এশিয়া
বিদেশে এখন
0

'এক দেশ, এক নির্বাচন' বাস্তবায়নে তোড়জোড় মোদি সরকারের

কংগ্রেসসহ বেশ কয়েকটি বিরোধী দলের জোরালো আপত্তি সত্ত্বেও 'এক দেশ, এক নির্বাচন' ব্যবস্থা বাস্তবায়নে তোড়জোড় চালাচ্ছে নরেন্দ্র মোদি সরকার। প্রস্তাবটি মন্ত্রিসভার অনুমোদনের পরও বিরোধিতা অব্যাহত থাকায়, শেষ পর্যন্ত কীভাবে এটি বাস্তবায়ন হবে তা দেখার অপেক্ষায় আছে ভারতবাসী। হাজারও শঙ্কার মধ্যেও বিজেপি জোর দিয়ে বলছে, চলতি সরকারের মেয়াদেই বাস্তবায়ন করা হবে 'এক দেশ, এক নির্বাচন' নীতি। যদিও এর জন্য সংবিধান সংশোধনের জন্য প্রয়োজনীয় সমর্থন এখনও জোগাড় করতে পারেনি ক্ষমতাসীনরা।

১৯৫১ থেকে ১৯৬৭ সাল পর্যন্ত একযোগেই হতো ভারতের লোকসভা এবং বিভিন্ন রাজ্যের বিধানসভা নির্বাচন। এরপর ১৯৭০ সালে বিধানসভাগুলো ভেঙে যাওয়ার ফলে লোকসভাও ভেঙে যায়। শুরু হয় আলাদাভাবে নির্বাচন শুরুর রীতি। ১৯৮০-এর দশকে 'এক দেশ, এক ভোট' চালুর প্রস্তাবটি সামনে আনে ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি)। ১৯৯৯ সালেও এটি বাস্তবায়নে তোড়জোড় শুরু হয়।

২০১৪ সালে নরেন্দ্র মোদি ক্ষমতায় আসার পর সেই গতি আরও বেগবান হয়। চলতি বছর নরেন্দ্র মোদি সরকার তৃতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় এসেই 'এক দেশ, এক ভোট' বাস্তবায়নে রীতিমতো রকেটের গতিতে এগোচ্ছে। ইতোমধ্যেই এ সংক্রান্ত প্রস্তাবটি মন্ত্রিসভায় পাসও হয়েছে। প্রস্তাব অনুযায়ী, ১০০ দিনের মধ্যে পর্যায়ক্রমে ভোটগুলো হয়ে গেলে ভারতের মতো এতো বড় গণতান্ত্রিক দেশের বিপুল অর্থ সাশ্রয় হবে বলেও দাবি বিজেপির। তবে প্রধান বিরোধী দল কংগ্রেসসহ বেশ কয়েকটি রাজনৈতিক দল এর বিরোধিতা করছে। নিজেদের ক্ষমতার দাপট বাড়াতেই ভারতের যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামো ভেঙে দেয়ার ছক আঁকছে বিজেপি, এমনটাই অভিযোগ তাদের।

কংগ্রেসের সামাজিক যোগাযোগ প্ল্যাটফর্মের চেয়ারপারসন সুপ্রিয়া শ্রীনাতে বলেন, 'কীসের জন্য তাদের 'এক দেশ এক নির্বাচন' করার দরকার পরলো। এসব পুরোটাই করা হচ্ছে মোদি সরকারের লাভের জন্য এবং বিরোধীদের দমাতে। এতে আমাদের কোনো সমর্থন নেই।'

এতো বিরোধিতা উপেক্ষা করেও যেহেতু, মোদি সরকার 'এক দেশ, এক ভোট' বাস্তবায়নে নাছোড়বান্দা হয়ে উঠেছে; সে ক্ষেত্রে প্রশ্ন উঠেছে এটি কার্যকরে কীভাবে এগোবে বিজেপি সরকার? এমন উত্তর খুঁজতে গিয়ে দেখা যায়, নীতিটি চালু করতে গেলে সবার আগে সংবিধান সংশোধন করা বাধ্যতামূলক। এজন্য দরকার বিলের পক্ষে দুই–তৃতীয়াংশের সমর্থন। এখন পর্যন্ত সেই সমর্থন জোগাড় করতে পারেনি বিজেপি। সংবিধান সংশোধনে রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত বিধানসভায় প্রস্তাবটি পাস করানোও বাধ্যতামূলক।

এদিকে, 'এক দেশ, এক ভোট' প্রক্রিয়া এগিয়ে নিতে পার্লামেন্টের আসন্ন শীতকালীন অধিবেশনে এ সংক্রান্ত বিলটি তোলা হতে পারে বলে আভাস মিলেছে। এর আগে ভারতের সাবেক প্রেসিডেন্ট রামনাথ কোভিন্দের নেতৃত্বে উচ্চ পর্যায়ের একটি কমিটি একযোগে নির্বাচন আয়োজনের ওপর প্রতিবেদন জমা দিলে প্রস্তাবটি কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভায় অনুমোদন পায়। কিন্তু এটি শেষ পর্যন্ত আলোর মুখ দেখে কি-না তা নিয়ে শঙ্কায় রয়েছেন অনেক ভারতীয়।

এ অবস্থায় ভারতের কেন্দ্রীয় তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী অশ্বিনী বৈষন্ন দাবি করেছেন, প্রস্তাবটি বাস্তবায়নে বেশিরভাগ রাজনৈতিক দলের সমর্থন পেয়েছে তারা। পরামর্শ কমিটি কাজ শুরু করার পর জরিপে অংশ নেয়া ৮০ শতাংশেরও বেশি মানুষ এই প্রস্তাবের পক্ষে ইতিবাচক সমর্থন দিয়েছেন বলেও দাবি করেন তিনি।

ভারতের কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার সদস্য অশ্বিনী বৈষ্ণব বলেন, 'এটি বাস্তবায়নে কমিটি পুরো দেশে কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। সবার সাথে এ বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। নতুন প্রজন্ম থেকে শুরু করে শিল্পখাত এবং বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের বিভিন্ন গ্রুপেও এটি নিয়ে কথা হয়েছে। সবাই সমর্থন জানিয়ে, এক দেশ এক নির্বাচন' এর মাধ্যমে দেশে অর্থনীতিসহ বিভিন্ন খাতে কীভাবে উন্নতি সম্ভব, সে বিষয়ে বিস্তারিত তুলে ধরার আহ্বান জানিয়েছে। যা বাস্তবায়নে একটি গ্রুপ কাজ শুরু করছে এবং আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমেই নীতিটি বাস্তবায়ন করা হবে।

এদিকে, কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ জোর দিয়ে বলেছেন, এনডিএ সরকারের বর্তমান মেয়াদেই কার্যকর করা হবে 'ওয়ান নেশন, ওয়ান ইলেকশন' ব্যবস্থা।

এসএস