কাতারে শুরু হয়েছে হামাস–ইসরাইল যুদ্ধবিরতির আলোচনা

বিধ্বস্ত বাড়ির সামনে গাজাবাসী
বিধ্বস্ত বাড়ির সামনে গাজাবাসী | ছবি: আল-জাজিরা
0

গাজায় ইসরাইলের নতুন অপারেশন গিডিয়ন চ্যারিয়টসের মধ্যেই কাতারে শুরু হয়েছে হামাস–ইসরাইল যুদ্ধবিরতির আলোচনা। গাজায় ৬০ দিনের যুদ্ধবিরতির শর্তে নয়জন বন্দিকে মুক্তির শর্ত দিয়েছে ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী যোদ্ধারা। যদিও আলোচনার মধ্যেই রাতভর উপত্যকায় ইসরাইলি হামলায় শতাধিক ফিলিস্তিনির প্রাণ গেছে। এদিকে, ডোনাল্ড ট্রাম্পের ১০ লাখ ফিলিস্তিনিকে লিবিয়া স্থানান্তরের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছে ত্রিপোলির মার্কিন দূতাবাস। এরমধ্যে হামাস নতো মোহাম্মদ সিনওয়ারকে হত্যার দাবি করেছে আইডিএফ।

ছোট্ট এই উপত্যকায় কিছুদিন পরপরই নতুন নামে নতুন উদ্যমে অপারেশন চালাচ্ছে ইসরাইল। লক্ষ্য, হামাসকে পুরোপুরি শেষ করে দেয়া। কিন্তু শনিবার থেকে শুরু হওয়া ভয়ংকর অপারেশন গিডিয়ন চ্যারিয়টসের নামে উপত্যকায় চলছে জাতিগত নির্মূলের চেষ্টা। একদিনেই হত্যা করা হয়েছে প্রায় দেড়শ ফিলিস্তিনিকে।

বৃহস্পতিবার থেকে এখন পর্যন্ত এই সংখ্যা ৩০০। বোমা হামলার পর উপত্যকার ধ্বংসস্তূপে প্রিয়জনকে খুঁজে বেড়াচ্ছেন ফিলিস্তিনিরা। খোলা আকাশের নিচে একেকটি বীভৎস রাত পার করছেন বাসিন্দারা।

বাসিন্দাদের একজন বলেন, ‘বাড়ি আর তাবুতে বসে ছিলাম। আল্লাহ বাঁচিয়েছে। এই মানুষটার ছেলে মেয়ে ছিল। সবার মৃত্যু হয়েছে। হঠাৎ করেই বোমা পড়ায় পালাতে পারেনি। এখানে সশস্ত্র যোদ্ধারা নেই। ধ্বংসস্তূপে শিশুরা চাপা পড়েছে।’

আরেকজন বলেন, ‘আমরা আর পারছি না। আমাদের ত্রাণ নেই, হাঁটতে পারছি না, খেতে পারছি না, কথা বলতে পারছি না। বাচ্চারা চলে গেছে। ওদের ভবিষ্যতও শেষ।’

ইসরাইল জানিয়েছে, বন্দিদের মুক্তির জন্য হামাসকে চাপ দিতেই নতুন এই অপারেশন শুরু করেছে আইডিএফ। যদিও বেনইয়ামিন নেতানিয়াহু বলছেন, কাতারে হামাসের সঙ্গে পরোক্ষ আলোচনা চলছে। ইসরাইলি প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্ত জানিয়েছেন, শক্তিশালী একটি সেনাদল দিয়ে গাজায় অভিযান চালানো হচ্ছে।

এমন অবস্থায় কাতারে শনিবার (১৭ মে) থেকে শুরু হয়েছে হামাস–ইসরাইল যুদ্ধবিরতি আলোচনা। যেখানে হামাস প্রস্তাব দিয়েছে গাজা উপত্যকায় দুই মাসের যুদ্ধবিরতি কার্যকরের। বিনিময়ে ইসরাইল ফেরত পাবে নয় বন্দিকে। একইসঙ্গে নতুন প্রস্তাবে শর্ত দেয়া হয়েছে, প্রতিদিন অন্তত ৪০০ ত্রাণবাহী ট্রাক প্রবেশ করতে দিতে হবে উপত্যকায়।

মার্চে নতুন করে গণহত্যা শুরুর পর গেল বৃহস্পতিবার থেকে রোববার রাত পর্যন্ত উপত্যকা পার করেছে ভয়াবহ এক সময়। জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক সংস্থার প্রধান ভলকার তুর্ক বলেন, ইসরাইল এই উপত্যকায় যেভাবে বোমা ফেলছে, তা জাতিগত নিধনের শামিল।

এমন পরিস্থিতিতে ইরাকে অনুষ্ঠিত হচ্ছে আরব লীগের ৩৪ তম সম্মেলন। যেখানে জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস দ্রুত উপত্যকাটিতে স্থায়ী যুদ্ধবিরতির জন্য জোর দেন। বাগদাদে আয়োজিত এই সম্মেলনে অংশ নেয়া ২২ সদস্য রাষ্ট্রের প্রতিনিধিরা আহ্বান জানান গাজায় যুদ্ধবিরতির।

এমন অবস্থায় ট্রাম্পের গাজা থেকে ১০ লাখ ফিলিস্তিনিকে লিবিয়া পাঠানোর প্রস্তাবে আবারও সমালোচনার ঝড় উঠেছে। লিবিয়ায় নিযুক্ত মার্কিন দূতাবাসই এই প্রস্তাব অগ্রাহ্য করেছে। প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে হামাস বলছে, দায়িত্ববোধ থেকে গাজায় গণহত্যা বন্ধে এগিয়ে আসতে হবে আরব ও ইসলামিক দেশগুলোকেই।

এদিকে হামাস নেতা মোহাম্মদ সিনওয়ারকে হত্যার দাবি করেছে ইসরাইলি প্রতিরক্ষা বাহিনী। ইসরাইলি গণমাধ্যমগুলো বলছে, খান ইউনিস হাসপাতালের একটি টানেলে হামাস নেতাসহ আরও ১০ জনকে হত্যা করা হয়েছে। গেলো বছরের অক্টোবরে হামাস নেতা ইয়াহিয়া সিনওয়ারকে হত্যা করে আইডিএফ। এরপর থেকে হামাসের দায়িত্বে ছিলেন মোহাম্মদ সিনওয়ার।

সেজু