চলতি সপ্তাহেই রাষ্ট্রীয় সফরে যুক্তরাষ্ট্রে পা রাখছেন সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান। ধারণা করা হচ্ছে, এ সফরেই মোটা অঙ্কের অর্থনৈতিক ও প্রতিরক্ষা চুক্তি সই করবে দুই দেশ। শুধু বৈঠক নয়, বরং বড় সম্মান অপেক্ষা করছে সৌদি আরবের জন্য, বলছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট।
মার্কিন অস্ত্রনির্মাতা প্রতিষ্ঠান লকহিড মার্টিনের তৈরি এফ-থার্টি ফাইভ স্টেলথ যুদ্ধবিমান সৌদি আরবের কাছে বিক্রির ব্যাপারে ভাবছেন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। শব্দের চেয়েও দ্রুত গতির লাইটনিং টু সুপারসনিক এ যুদ্ধবিমান বিশ্বের সবচেয়ে আধুনিক; দাম মডেলভেদে সোয়া আট কোটি থেকে শুরু করে ১১ কোটি ডলার পর্যন্ত হতে পারে। এমন অর্ধশত বিমান সৌদি আরবকে বিক্রির পথে রয়েছে ট্রাম্প প্রশাসন, সবমিলিয়ে যে চুক্তির অঙ্ক দাঁড়াতে পারে হাজার কোটি ডলারে।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেন, ‘তারা অনেকগুলো যুদ্ধবিমান কিনতে চায়। আমরা যুদ্ধবিমান তৈরিতে সেরা। সেরা ক্ষেপণাস্ত্রও আমরা তৈরি করি। ইরানের পারমাণবিক সক্ষমতা উড়িয়ে দিয়ে সেটি দেখিয়েও দিয়েছি আমরা। দেখছি, তারা ভেবে দেখতে বলেছে। তারা অনেকগুলো থার্টি ফাইভ কিনতে চায়, কিন্তু এর সঙ্গে আরও অনেককিছু তারা কিনতে চায়।’
সৌদি যুবরাজের যুক্তরাষ্ট্র সফরের আগে প্রেসিডেন্টের এমন পরিকল্পনা নিয়ে উদ্বিগ্ন খোদ মার্কিন প্রতিরক্ষা দপ্তর- পেন্টাগন। কারণ হিসেবে জানিয়েছে, এর মাধ্যমে মার্কিন সমর প্রযুক্তি চীনের নাগালে চলে যাওয়ার শঙ্কার কথা। সৌদি আরবের সঙ্গে নিরাপত্তা চুক্তি ও সম্পর্ক রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র ও পশ্চিমা আধিপত্যবিরোধী চীনের; যার সুযোগ নিয়ে মার্কিন এফ-টোয়েন্টি টু র্যাপ্টর যুদ্ধবিমান থেকে চুরি করা প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে জে-টোয়েন্টি মাইটি ড্রাগন নির্মাণের অভিযোগ রয়েছে বেইজিংয়ের বিরুদ্ধে। বলা হচ্ছে, এভাবেই সৌদি এফ-থার্টি ফাইভ জয়েন্ট স্ট্রাইক ফাইটার থেকেও গোপন প্রযুক্তিগত তথ্য হাতিয়ে নেয়ার অপেক্ষায় আছে চীন। কিন্তু তাহলে কেন এ চুক্তির পক্ষে ট্রাম্প?
আরও পড়ুন:
বলা হচ্ছে, ইসরাইলের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করাতে সৌদি আরবের সামনে এফ-থার্টি ফাইভ নামের মূলা ঝোলাচ্ছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট। মার্কিন অস্ত্রের সবচেয়ে বড় ক্রেতা দেশ হিসেবে লকহিড মার্টিনের তৈরি যুদ্ধবিমান নিজেদের অস্ত্রভাণ্ডারে যুক্ত করার আগ্রহ সৌদি আরবের দীর্ঘদিনের এবং চলতি বছর ট্রাম্প দ্বিতীয় মেয়াদে যুক্তরাষ্ট্রের ক্ষমতায় আসার পর থেকেই এ নিয়ে সরাসরি অনুরোধ জানিয়ে আসছে রিয়াদ। মন্ত্রীপরিষদ ও কংগ্রেসের অনুমতিসাপেক্ষে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত বাকি থাকলেও অস্ত্রচুক্তির বিষয়টি যে প্রক্রিয়াধীন, সেটি নিশ্চিত করেছেন প্রেসিডেন্ট।
বার্তা সংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়, মধ্যপ্রাচ্যে মার্কিন অস্ত্র বিক্রির সঙ্গে জড়িয়ে থাকে ইসরাইলের সামরিক স্বার্থও। অন্যান্য আরব দেশগুলোর তুলনায় উন্নততর মার্কিন অস্ত্রে অগ্রাধিকার পায় যুক্তরাষ্ট্রের ঘনিষ্ঠতা মিত্র ও মধ্যপ্রাচ্যের একমাত্র ইহুদিবাদী দেশটি। এ অবস্থায় বিন সালমানের সঙ্গে আলোচনায় আব্রাহাম চুক্তির বিষয়টি আসবে কি না, তা নিয়েও সাংবাদিকদের প্রশ্নের মুখে পড়েন ট্রাম্প।
প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প আরও বলেন, ‘আলোচনার একটা অংশে তো আব্রাহাম চুক্তি থাকবেই। এটি নিয়ে কথা বলবো আমরা। আমি আশা করছি যে বেশ তাড়াতাড়িই আব্রাহাম চুক্তিতে সৌদি আরবও অন্তর্ভুক্ত হবে।’
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হিসেবে প্রথম মেয়াদে ট্রাম্পের হাতেই যাত্রা শুরু আব্রাহাম অ্যাকর্ডসের। মুসলিম দেশগুলোর সঙ্গে ইসরাইলের কূটনৈতিক সম্পর্ক স্বাভাবিক করাতে যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় এ চুক্তিতে আরব রাষ্ট্র হিসেবে প্রথম যুক্ত হয় সংযুক্ত আরব আমিরাত ও বাহরাইন। ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায় এ চুক্তি বাধা বলে এতে এখন পর্যন্ত নাম লেখায়নি সৌদি আরব। এবার সৌদি আরবকে এফ-থার্টি ফাইভ দেয়ার বিনিময়ে মধ্যপ্রাচ্য সমীকরণে যুক্তরাষ্ট্র পরিবর্তন আনতে পারে কি না, সেটাই দেখার অপেক্ষা মুসলিম বিশ্বের বড় অংশ।





