এশিয়া
বিদেশে এখন
0

পাকিস্তানে ১৪৪ ধারার পর এবার দেখামাত্র গুলির নির্দেশ

পাকিস্তানের ইসলামাবাদে পিটিআই সমর্থকদের প্রবেশ ঠেকাতে ১৪৪ ধারা জারির পর এবার বিশৃঙ্খলাকারীদের দেখামাত্র গুলি করতে সেনাবাহিনীকে নির্দেশ দিয়েছে সরকার। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাজার হাজার সদস্য ইসলামবাদকে অবরুদ্ধ করে রেখেছে। তারপরও ঠেকানো যাচ্ছে না ইমরান খানের সমর্থকদের। ইতোমধ্যে রাজধানীতে ঢুকে পড়েছে লাখ লাখ নেতা কর্মী ও সমর্থক।

মাহেন্দ্রক্ষণের আগে চলছে শেষ মুহূর্তের বিশ্রাম। পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানকে কারাগার থেকে ছিনিয়ে নিতে প্রস্তুত তার সমর্থকরা। অন্যদিকে যুধ্বাংদেহী মনোবল নিয়ে ইসলামাবাদ ঘিরে রেখেছে নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা।

বিরোধীদের যেকোনো মূল্যে আটকাতে রাজধানীজুড়ে দুই মাসের জন্য জারি ১৪৪ ধারা। নিষিদ্ধ করা হয়েছে সব ধরনের সভা সমাবেশ। পাশাপাশি সংবিধানের ২৪৫ ধারা জারির মাধ্যমে ইসলামাবাদে সেনাবাহিনী মোতায়েন করেছে নওয়াজ শরীফ সরকার। সর্বোচ্চ বল প্রয়োগের হুমকি দেয়া হয়েছে সরকারের পক্ষ থেকে।

পাকিস্তানের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মহসীন নাকভি বলেন, 'বুলেটের জবাব বুলেটের মাধ্যমে দেয়া সহজ। সেনারা গুলি ছুড়লে পাঁচ মিনিটেই সড়ক খালি হয়ে যাবে। তবে আমরা ধৈর্য্য ধারণ করেছি। আমরা আমাদের নাগরিকদের প্রাণহানি চাই না। তবে আপনার বুঝতে হবে সীমা অতিক্রম করা যাবে না। এই কাজ করলে নিজেদের লোকদের বাঁচাতে কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে।'

গেল দু'দিন ধরে ইমরান খানকে মুক্তির আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ে রাজপথে। দলে দলে রাজধানীমুখী হচ্ছে জনস্রোত। জীবনের বিনিময়ে ইমরান খানকে মুক্ত করার ঘোষণা দিয়েছেন পিটিআই চেয়ারম্যান।

পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ দলের চেয়ারম্যান গওহর আলী খান বলেন, 'পাকিস্তানের সংবিধান ও আইন অনুযায়ী ইমরান খানের মুক্তিতে কোনো বাধা নেই। তার মুক্তি অসম্ভব কিছু নয়। তাই নেতাকে মুক্ত করতে যুক্তরাষ্ট্রসহ অন্য কোনও বিদেশি দেশের সাহায্যও আশা করে না পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ।'

এদিকে ইমরানের স্ত্রী বুশরা বিবির নেতৃত্বে পিটিআই সমর্থকদের বিক্ষোভ মিছিলটি পুলিশি বাধা পেরিয়ে ইসলামাবাদের ডি চক এলাকায় পৌঁছে গেছে। বেলুচিস্তান থেকে নারী ও শিশুসহ বিক্ষোভকারীদের বিশাল মিছিলটির অবস্থান রাজধানীর উপকণ্ঠে। এছাড়া খাইবার পাখতুনখোয়া মুখ্যমন্ত্রী আলী আমিন গন্ডাপুরের নেতৃত্বে রাজধানীর দিকে এগিয়ে যাচ্ছে হাজার হাজার মানুষ।

রাজধানী থেকে ৯০ কিলোমিটার দূরে অ্যাটকো শহরে পিটিআই সমর্থকদের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়ায় পুলিশ। এ সময় বিক্ষোভকারীরা পুলিশকে লক্ষ্য করে পাথর নিক্ষেপ করে এবং মহাসড়কে আগুন জ্বালিয়ে দেয়। পরে পুলিশ কাঁদানে গ্যাস ছুড়ে ও লাঠিচার্জ করে তাদের ছত্রভঙ্গ করে। সংঘর্ষে কয়েকজন নিহতের খবর মিলেছে। এছাড়াও সেনাবাহিনীর ওপর গাড়ি চালিয়ে হত্যার অভিযোগ জানিয়েছে সরকার।

একজন আন্দোলনকারী বলেন, 'আমাদের ওপর টিয়ার গ্যাস নিক্ষেপ করা হয়েছে। আমরা পিছু হটবো না। ইমরান খানকে মুক্ত করা এবং আমাদের শর্ত না মানা পর্যন্ত আমরা এই আন্দোলন চালিয়ে যাব।'

অন্য একজন আন্দোলনকারী বলেন, 'দেশের সবকিছু বন্ধ রাখার চেষ্টা করেও আমাদের দমাতে পারবে না। ইমরান খানের নেতৃত্বে আমরা পাকিস্তানের স্বাধীনতা ফিরিয়ে আনবো।'

পিটিআই সমর্থকদের আন্দোলনকে বেআইনি বলে রায় দিয়েছে ইসলামাবাদ হাইকোর্ট। নিরাপত্তার চাদরে ঢাকা গোটা ইসলামাবাদ। শিপিং কন্টেইনারের সাহায্যে ব্যারিকেড দিয়ে আটকে করে দেয়া হয়েছে শহরের গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট ও প্রবেশপথ। এছাড়া বন্ধ রাখা হয়েছে ইন্টারনেট সেবা। বন্ধ করে দেয়া হয়েছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। কোনো কিছুতেই যেনো থামানো যাচ্ছে না আন্দোলনকারীদের। এরইমধ্যে পিটিআই এর শীর্ষ নেতারা রাওয়ালপিন্ডির আদিয়ালা কারাগারে ইমরান খানের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন।

নির্বাচনী গণরায় চুরি, বেআইনি গ্রেপ্তার ও সংবিধানের ২৬তম সংশোধনীর প্রতিবাদে গেল ১৩ নভেম্বর এই বিক্ষোভের ডাক দেন কারাবন্দি ইমরান খান। দাবি আদায়ে ২৪ নভেম্বর ইসলামাবাদে জড়ো হওয়ার আহ্বান জানান তিনি। যা এখনও চলমান।

এসএস