মাত্র এক সপ্তাহ আগে ব্রাজিলের দক্ষিণাঞ্চলের রিও গ্রান্দে দো সুল শহরে যাত্রীবাহী একটি বিমান বিধ্বস্ত হয়। ঘটনাস্থলেই ১০ জনের মৃত্যু হয়। বিমানটি প্রথমে ভবনে আঘাত করে, এরপর ব্যস্ত বাজারে একটি দোকানের ওপর বিধ্বস্ত হয়।
এই দুর্ঘটনার পর গেল বুধবার ক্রিসমাসের দিনে কাজাখস্তানের আকতাউ শহরের কাছে জরুরি অবতরণের সময় আজারবাইজান এয়ারলাইন্সের একটি বিমান বিধ্বস্ত হয়। নিহত হন বিমানটির ৩৮ আরোহী। রাশিয়ার বিমানবন্দরে অবতরণের অনুমতি চাইলেও সেটা দেয়া হয়নি। পরে কাজাখস্তানে জরুরি অবতরণের সময় বিধ্বস্ত হয় উড়োজাহাজটি।
আজারবাইজান সরকারের দাবি, রাশিয়ার ক্ষেপণাস্ত্রের আঘাতে বিধ্বস্ত হয়েছে এই বিমান। অবাক করার মতো বিষয়, রাশিয়ার চেচনিয়াতে গ্রোনজি আকাশসীমায় প্রবেশের পরপরই বিধ্বস্ত হয় বিমানটি। ঘটনার পর ক্ষমা চাইলেও রাশিয়ার ক্ষেপণাস্ত্রে বিমানটি বিধ্বস্ত হয়েছে, এ কথা স্বীকার করেননি পুতিন।
এরপর সবশেষ রোববার দক্ষিণ কোরিয়ায় ১৮১ জন যাত্রী ও ক্রু নিয়ে রানওয়েতে বিধ্বস্ত হয়েছে বোয়িং সেভেন থ্রি সেভেন এইট জিরো জিরো মডেলের বিমান। অবতরণের সময় বিধ্বস্ত হওয়ায় ধারণা করা হচ্ছে পাখির কারণে, বা ল্যান্ডিংয়ে ত্রুটির কারণে বিধ্বস্ত হয়ে থাকতে পারে বিমানটি। এখন পর্যন্ত শতাধিক মরদেহ উদ্ধার হলেও ধারণা করা হচ্ছে দুইজন ছাড়া কেউই বেঁচে নেই। একই মাসে পরপর তিনটি বিমান দুর্ঘটনার পর আবারও আলোচনায় এসেছে বিশ্বের এভিয়েশন খাত। আকাশপথে চলাচলের নিরাপত্তা নিয়ে উঠেছে প্রশ্ন।
এভিয়েশন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ভূ-রাজনৈতিক অস্থিরতা দিনদিন চরমে পৌঁছানোয় অনিরাপদ হয়ে উঠছে আকাশপথ। আজারবাইজান এয়ারলাইন্সের বিধ্বস্ত হওয়ার ঘটনাটি রুশ সহিংসতার পর্যায়ে পড়ে। তবে দেশে রাজনৈতিক টানাপড়েন আর প্রতিবেশী পরমাণু শক্তিধর দেশ উত্তর কোরিয়ার সঙ্গে সম্পর্কের অবনতি, দক্ষিণ কোরিয়ার বিমানটি বিধ্বস্ত হওয়ার পেছনের কারণ কিনা, উঠছে সেই প্রশ্নও।
যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে বিমান বিধ্বস্তের ঘটনা এখন ঘটছে অহরহ। যে কারণে উড্ডয়ন আর অবতরণের আগে উড়োজাহাজের সব যন্ত্রাংশ সঠিকভাবে কাজ করছে কিনা, সেটি তদারকিও জরুরি হয়ে পড়েছে। রোববারের দুর্ঘটনার পর বোয়িংয়ের বিমান আবারও উঠে এসেছে আলোচনায়। আকাশপথে ভ্রমণে যাত্রীদের নিরাপত্তা নিশ্চিতে এয়ারলাইন্স আর বিমান নির্মাতা প্রতিষ্ঠানগুলোকে আরও সতর্ক হওয়ার পরামর্শ দেয়া হচ্ছে।
যদিও বিভিন্ন গণমাধ্যম বলছে, পাখির কারণেও ঘটে থাকতে পারে বিমান দুর্ঘটনা। ধারণা করা হচ্ছে দক্ষিণ কোরিয়ার বিমান বিধ্বস্ত হতে পারে এই কারণে। উড়ন্ত অবস্থায় বিমানের সঙ্গে ধাক্কা লাগতে পারে পাখির। বেশিরভাগ সময় উইন্ডস্ক্রিন, বা ইঞ্জিনের ভেতর পাখি উড়ে আসে। ইঞ্জিনের শক্তি কমিয়ে জরুরি অবতরণ করতে হয় তখন পাইলটকে। আর এ কারণেই অনেক সময় প্রতিবন্ধকতা তৈরি হওয়ায় বিধ্বস্ত হয় উড়োজাহাজ।
বেশিরভাগ সময় পাখিরা ঝাঁকে ঝাঁকে উড়তে থাকায় বিমানের গায়ে আঘাত লাগার বিষয়টি প্রায়ই ঘটে। মার্কিন ফেডারেল এভিয়েশন অ্যাডমিনিস্ট্রেশন জানায়, শুধু যুক্তরাষ্ট্রেই প্রতিবছর বিমানে ১৪ হাজার হাজারের বেশি পাখির আঘাতের ঘটনা ঘটে। ধারণা করা হচ্ছে, পাখির আঘাতে ল্যান্ডিং গিয়ার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েই ঘটেছে রোববারের এই মর্মান্তিক বিমান দুর্ঘটনা।