দুই বছরের সংঘাতে ধ্বংসস্তূপে রূপ নেয়া গাজায় অস্ত্র বিরতি ভঙ্গুর হলেও কার্যকরের পর থেকেই খুলে গেছে নিত্য পণ্যের বাজারগুলো। যুদ্ধ আর দুর্ভিক্ষের সময় শুধু স্বপ্নে ধরা দেয়া চকোলেট, কোমল পানীয়র মতো পণ্য মিলছে তীব্র অর্থনৈতিক সংকটে জর্জরিত উপত্যকার অনেক দোকানে। কিন্তু নেই কম প্রয়োজনীয়, বিলাসী পণ্য মিললেও ডিম, মাছ, মাংস, ফল, সবজির মতো মানব স্বাস্থ্যের জন্য জরুরি খাবার ও অ্যান্টিবায়োটিকসহ জরুরি ওষুধের পর্যাপ্ত সরবরাহ।
স্থানীয় বাসিন্দারা বলেন, মৌলিক খাবারগুলোই পাওয়া যাচ্ছে না। মাংস নেই বাজারে। মুরগী পর্যন্ত নেই। কখনো কখনো সবজি পাওয়া গেলেও দাম এতো বেশি থাকে যে সহ্য করার নয়।
একদিন খেলে আরেকদিন না খেয়ে থাকি। খুব সাধারণ খাবার খেয়েই কোনোরকমে বেঁচে আছি, যেসব খাবারের সাথে এখানকার মানুষ আগে পরিচিত ছিল না।
দিনে গড়ে ৬শ' ত্রাণ-বাহী ট্রাক গাজায় ঢুকতে দিতে কাজ করছে বলে ইসরাইল দাবি করছে, খাদ্য সংকটের জন্য দায়ী করছে গাজার শাসকদল হামাসকে। অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করে হামাস বলছে, ইসরাইলের বাধায় দিনে দেড়শ'র বেশি ত্রাণ-বাহী ট্রাক ঢুকতে পারে না উপত্যকায়। এ অবস্থায় দুর্ভোগ কমাতে পর্যাপ্ত ত্রাণ সরবরাহ নিশ্চিত করার জন্য সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে কাজ করছে বিভিন্ন দাতব্য সংস্থা, জানিয়েছে জাতিসংঘের বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি।
বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচির জ্যেষ্ঠ মুখপাত্র আবির ইতেফা বলেন, ১৬ লাখ মানুষের প্রতি বেলার পর্যাপ্ত খাবার নিশ্চিত করা জরুরি। এজন্য পূর্ণ কার্যক্ষমতা দরকার আমাদের। দ্রুত কাজ এগিয়ে নিতে জরুরি সবকিছুই করছি আমরা। সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে লড়ছি। শীতের মাস আসছে। মানুষের ক্ষুধাই দূর করা যায়নি। সবকিছুর চাহিদা তুঙ্গে।
আরও পড়ুন:
অমানবিক এমন পরিস্থিতিতেই অস্ত্র বিরতিকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে গাজায় হামলা চালিয়ে যাচ্ছে ইসরাইল। দক্ষিণাঞ্চল ধ্বংসে চলমান স্থল অভিযানের মধ্যেই উপত্যকাজুড়ে বুধবার ব্যাপক বোমা ও বিমান হামলা শুরু করে সেনাবাহিনী। ফিলিস্তিনি নিপীড়নের মধ্যেই গাজা উপত্যকায় দুই বছরের জন্য আন্তর্জাতিক বাহিনীর অধীনে অন্তর্বর্তী শাসনব্যবস্থা গঠনে জাতিসংঘকে আদেশ দেয়ার পরিকল্পনা করছে যুক্তরাষ্ট্র, বলছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স। মঙ্গলবার এ সংক্রান্ত দু'পৃষ্ঠার নথি পৌঁছায় রয়টার্সের হাতে, যেখানে বলা হয়, জাতিসংঘে উপস্থাপনের জন্য প্রণীত খসড়া প্রস্তাব সংস্কারে কাজ চলছে বিভিন্ন দেশের সাথে। যদিও নিরাপত্তা পরিষদের ১৫ সদস্য দেশের মধ্যে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রস্তাবটি বণ্টন করা হয়নি, জানিয়েছেন কূটনীতিকরা।
এদিকে, ইসরাইল উপেক্ষা করলেও অস্ত্র বিরতির শর্ত পূরণ অব্যাহত রেখেছে হামাস। গাজার ধ্বংসস্তূপ থেকে আরেক জিম্মির মরদেহ উদ্ধারের পর আন্তর্জাতিক দাতব্য সংস্থা রেড ক্রসের মাধ্যমে ইসরাইলের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে মরদেহটি। পরিচয়ও শনাক্ত করেছে ইসরাইলি কর্তৃপক্ষ।
অন্যদিকে, অবরুদ্ধ পশ্চিম তীরেও ফিলিস্তিনিদের ওপর সেনাবাহিনী ও দখলদারদের হামলা-ধরপাকড় চলছে। আটক করা হয়েছে অর্ধশতাধিক মানুষকে। ইসরাইলি আগ্রাসনের জেরে বন্ধ আছে সেখানকার সব স্কুল।





