পরিবারের এক ব্যক্তিকে চোখের জলে ভাসিয়ে শেষ বিদায় দিচ্ছেন স্বজনরা। শেষকৃত্যে উপস্থিত পাহাড়ি এলাকা জিবরামপুরের বাসিন্দারাও ধরে রাখতে পারেননি চোখের পানি। কারণ মণিপুরের ভাগ্যহত এই ব্যক্তিদের প্রাণ গেছে জাতিগত সংঘাতে।
১৮ মাস ধরে চলা মেইতে ও কুকি জনগোষ্ঠীর সংঘাতে বিপর্যস্ত মণিপুর। পাহাড়ি এই রাজ্যে ইতোমধ্যেই প্রাণ হারিয়েছেন আড়াইশ'র বেশি মানুষ। সংকট নিরসনে পুরোপুরি ব্যর্থ বিজেপি সরকার। কেন্দ্রের পাশাপাশি এই রাজ্যেও ক্ষমতায় রয়েছে গেরুয়া শিবির। তাই সরকারের বিরুদ্ধে জনরোষ বাড়ছে প্রতিমুহূর্তেই। পাশাপাশি সহায় সম্বল হারিয়ে অনেকেই বেছে নিচ্ছেন বিচ্ছিন্নতাবাদের পথ।
স্থানীয় একজন বলেন, 'মেইতে ও কুকি গোষ্ঠী লড়াইয়ে ব্যস্ত। রাজ্য সরকার শান্তি স্থাপন না করতে পারলে তাদের দায়িত্ব ছেড়ে দেয়া উচিত।'
স্থানীয় অন্য একজন বলেন, 'তারা আমাদের ওপর হামলা চালাচ্ছে, আর আমরা চুপ করে বসে থাকবো? তারা সংঘাত শুরু করেছে, আমরা প্রতিহত করেছি।'
একজন বাবা বলেন, 'আমার ছোট ছেলের জীবন ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। সে স্কুলে যেতে পারছে না। হামলার হুমকি দেয়ায় আমি ক্ষেতে কাজ করতে যেতে পারছি না।'
তবে এত ক্ষয়ক্ষতি, প্রাণহানি ও জনরোষের পরেও হেলদোল নেই প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির। রাজ্যসভায় মণিপুর নিয়ে আলোচনার জন্য প্রস্তাব উত্থাপন করা হলেও পার্লামেন্টের স্পিকার সেটি খারিজ করে দেন। সঙ্গে যুক্ত হয়েছে প্রধান দুই দলের কাদা ছোড়াছুড়ি। সংঘাত নিরসনে বিজেপির ব্যর্থতার অভিযোগ তুলে প্রেসিডেন্ট দ্রৌপদী মুর্মুর হস্তক্ষেপ চেয়েছেন কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়গে। উল্টোদিকে বিজেপি প্রেসিডেন্ট জেপি নাড্ডার দাবি, মণিপুর ইস্যুতে মিথ্যা ও রাজনৈতিক উদ্দেশ্য প্রণোদিত তথ্য ছড়াচ্ছে কংগ্রেস।
দুই দিন বন্ধের ঘোষণা দিলেও রাজ্যটিতে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে ১০ দিন ধরে। তাই শিক্ষা কার্যক্রম পুনরায় চালু করতে এন বিরেন সিং সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে মণিপুরের নয়টি শিক্ষার্থী সংগঠন। আরও দু'দিন বাড়িয়ে নয়টি জেলায় ইন্টারনেট বন্ধ রাখা হবে শুক্রবার পর্যন্ত। অন্যদিকে আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে পুরো রাজ্যে বসানো হয়েছে ১৩৪টি তল্লাশি চৌকি।