চিকিৎসকের সহায়তায় মরণাপন্ন রোগীদের মৃত্যুর বৈধতা নিউ ইয়র্কে

নিউ ইয়র্কের গভর্নর ক্যাথি হোকুল
নিউ ইয়র্কের গভর্নর ক্যাথি হোকুল | ছবি: সংগৃহীত
0

যুক্তরাষ্ট্রের নিউ ইয়র্ক অঙ্গরাজ্য টার্মিনাল বা মরণাপন্ন রোগীদের জন্য চিকিৎসকের সহায়তায় মৃত্যুকে বৈধ করার দ্বারপ্রান্তে পৌঁছেছে। গভর্নর ক্যাথি হোকুল ও অঙ্গরাজ্যের আইনপ্রণেতাদের মধ্যে একটি সমঝোতার পর বুধবার (১৭ ডিসেম্বর) এ সিদ্ধান্তের ঘোষণা দেয়া হয়। সমঝোতার অংশ হিসেবে প্রস্তাবিত আইনে একাধিক কঠোর নিরাপত্তামূলক বিধান যুক্ত করা হচ্ছে। গভর্নর ক্যাথি হোকুল জানান, সংশোধনী ও সুরক্ষামূলক শর্ত যুক্ত করার বিষয়ে ঐকমত্যে পৌঁছানোর পর তিনি বিলটিতে স্বাক্ষর করবেন। আগামী বছর বিলটি আইনে পরিণত হওয়ার কথা রয়েছে এবং স্বাক্ষরের ছয় মাস পর এটি কার্যকর হবে।

ক্যাথলিক ধর্মাবলম্বী গভর্নর হোকুল বলেন, এই সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষেত্রে তিনি গভীরভাবে নৈতিক ও মানবিক দিকগুলো বিবেচনা করেছেন। টার্মিনাল রোগে আক্রান্ত বহু নিউ ইয়র্কবাসী, যারা তীব্র যন্ত্রণা ও অসহনীয় কষ্টের মধ্য দিয়ে দিন কাটাচ্ছেন, তাদের অভিজ্ঞতা এবং পরিবারের সদস্যদের বক্তব্য তার সিদ্ধান্তকে প্রভাবিত করেছে। একই সঙ্গে তিনি বিভিন্ন ধর্মীয় গোষ্ঠীর বিরোধিতার কথাও স্বীকার করেন, যারা মনে করেন ইচ্ছাকৃতভাবে জীবন সংক্ষিপ্ত করা মানবজীবনের পবিত্রতার পরিপন্থি।

তবে হোকুলের ভাষায়, করুণা ও সহানুভূতির ভিত্তিতে মানুষের জীবনের শেষ সময়টিকে মর্যাদার সঙ্গে কাটানোর সুযোগ দেয়াও মানবিক দায়িত্বের অংশ।

‘মেডিকেল এইড ইন ডাইং অ্যাক্ট’ অনুযায়ী, এমন টার্মিনাল রোগীরা এই সুবিধার জন্য আবেদন করতে পারবেন। যাদের চিকিৎসকদের মতে ছয় মাসের মধ্যে মৃত্যুর আশঙ্কা রয়েছে। রোগীকে জীবন-শেষকারী ওষুধ পাওয়ার জন্য লিখিত আবেদন করতে হবে এবং তাতে দুজন সাক্ষীর স্বাক্ষর থাকতে হবে, যাতে নিশ্চিত করা যায় যে আবেদনটি কোনো ধরনের চাপ বা প্রভাবের মধ্যে করা হয়নি। এই আবেদন রোগীর প্রধান চিকিৎসকের পাশাপাশি একজন আলাদা পরামর্শক চিকিৎসককে যাচাই ও অনুমোদন করতে হবে।

আরও পড়ুন:

গভর্নর হোকুলের সঙ্গে আইনপ্রণেতাদের সমঝোতার ভিত্তিতে বিলে আরও কয়েকটি সুরক্ষামূলক শর্ত যুক্ত করা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে একজন চিকিৎসকের মাধ্যমে নিশ্চিত করা যে রোগীর সত্যিই ছয় মাসের কম সময় বেঁচে থাকার সম্ভাবনা রয়েছে। একজন মনোবিজ্ঞানী বা মনোরোগ বিশেষজ্ঞের মাধ্যমে রোগীর মানসিক সক্ষমতা যাচাই করা, যাতে বোঝা যায় তিনি সচেতনভাবে ও স্বেচ্ছায় সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন।

এছাড়া সিদ্ধান্ত গ্রহণে স্বাধীন ইচ্ছা নিশ্চিত করতে বাধ্যতামূলক পাঁচ দিনের অপেক্ষাকাল রাখা হয়েছে। লিখিত আবেদনের পাশাপাশি একটি রেকর্ডকৃত মৌখিক আবেদনও দিতে হবে।

আইনে বলা হয়েছে, ধর্মীয় হাসপাতালের সঙ্গে যুক্ত বহির্বিভাগীয় চিকিৎসা প্রতিষ্ঠানগুলো চাইলে এই সেবা প্রদান থেকে বিরত থাকতে পারবে। একই সঙ্গে আইনটি কেবল নিউ ইয়র্ক অঙ্গরাজ্যের বাসিন্দাদের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য হবে। এর আগে চলতি মাসে একটি ফেডারেল আপিল আদালত রায় দিয়েছে যে নিউ জার্সির অনুরূপ আইনও শুধু সেই অঙ্গরাজ্যের বাসিন্দাদের জন্য কার্যকর।

নিউ ইয়র্ক যুক্ত হলে যুক্তরাষ্ট্রে অন্তত এক ডজন অঙ্গরাজ্য এবং ওয়াশিংটন ডিসিতে চিকিৎসকের সহায়তায় মৃত্যুর আইন কার্যকর থাকবে। সম্প্রতি ইলিনয় অঙ্গরাজ্যেও এ ধরনের একটি আইন পাস হয়েছে, যা আগামী বছর কার্যকর হবে।

নিউ ইয়র্কে এই আইন প্রথম উত্থাপিত হয় ২০১৬ সালে। তবে নিউ ইয়র্ক স্টেট ক্যাথলিক কনফারেন্সসহ বিভিন্ন ধর্মীয় ও সামাজিক সংগঠনের বিরোধিতার কারণে এটি দীর্ঘদিন স্থবির ছিল। তাদের মতে, এ ধরনের আইন মানবজীবনের মূল্যকে খাটো করে এবং চিকিৎসকের নৈতিক ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তোলে।

গভর্নরের ঘোষণার পর এক বিবৃতিতে নিউ ইয়র্কের ক্যাথলিক চার্চের শীর্ষ ধর্মগুরু কার্ডিনাল টিমোথি ডোলান ও অন্যান্য বিশপরা বলেন, এই সিদ্ধান্ত সমাজের সবচেয়ে দুর্বল ও অসুস্থ মানুষদের জন্য ভুল বার্তা বহন করে এবং এতে আত্মহত্যাকে রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে পরোক্ষভাবে গ্রহণযোগ্য করে তোলা হচ্ছে।

অন্যদিকে আইনটির সমর্থকদের দাবি, এটি টার্মিনাল রোগীদের অপ্রয়োজনীয় যন্ত্রণা লাঘব করবে এবং তাদের নিজস্ব ইচ্ছা ও মর্যাদার সঙ্গে জীবনের শেষ সিদ্ধান্ত নেয়ার অধিকার নিশ্চিত করবে।

চলতি বছরের শুরুতে নিউ ইয়র্ক আইনসভা বিলটি অনুমোদন করে। এখন গভর্নরের স্বাক্ষরের মাধ্যমে এটি আইনে পরিণত হওয়ার অপেক্ষায় রয়েছে।

সেজু