সময় যত গড়াচ্ছে, ততই তীব্র হচ্ছে ইসরাইল-ইরান আক্রমণ ও পাল্টা আক্রমণের তীব্রতা। এমন সংঘাতময় পরিস্থিতির মধ্যেও মিশ্র বার্তা দিচ্ছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও তার প্রশাসন।
শুরুটা হয় ১২ জুন থেকেই। ওই দিন ট্রুথ সোশ্যালে দেয়া এক পোস্টে ট্রাম্প জোর দিয়ে বলেন, ‘পারমাণবিক কর্মসূচি ইস্যুতে ইরানের সঙ্গে কূটনৈতিক সমাধানে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ ওয়াশিংটন।’
কিন্তু এর ১৪ ঘন্টা পর ১৩ জুন গভীর রাতে ইরানের ভূখণ্ডে অতর্কিত হামলা শুরু করে ইসরাইল। পরে আরেক পোস্টে ট্রাম্প জানান, চুক্তিতে পৌঁছানোর জন্য ইরানকে যে ৬০ দিনের সময় বেঁধে দেয়া হয়েছিল সেই সময়সীমা পেরিয়ে গেছে।
রোববার (১৫ জুন) গণমাধ্যমকে ট্রাম্প জানান, ইসরাইল ও ইরানের মধ্যে একটি চুক্তি করা উচিৎ, যেখানে সহায়তায় করবে ওয়াশিংটন। কিন্তু সোমবার (১৬ জুন) কানাডায় আয়োজিত জি-৭ শীর্ষ সম্মেলন থেকে তড়িঘড়ি করে বেরিয়ে গিয়ে ভয়ংকর এক সতর্কবার্তা দেন ট্রাম্প।
তিনি বলেন, ‘অবিলম্বে সব বাসিন্দাদের তেহরান ছাড়া উচিৎ।’
এরপর আরেক পোস্টে তিনি জানান, জি-৭ সম্মেলন ছেড়ে তার ওয়াশিংটনে ফিরে আসার উদ্দেশ্য যুদ্ধবিরতি নয়, বরং এর চেয়েও অনেক বড় কিছু।
এমন পরিস্থিতিতে প্রশ্ন উঠেছে, যুক্তরাষ্ট্র কি আদৌ কূটনৈতিক সমাধানে অঙ্গীকারবদ্ধ, নাকি ইরানের বিরুদ্ধে সরাসরি যুদ্ধের প্রস্তুতি নিচ্ছে?
এ ছাড়া ইরানে হামলার জন্য ইসরাইলকে পরোক্ষ অনুমোদন দিয়েছিলেন কি না, সে প্রশ্নও তুলছেন অনেকে। যদিও ট্রাম্প দাবি করে আসছেন, ইরানের উপর ইসরাইলের হামলার সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের কোনো সম্পৃক্ততা নেই।
এ অবস্থায় দ্বিধান্বিত হয়ে পড়ছেন খোদ বিশ্লেষকরাও। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক আর্মস কন্ট্রোল অ্যাসোসিয়েশনের পরমাণু নীতি বিষয়ক পরিচালক কেলসি ড্যাভেনপোর্ট মনে করেন, সম্ভবত ইসরাইল ভয় পাচ্ছিল যে, ট্রাম্পের কূটনৈতিক উদ্যোগ সফল হলে তা তাদের লক্ষ্য ও স্বার্থের জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়াবে।
কিন্তু দ্বিমত পোষণ করেছেন স্কটল্যান্ডের সেন্ট অ্যান্ড্রুজ বিশ্ববিদ্যালয়ের ইরানি ইতিহাসবিদ আলি আনসারি। তার মতে, ইসরাইল ইরানে হামলা চালাবে তা জানতো যুক্তরাষ্ট্র। এর জন্য ওয়াশিংটনের ইশারাও যথেষ্ট স্পষ্ট ছিল।
৬০ শতাংশ বিশুদ্ধ ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ ইরানের নাতানজে পারমাণবিক স্থাপনায় শুক্রবার (১৩ জুন) হামলা চালানোর পর, এখন ফোরদো পারমাণবিক স্থাপনায় হামলার প্রস্তুতি চলছে বলে শঙ্কা করা হচ্ছে। এ হামলায় যুক্তরাষ্ট্র সরাসরি জড়িয়ে পড়ে কি না তা নিয়েও উদ্বেগ বাড়ছে।
এ ক্ষেত্রে বিশ্লেষকরা বলছেন, ফোরদো পারমাণবিক স্থাপনা ধ্বংস করতে ৩০ হাজার পাউন্ড ওজনের ম্যাসিভ অর্ডন্যান্স পেনিট্রেটর বোমা প্রয়োজন, যা এখনো ইসরাইলকে দেয়নি যুক্তরাষ্ট্র। তবে মঙ্গলবার ইসরাইলে আরো যুদ্ধবিমান পাঠানোর ঘোষণা দিয়েছে ওয়াশিংটন।
এ অবস্থায় ইরানি ইতিহাসবিদ আলি আনসারি মনে করছেন, হয়তো চলমান যুদ্ধের কৃতিত্ব যুক্তরাষ্ট্রকেও একটা পর্যায়ে গিয়ে এতে সম্পৃক্ত করবেন ট্রাম্প।
যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান নিয়ে এমন মিশ্র প্রতিক্রিয়ায় একটি ওয়ার পাওয়ার রেজোল্যুশন পেশ করেছেন মার্কিন সিনেটর টিম কেইন। যেখানে বলা হয়, যুক্তরাষ্ট্র যদি ইরানের বিরুদ্ধে যুদ্ধ শুরু করে, তাহলে তা কংগ্রেসের অনুমোদন ছাড়া সম্ভব নয়।
বিশ্লেষকদের মতে, ইরানে শাসনব্যবস্থার পরিবর্তন হলেও মধ্যপ্রাচ্য সংকটের রাতারাতি সমাধান দেখছেন না বিশ্লেষকরা।