ভূরাজনৈতিক উত্তেজনার মধ্যে বৈঠকের টেবিলে যুক্তরাষ্ট্র- ইরান। যার আলোচ্য বিষয় তেহরানের পরমাণু কর্মসূচি। তাই ফল জানতে ওমানের রাজধানী মাস্কটে এখন অপলক দৃষ্টিতে বিশ্ববাসী।
উচ্চপর্যায়ের বৈঠকে যুক্তরাষ্ট্রকে নেতৃত্ব দিচ্ছেন দেশটির মধ্যপ্রাচ্য বিষয়ক বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফ। যিনি অস্ত্র প্রয়োগের বদলে কূটনীতিতে বিশ্বাসী। সঙ্গে রয়েছেন পররাষ্ট্র দপ্তরের পরমাণু বিশেষজ্ঞরা।
অন্যদিকে ইরানকে নেতৃত্ব দিচ্ছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাঘচি। ২০১৫ সালে ওয়াশিংটনের সঙ্গে সফল পরমাণু চুক্তিতে তেহরানের দলের অন্যতম শীর্ষ প্রতিনিধি ছিলেন তিনি। বৈঠকটি মধ্যস্থতা করবেন ওমানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বদর আল বুসাইদি।
মতাদর্শ গত ভিন্নতা থাকলেও আলোচনার উদ্দেশ্য নিয়ে একই সুরে কথা বলছে দুই পক্ষ। তেহরানের দাবি, বৈঠকটিকে মার্কিনদের সদিচ্ছার পরীক্ষা হিসেবে দেখছে পেজেশকিয়ান প্রশাসন। তবে যুক্তরাষ্ট্রকে এখনো বিশ্বাস করতে নারাজ খামেনির মিত্ররা। তাই পরোক্ষ বৈঠকের সিদ্ধান্তে অটল তেহরান। উল্টোদিকে বৈঠকটিকে সরাসরি আলোচনা হিসেবে উল্লেখ করে হোয়াইট হাউজ জানিয়েছে, পরমাণু অস্ত্র তৈরি করলে নরকের যন্ত্রণা ভোগ করতে হবে ইরানকে।
হোয়াইট হাউজের প্রেস সচিব ক্যারোলিন লেভিট বলেন, ‘ইরানিদের সঙ্গে সরাসরি আলোচনা হবে। প্রেসিডেন্ট চান ইরান যেন পরমাণু অস্ত্র তৈরি করতে না পারে। ইরান সামনে দুটি বিকল্প রয়েছে। তারা প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের দাবিকে মেনে নিতে পারে। অন্যথায় তাদের নরক যন্ত্রণা ভোগ করতে হবে।’
ইরানের ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লাহ কাজেম সেদ্দিকী বলেন, ‘প্রত্যক্ষ আলোচনার সঙ্গে জড়িয়ে আছে আমাদের মর্যাদার বিষয়। পূর্ব ইতিহাস বলছে, প্রতিশ্রুতি দিয়ে সবসময় তা ভঙ্গ করেছে যুক্তরাষ্ট্র। আন্তর্জাতিক আইন ভঙ্গ করে যা ইচ্ছা তাই করেছে। তাই মার্কিনরা সরাসরি আলোচনার যোগ্য নয়।’
মার্কিন জ্বালানি বিষয়ক মন্ত্রীর দাবি, ইরানের জ্বালানি তেল বিক্রি বন্ধের সক্ষমতা রয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের। আলোচনা ভেস্তে গেলে দুই দেশের মধ্যে সরাসরি সামরিক সংঘাত শুরুর শঙ্কার কথা বলছেন বিশ্লেষকরা।
ইরানের সাবেক কূটনীতিক ও বিশ্লেষক মেহেরদাদ খোনসারি বলেন, ‘যদি আলোচনা ভেস্তে যায়, ইরানের সঙ্গে সামরিক সংঘাতে জড়ানোর বিষয়ে চাপ প্রয়োগ করতে পারে ইসরাইল। আমার মতে, যুক্তরাষ্ট্র ইসরাইলের প্রস্তাব গ্রহণ করতে পারে। তাই মধ্যপ্রাচ্যে সংঘাত ছড়িয়ে পড়ার শঙ্কা প্রতিনিয়ত বাড়ছে।’
যুক্তরাষ্ট্রের জ্বালানি মন্ত্রী ক্রিস রাইট বলেন, ‘ইরানের জ্বালানি তেল রপ্তানি আটকানো সম্ভব। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প তার প্রথম মেয়াদে এটি করে দেখিয়েছেন। যে জাহাজগুলো ইরান ছেড়ে যাচ্ছে, আমরা সেগুলো অনুসরণ করতে পারি। আমরা জানি এগুলো কোথায় যায়। এভাবেই ইরানের তেল রপ্তানি বন্ধ করা সম্ভব ‘
এদিকে বৈঠকের একদিন আগে তেহরানের রাস্তায় ইসরাইল বিরোধী বিক্ষোভে অংশ নেন হাজারো মানুষ। এসময় ইসরাইলের পাশাপাশি দেখা যায় যুক্তরাষ্ট্র বিরোধী প্ল্যাকার্ড, ব্যানার ও ফেস্টুন। ওয়াশিংটনের হুমকি শক্ত হাতে মোকাবিলা আহ্বান ছিল সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লাহ খামেনির প্রতি।