মঙ্গলবার মধ্যরাতে সামরিক আইন জারির পর এভাবেই পার্লামেন্টের বাইরে শুরু হয় সেনাবাহিনীর সঙ্গে সাধারণ মানুষের ধস্তাধস্তি, নামিয়ে দেয়া হয় তিন শতাধিক সেনা। বিক্ষোভে ফেটে পড়েন সাধারণ মানুষ। জাতীয় পরিষদে ভাঙচুর করেন ক্ষুব্ধরা। সারাদেশে শুরু হয় তোলপাড়। ইওলের যুক্তি ছিল, উত্তর কোরিয়ার ঝুঁকি মোকাবিলায় এই উদ্যোগ নিতে বাধ্য হয়েছিলেন তিনি।
এরপরই পার্লামেন্টে জরুরি ভিত্তিতে অনুষ্ঠিত ভোটাভুটিতে এই প্রস্তাবে ভেটো দেয়া হয়। নিজ দলের নেতারাই তার সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করেন। কারো সমর্থন না পেয়ে কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই প্রেসিডেন্ট তুলে নেন মার্শাল ল। সঙ্গে সঙ্গে সেনারা ফিরে যায় ব্যারাকে। বুধবার সকালে সেই সিদ্ধান্ত কার্যকরের ঘোষণা দেন তিনি।
দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট ইউন সুক ইয়োলবেলন, 'সংসদ সদস্যদের দাবিতে মার্শাল ল প্রত্যাহার করছি। সামরিক বাহিনীকে সরে যাওয়ার নির্দেশ দিচ্ছি। কিন্তু তাদের আহ্বান জানাচ্ছি, যেকোনো অপ্রীতিকর পরিস্থিতি তৈরি করা থেকে আপনারা বিরত থাকুন। দেশে অস্থিরতা তৈরি করবেন না।'
কিন্তু ঘটনার আকস্মিকতার ধাক্কা লেগে যায় পুরো দেশে। অবিলম্বে প্রেসিডেন্টের পদত্যাগ দাবি করছে দেশটির বিরোধী দল, শ্রমিক ইউনিয়নসহ দেশটির সাধারণ মানুষ। এরইমধ্যে পার্লামেন্টে উত্থাপন করা হয়েছে তার অভিশংসনের প্রস্তাব। আপাতত সংসদে ৩০০ আসনের মধ্যে ১৯২টিই বিরোধীদের দখলে। আরও সমর্থন প্রয়োজন পড়লে ইওলের দল থেকে বিরোধী দলে যুক্ত হতে হবে সদস্যদের। প্রধান বিরোধী দল জানায়, সামরিক আইন জারির সিদ্ধান্ত নিয়ে সংবিধান লঙ্ঘন করে দেশে যে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরি করেছেন প্রেসিডেন্ট ইউন সুক ইওল। আর এ কারণেই তার পদত্যাগ করা উচিত বলে বলছেন বিরোধী দলের নেতারা।
কোরিয়ার ডেমোক্রেটিক পার্টির নেতা লি জা মিউং বলেন, 'উত্তর কোরিয়াকে উস্কে দিচ্ছেন প্রেসিডেন্ট আবারও সামরিক আইন জারি হতে পারে, যেহেতু প্রথমবার ব্যর্থ হয়েছেন। ডেমোক্রেটিক পার্টিও নেতা আর আইনপ্রণেতারা দেশের সাধারণ মানুষের সঙ্গে আছে। জয় প্রতিষ্ঠায় লড়বো। কিন্তু এখানে উত্তর কোরিয়াকে উস্কানি দেয়া হচ্ছে। সামরিক সংঘাতের আশঙ্কা প্রবল। আপনারা প্রস্তুত থাকুন।'
ডেমোক্রেটিক পার্টি অব কোরিয়ার নেতা পার্ক চ্যান দায়ে বলেন, 'পদত্যাগ করতে হবে প্রেসিডেন্টকে মার্শাল ল প্রত্যাহার করে নিলেও দায় এড়াতে পারেন না প্রেসিডেন্ট। তাকে জবাব দিতে হবে। পুরো দেশের কাছে পরিস্কার, প্রেসিডেন্ট ইউন স্বাভাবিকভাবে দেশ চালানোর মতো অবস্থায় নেই। তার পদত্যাগ করতে হবে। খুব দ্রুত, জনগণ এটাই চায়।'
এ ঘটনার পর আজ (বুধবার, ৪ ডিসেম্বর) সকালে জরুরি বৈঠক হয়েছে দক্ষিণ কোরিয়ার প্রধানমন্ত্রীসহ মন্ত্রিপরিষদ সদস্যদের। পদত্যাগ করেছেন ইওলের চিফ অব স্টাফ ও জ্যেষ্ঠ সচিবরা। খোদ দক্ষিণ কোরিয়ার পিপলস পাওয়ার পার্টির নেতারাই পুরো মন্ত্রিপরিষদকে পদত্যাগ করতে বলছে।
হঠাৎ করে মার্শাল ল' জারির কারণ হিসেবে ইউন সুক ইয়োল জানান, উত্তর কোরিয়া থেকে দক্ষিণ কোরিয়াকে নিরাপদ রাখতেই এই উদ্যোগ নিয়েছিলেন তিনি। এই ঘটনার পর বিতর্কের মুখে পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছেন প্রেসিডেন্টের চিফ অব স্টাফ ও জ্যেষ্ঠ সচিবরা।
হঠাৎ সামরিক আইন জারি আর বাতিলের কারণে এশিয়ার চতুর্থ বৃহত্তম অর্থনীতির এ দেশটিতে অভ্যন্তরীণভাবে তৈরি হয়েছে অস্থিতিশীলতা। শেয়ারবাজারে সূচকের পতনের পাশাপাশি স্যামসাং, এলজি'র মতো ব্র্যান্ডের শেয়ারেরও দরপতন হয়। বিভিন্ন বিশ্লেষণে বলা হয়, এপ্রিলের নির্বাচনের পর থেকেই জনপ্রিয়তা হারিয়েছেন ইউন সুক ইয়ো। তার বিরুদ্ধে রয়েছে নানা অভিযোগ।