সন্তানের ছবি হাতে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছেন ভাগ্যহত পিতা। জেজু এয়ার বিধ্বস্তের ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছেন আদরের কন্যা জংলুক দুয়াংমানি। তাই দক্ষিণ কোরিয়া থেকে তিন হাজার কিলোমিটার দূরে থাইল্যান্ডের বাড়িতে চলছে শোকের মাতম। পিতার একমাত্র চাওয়া, শেষকৃত্যের জন্য সন্তানের দেহাবশেষ ফিরে পেতে থাই সরকারের সহায়তা।
বিমান দুর্ঘটনায় নিহত মেয়ের বাবা বলেন, 'আমার মেয়ে আর কখনো ফিরবে না। এটিকে দুর্ঘটনা হিসেবে মেনে নিয়েছি। ধর্মীয়ভাবে অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার জন্য মেয়ের দেহাবশেষ ফেরত চাই।'
শোকের ছায়া নেমে এসেছে গোটা দক্ষিণ কোরিয়ায়। বিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় নিহতদের স্মরণে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানিয়েছেন ভারপ্রাপ্ত প্রেসিডেন্টসহ সর্বস্তরের মানুষ। হতাহতদের পরিবারকে সান্ত্বনা দিয়েছেন বিরোধী দলের প্রধান। এসময় জেজু এয়ারের কাছে ক্ষতিপূরণ চান স্বজনেরা। সর্বাত্মক সহায়তার আশ্বাস দেয়া হয়েছে এয়ারলাইন্সের পক্ষ থেকে।
জেজু এয়ারের চিফ ফাইন্যান্স অফিসার লি জাং সুক বলেন, 'আপনাদের শোক কাটিয়ে উঠতে যতটুকু প্রয়োজন, আমরা এর সবকিছুই করবো। এয়ারলাইন্সের পক্ষ থেকে দায়িত্ব নিয়ে বলছি, আপনাদের সর্বাত্মক সহায়তা দেয়া হবে। আমরা আপনাদের কাছে ক্ষমাপ্রার্থী।'
স্থানীয় একজন বলেন, 'স্বজনদের প্রতিনিধি হিসেবে বলছি, নিহতদের দেহাবশেষকে একে একে জোড়া লাগাতে হবে। তারপর পরিবারের কাছে ফেরত পাঠানো সম্ভব। সরকারের কাছে এর জন্য আরও কর্মী সরবরাহের অনুরোধ করছি।'
দক্ষিণ কোরিয়ার স্থায়ী একজন বলেন, 'বিমান বিধ্বস্তের সঙ্গে সম্পর্কিত যেকোনো অপরাধের দায়ভার জেজু এয়ারলাইন্সকে বহন করতে হবে। পাশাপাশি প্রাণহানির ক্ষতিপূরণও নিহতদের পরিবারকে দিতে হবে।'
জরুরিভিত্তিতে দক্ষিণ কোরিয়ার সকল উড়োজাহাজের সেফটি ইন্সপেকশনের নির্দেশ দিয়েছেন ভারপ্রাপ্ত প্রেসিডেন্ট। এছাড়াও বোয়িং ৭৩৭-৮০০ কে আলাদা নজরদারির মধ্যে আনার পরিকল্পনা নিয়েছে প্রশাসন। বার্তা সংস্থা ইয়োনহাপ নিউজ এজেন্সির প্রতিবেদন বলছে, বিধ্বস্ত হওয়ার আগের ৪৮ ঘণ্টায় ১৩ বার ফ্লাইট পরিচালনা করেছিলো দুর্ঘটনা কবলিত বিমানটি। এদিকে তদন্তকারী দল জানিয়েছে, পাখির আঘাত বা প্রতিকূল আবহাওয়া কিংবা দুটি ঘটনার সমন্বিত কারণে উড়োজাহাজটি বিধ্বস্ত হয়।
অবকাঠামো ও পরিবহণ মন্ত্রণালয়ের (ভূমি) জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা কাং জাং হিউন বলেন, 'সকাল ৮টা ৫৯ মিনিটে পাখির আঘাতের বার্তা পাঠান পাইলট। তিনি তিনবার মে ডে শব্দ উচ্চারণ করেন। তবে প্রকৃত ঘটনা বের করতে আরো কিছু সময় প্রয়োজন। আমরা আরেকটু সময় পেলে হয়তো এতো প্রাণহানি ঘটতো না।'
ছয় বছর পর সবচেয়ে ভয়াবহ সময় পার করলো এভিয়েশন খাত। এ বছর বেসরকারি উড়োজাহাজ দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছেন ৩১৮ জন। যার মধ্যে ডিসেম্বরেই প্রাণহানির শিকার দুই তৃতীয়াংশ যাত্রী। এ তালিকায় সবশেষ সংযোজন দক্ষিণ কোরিয়ার জেজু এয়ার। এমন মর্মান্তিক ঘটনার পর চাপ বাড়ছে উড়োজাহাজ নির্মাতা বোয়িংয়ের ওপর। গেল পাঁচ বছরে পুঁজিবাজারে দুই হাজার ৩০০ কোটি ডলারের বেশি দর হারিয়েছে মার্কিন প্রতিষ্ঠানটি।