তাকে তলব করে সুপ্রিম কোর্ট। আদালতের নির্দেশ অমান্য করায় দক্ষিণ কোরীয় প্রেসিডেন্টকে আটক করতেই এদিন পুলিশের এত আয়োজন, এত প্রস্তুতি। যদিও শেষ পর্যন্ত খালি হাতেই ফিরতে হয়েছে তাদের।
শুক্রবার স্থানীয়সময় ভোর ৬টায় প্রায় দেড়শো প্রসিকিউটর ও অ্যান্টি করাপশন ইনভেস্টিগেটিভ ইউনিটের কর্মকর্তারা ক্ষমতাচ্যুত প্রেসিডেন্ট ইয়ুন সুক ইওলের বাসভবনের উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করেন।
সকাল ৮টায় সেখানে উপস্থিত হয়ে অর্ধেক কর্মকর্তা ইওলের বাসভবনে প্রবেশ করেন। এসময় প্রেসিডেন্টের ব্যক্তিগত নিরাপত্তা কর্মীদের সঙ্গে দফায় দফায় বাকবিতণ্ডা হয় তাদের। যদিও, ৬ ঘণ্টার চেষ্টার পরেও ইয়ুন সুক ইওলকে আটক করতে ব্যর্থ হন নিরাপত্তাকর্মীরা।
ইওলকে গ্রেপ্তারের খবর শুনে তার বাসভবনের সামনে জড়ো হয়ে বিক্ষোভ করেন সমর্থকরা। এসময় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলেন ২ হাজার ৭শ দাঙ্গা পুলিশ।
দেশের মানুষকে আসন্ন বিপদের কবল থেকে উদ্ধার করতে প্রেসিডেন্টের বাসভবনের সামনে জড়ো হয়েছি। দুর্নীতির তদন্ত করতে যারা এখানে উপস্থিত হয়েছেন তারা আসলে বেআইনি উপায়ে প্রেসিডেন্ট ইওলকে আটক করতে চান। আমরা তা হতে দেবো না।
প্রেসিডেন্ট নিয়ম মেনেই দেশ চালিয়েছেন। কিন্তু তার বিরোধীরাই কোনো নিয়ম মানছেন না। রিপাবলিক অব কোরিয়া ধীরে ধীরে অনিয়ম আর অরাজকতায় ভরে যাচ্ছে।
গেল ৩ ডিসেম্বর দেশজুড়ে সামরিক আইন জারির কারণ অনুসন্ধানে মঙ্গলবার প্রেসিডেন্ট ইওলকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদের নির্দেশ দেন আদালত। যদিও এর কয়েক ঘণ্টা পর রায় প্রত্যাহারের পক্ষে ভোট দেয় ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলির সদস্যরা।
পরবর্তীতে ইওলের বিরুদ্ধে দেশজুড়ে বিদ্রোহ উসকে দেয়ার অভিযোগ আনেন তদন্তকারী কর্মকর্তারা। এই অভিযোগের ভিত্তিতে ক্ষমতাচ্যুত প্রেসিডেন্টকে আটকের সময়সীমা আগামী ৬ জানুয়ারি। বিবিসি বলছে, এই প্রথম দক্ষিণ কোরিয়ার কোনো ক্ষমতাচ্যুত প্রেসিডেন্টের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি হল।
ইওনহাপের প্রতিবেদন অনুসারে, অ্যান্টি করাপশন ইনভেস্টিগেটিভ ইউনিট বা সিআইও'র সাথে যৌথভাবে ইওলের বিরুদ্ধে তদন্ত চালাবে দেশটির প্রতিরক্ষা বিভাগ ও স্বরাষ্ট্র দপ্তর।
যদিও প্রেসিডেন্ট ইওলের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেছে তার আইনজীবী। আদালতের পরোয়ানার বিরুদ্ধে বৃহস্পতিবার উচ্চ আদালতে একটি অভিযোগও দায়ের করা হয়েছে ইওলের তরফ থেকে।