চীনের অন্তর্গত স্বায়ত্বশাসিত অঞ্চল তাইওয়ানের আশপাশে গেলো সোমবার হঠাৎ করেই যে সামরিক মহড়া চালায় বেইজিং, তাতে মঙ্গলবার ভোর পর্যন্ত দেড় শতাধিক চীনা যুদ্ধবিমান ছিল বলে দাবি করেছে তাইপে। মহড়ার মধ্য দিয়ে এই অঞ্চলে আরেকবার মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে সংঘাতের আশঙ্কা। সোমবারের মহড়ায় বেইজিং মোতায়েন করেছিল যুদ্ধবিমান, যুদ্ধজাহাজ এমনকি কোস্টগার্ডের জাহাজও।
দক্ষিণ চীন সাগরে অবস্থিত এই স্বায়ত্বশাসিত দ্বীপকে বরাবরই নিজেদের বলে দাবি করে আসছে বেইজিং। হঠাৎ করেই চীনের এমন মহড়ায় নড়েচড়ে বসেছে তাইপে। যদিও এই ঘটনায় কোন অনুতাপ নিয়ে চীনের।
উল্টো দ্যা পিপলস লিবারেশন আর্মি বলছে, তাদের কাজই শত্রুপক্ষের আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ধ্বংস করে অঞ্চলের নিয়ন্ত্রণ নেয়া। চীনের সেনাবাহিনী জানায়, তাইওয়ানের স্বাধীনতা মানেই যুদ্ধ আর ধ্বংস।
পিএলএ সেনাদের মধ্যে একজন জানান, শত্রুপক্ষকে এটাই বলতে চাই, তাইওয়ানের স্বাধীনতা মানেই যুদ্ধ । আমার আর আমার সঙ্গীদের কাজ শত্রুপক্ষের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ধ্বংস করে অঞ্চলের নিয়ন্ত্রণ নেয়া আর সরাসরি নিজেদের সক্ষমতা পরীক্ষা করা ৷
এদিকে একই সুরে কথা বলছে চীনে তাইওয়ান সম্পর্কিত কার্যালয়। তাদের বক্তব্য অনুযায়ী, তাইওয়ানে শক্তি প্রয়োগ করা হবেনা এমন প্রতিশ্রুতি বেইজিং দিতে পারছে না। যদি বহির্বিশ্ব এই ইস্যুতে হস্তক্ষেপ করে, তবে চীন হাত পা গুটিয়ে বসে থাকবে না বলেও হুমকি দেয়া হয়।
চীনের তাইওয়ান বিষয়ক কার্যালয়ের মুখপাত্র চেন বিনহুয়া বলেন, 'আমরা তাইওয়ানের সঙ্গে শান্তিপূর্ণ সমঝোতায় যেতে চাই । এই কথা কখনোই দিতে পারবো না যে, তাইওয়ানে শক্তিপ্রয়োগ করবো না । লাই চিং তে তাইওয়ানের স্বাধীনতা নিয়ে অনড় অবস্থানে রয়েছে। কিছু বিচ্ছিন্নতাবাদী তাইওয়ানের স্বাধীনতা চায়, সবাই না। বহির্বিশ্বের হস্তক্ষেপ সহ্য করবো না।'
এর আগে গেলো ১০ অক্টোবর তাইওয়ানের প্রেসিডেন্ট লাই চিং তে মন্তব্য করেন, চীনের কোন অধিকার নেই তাইওয়ানের ওপর। এরপরই বেড়ে যায় তাইপে-বেইজিং উত্তেজনা। চীনে তাইওয়ান বিষয়ক মুখপাত্র তাইওয়ানের চারপাশে গেলো ৫ বছর ধরে প্রায় প্রতিদিনই যুদ্ধবিমান আর রণতরী নিয়ে মহড়া চালাচ্ছে চীন।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, চীনের সাম্প্রতিক এই মহড়ার উদ্দেশ্য রাজনৈতিক। এই মহড়ার মধ্য দিয়ে যুক্তরাষ্ট্র, জাপানসহ অন্য গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রগুলোকে চীন সতর্কবার্তা পাঠাতে চাইছে। বেইজিং অর্থনৈতিকভাবে কিছুটা দুর্বল হওয়ায় সামরিক দিক দিয়ে নিজেদের শক্তিশালী প্রমাণ করতে চাইছে। জলসীমা থেকে আকাশসীমায় স্থানান্তরিত হচ্ছে চীনের সামরিক শক্তি।
তাইওয়ানের প্রতিরক্ষা ও নিরাপত্তা গবেষক সু জু ইউন বলেন, 'এই মহড়া শুধু শাস্তি নয়, চীন সারাবিশ্বে জানান দিতে চায় তাদের রাজনৈতিক উদ্দেশ্যেও বিষয়ে। এই সামরিক মহড়ার ৭০ শতাংশই রাজনৈতিক, ৩০ শতাংশ সামরিক উদ্দেশ্য হাসিলের জন্য। যুক্তরাষ্ট্র, জাপানসহ অন্য দেশগুলোর জন্য বার্তা, চীনের সামরিক সক্ষমতা বেড়েছে। স্থলভাগ থেকে জলসীমায় মহড়ার সক্ষমতা বেড়েছে।'
যুক্তরাষ্ট্রের আসন্ন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের কারণে স্বল্পমেয়াদি হলেও মহড়া চালিয়ে যাচ্ছে বেইজিং।
নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা বলছেন, নিজেদের হুমকি হিসেবে প্রমাণ করতে গিয়ে যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়ন আর ন্যাটোর পক্ষ থেকে প্রতিরোধের শিকার হতে পারে শি জিন পিং প্রশাসন।
যুক্তরাষ্ট্র এখন পর্যন্ত চীনের সঙ্গে 'এক চীন নীতি' সমর্থন করেই কূটনৈতিক সম্পর্ক বজায় রেখেছে। কিন্তু আন্তর্জাতিকভাবে তাইওয়ানকেও ব্যাপক সমর্থন দিয়ে যাচ্ছে। তাইপেকে সামরিক সহযোগিতাও দিয়ে যাচ্ছে বাইডেন প্রশাসন। যে কারণে বেইজিংয়ের সঙ্গে বাড়ছে যুক্তরাষ্ট্রের টানাপড়েন। দুই দেশের সম্পর্কের মধ্যে সবচেয়ে বিতর্কিত ই্স্যুই এখন তাইওয়ান।
বিশ্লেষকরা বলছেন, যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচন আর ক্ষমতার পালাবদলের ওপর নির্ভর করছে যুক্তরাষ্ট্র-চীন-তাইওয়ানের সম্পর্কের ভবিষ্যত ।