পোপ ফ্রান্সিসের মৃত্যু: ভ্যাটিকান সিটিতে শোকের ছায়া

ইস্টার সানডের আয়োজনে পোপ ফ্রান্সিস
ইস্টার সানডের আয়োজনে পোপ ফ্রান্সিস | ছবি: বিবিসি
0

পোপ ফ্রান্সিসের মৃত্যুতে ক্যাথলিকদের পবিত্র ভূমি ভ্যাটিকান সিটিতে নেমে এসেছে শোকের ছায়া। দীর্ঘদিন অসুস্থ থাকার পর ৮৮ বছর বয়সে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন ১৪০ কোটি ক্যাথলিকের সর্বোচ্চ ধর্মগুরু ফ্রান্সিস। শান্তি প্রতিষ্ঠায় ধর্ম, চিন্তা আর মত প্রকাশের স্বাধীনতার বার্তা দেয়া, রোমান ক্যাথলিক চার্চের প্রথম লাতিন আমেরিকান ধর্মগুরুর মৃত্যুতে শোক ও শ্রদ্ধা জানাচ্ছেন বিশ্বনেতারা।

একদিন আগেই ইস্টার সানডে'র শুভেচ্ছা বার্তা দিতে জনসমক্ষে এসেছিলেন পোপ ফ্রান্সিস। ভ্যাটিকান সিটির সেন্ট পিটার্স স্কয়ারে জড়ো হওয়া হাজারও ধর্মপ্রাণ জনতা তখনও জানতেন না, এটাই শেষ দেখা।

ক্যাথলিক ধর্মবিশ্বাসে যিশুর প্রয়াণ থেকে পুনরুত্থানের পবিত্র সপ্তাহে মৃত্যু হলো তাঁর সেবায় জীবন উৎসর্গ করা পোপ ফ্রান্সিসের। বার্ধক্যের শেষ প্রান্তে এসে প্রায় পাঁচ সপ্তাহ বিভিন্ন শারীরিক জটিলতা নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি থাকলেও ২৩ মার্চ ফিরেছিলেন ভ্যাটিকানের কাসা সান্তা মার্তায় নিজ বাসভবনে। সেখানেই শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি, সোমবার স্থানীয় সময় সকাল ৭টা ৩৫ মিনিটে মৃত ঘোষণা করা হয় তাকে।

ভ্যাটিকান সিটির কার্ডিনাল কেভিন ফারেল বলেন, ‘পিতার কাছে ফিরে গেছেন বিশপ অব রোম। তার পুরো জীবন তিনি উৎসর্গ করেছিলেন ঈশ্বর ও তাঁর গির্জার সেবায়। যিশুর দেয়া শিক্ষা আর মূল্যবোধ মেনে চলার পাশাপাশি তিনি আমাদের শিখিয়েছিলেন সততা, সাহসিকতা আর সকলের প্রতি ভালোবাসা, বিশেষ করে দরিদ্র ও প্রান্তিক মানুষের জন্য।’

বিশ্বের ১৪০ কোটি ক্যাথলিকের ধর্মগুরু ছিলেন পোপ ফ্রান্সিস। সংস্কারপন্থী হলেও জনপ্রিয় ছিলেন প্রাচীনপন্থীদের কাছেও। অষ্টম শতকে সিরীয় বংশোদ্ভূত পোপ তৃতীয় গ্রেগরির মৃত্যুর পর, প্রায় ১৩শ' বছরে একমাত্র নন-ইউরোপিয়ান বিশপ অব রোম তিনি।

একইসঙ্গে লাতিন আমেরিকা ও পুরো দক্ষিণ গোলার্ধ থেকে এ পদমর্যাদায় আসীন প্রথম পোপ, ফ্রান্সিস। আর্জেন্টিনার কার্ডিনাল বার্গোগ্লিও পদমর্যাদা থেকে ২০১৩ সালের মার্চে ভ্যাটিকান-প্রধান হিসেবে যখন দায়িত্ব নেন ফ্রান্সিস, তখনই তার বয়স ৭০-এর বেশি।

পোপ হিসেবে ১২ বছরে সফর করেছেন ৬০টির বেশি দেশে। সদা হাস্যোজ্জ্বল আর ভীষণ সহানুভূতিশীল পোপের মৃত্যু ছুঁয়ে গেছে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প, ব্রিটিশ রাজা তৃতীয় চার্লস, ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমার থেকে শুরু করে বিশ্বনেতাদের। শোকবার্তায় ছেয়ে গেছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম।

ধর্ম নির্বিশেষে সকলের কাছে জনপ্রিয় পোপ ফ্রান্সিস শেষ বার্তায় বলেছিলেন, ধর্ম, চিন্তা আর মত প্রকাশের স্বাধীনতা ছাড়া শান্তি প্রতিষ্ঠা সম্ভব নয়। তার মৃত্যুতে চলছে নয়দিনের আনুষ্ঠানিক শোক।

একজন বলেন, ‘তিনি ছিলেন সাধারণ মানুষের নেতা। দক্ষিণ আমেরিকা থেকে প্রথম পোপ হয়েছিলেন তিনি, প্রতিনিধিত্ব করেছিলেন সকলের। আমি ব্রাজিলে থাকতাম এককালে, তাকে নিয়ে আমি গর্বিত।’

নিয়ম অনুযায়ী, পোপের মৃত্যুর চতুর্থ থেকে ষষ্ঠ দিনের মধ্যে হবে শেষকৃত্যের আনুষ্ঠানিকতা। ভ্যাটিকান সিটি থেকে শুরু করে রোমের সাতটি পাহাড়ের একটি, এস্কুইলাইনের সড়ক হয়ে পোপ ফ্রান্সিসের অন্তিম যাত্রা শেষ হবে সেন্ট মেরি মেজরে। সেখানেই তাকে শেষ শ্রদ্ধা জানাবেন ধর্মপ্রাণ ক্যাথলিকরা।

মাতা মেরির প্রতি একনিষ্ঠ ভক্তির কারণে মৃত্যুর আগে, রোমের চারটি প্রধান পেপল ব্যাজিলিকার একটি, সান্তা মারিয়া মাজ্জিওরে বা সেন্ট মেরি মেজর গির্জায় সমাধিস্থ হওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন পোপ ফ্রান্সিস নিজেই।

আরেক অধিবাসী বলেন, ‘গতকালও তিনি এতো সাহসী ছিলেন তিনি। টিভিতে তাকে দেখছিলাম জনতার ভিড়ে কীভাবে নিজের শেষ মুহূর্তেও দায়িত্ব পালনে ছাড় দেননি। ভীষণ শ্রদ্ধা করি তাকে।’

১শ' বছরের বেশি সময়ে ভ্যাটিকানের বাইরে সমাধিস্থ হতে যাওয়া প্রথম পোপ, ফ্রান্সিস। শেষবার ১৯০৩ সালে পোপ ত্রয়োদশ লিও সমাধিস্থ হয়েছিলেন ক্যাথলিকদের পবিত্র ভূমি ভ্যাটিকানের বাইরে।

এএইচ