ট্রাম্পের শুল্কারোপে গেল ৫ বছরের মধ্যে সবচেয়ে খারাপ দিন দেখলো যুক্তরাষ্ট্রের শেয়ার বাজার। একইদিনের ব্যবধানে যুক্তরাষ্ট্রই নয়, শেয়ার বাজারের পতন দেখা দিয়েছে এশিয়া-ইউরোপসহ বিশ্বব্যাপী। এর প্রভাবে কমছে মার্কিন ডলারের মান। ক্রমবর্ধমান বাণিজ্য যুদ্ধ ভঙ্গুর বিশ্ব অর্থনীতিকে মন্দার দিকে ঠেলে দেয়ার আশঙ্কা করছেন বিশ্লেষকরা। তবে এটিকে স্বাভাবিক ঘটনা বলছেন ট্রাম্প।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ঐতিহাসিক শুল্ক আরোপের ঘোষণায় অস্থির হয়ে উঠেছে বিশ্ববাজার। যেসব দেশের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য ঘাটতি আছে সেসব দেশের ওপর শুল্ক বসিয়েছে ট্রাম্প প্রশাসন। এতে মার্কিন শেয়ার বাজারসহ বিশ্বের সব দেশের শেয়ার বাজারেই ব্যাপক দরপতন হয়েছে।
২০২০ সালের পর সবচেয়ে খারাপ দিন দেখলো যুক্তরাষ্ট্রের শেয়ার বাজার। দেশটির তিনটি প্রধান সূচক ডাও জোন্স, নাসদাক ও এস অ্যান্ড পি ফাইভ হান্ড্রেড গড়ে ৫ শতাংশ হারে কমেছে। শুধু মার্কিন শেয়ার বাজার নয়, এশিয়া ও ইউরোপের শেয়ার বাজারেও দ্বিতীয় দিনের মতো পতন অব্যাহত আছে। অর্থনীতিবিদের আশঙ্কা ট্রাম্পের শুল্কনীতি বিশ্ব অর্থনৈতিকে মন্দার দিকে ঠেলে দিচ্ছে।
সিএফআরএ রিসার্চ প্রতিষ্ঠানের প্রধান বিনিয়োগ বিশেষজ্ঞ স্যাম স্টোভাল বলেন, ‘শুল্ক ঘোষণায় বেশিরভাগ বিনিয়োগকারী ঝুঁকিতে পড়েছে। যার কারণে বাজার নিম্নমুখী। বাণিজ্যিক অংশীদাররা প্রতিশোধমূলক শুল্ক আরোপের পরিণতি কি হবে তা নিয়ে চরম উদ্বিগ্ন বিনিয়োগকারীরা। এই পরিস্থিতিতি যত দীর্ঘ হবে, শেয়ার বাজারের পতন তত গভীর হবে। এতে বাধাগ্রস্ত হবে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি এবং মুনাফা কমবে প্রতিষ্ঠানগুলোর।’
শুল্কারোপে সবচেয়ে বেশি ক্ষতির মুখে পড়বে নাইকি, অ্যাপলসহ বড় বড় শিল্প প্রতিষ্ঠান। এরইমধ্যে এসব প্রতিষ্ঠানের শেয়ারের দাম কমেছে ৯ শতাংশ। এদিকে গেল অক্টোবরের পর মার্কিন ডলারের দাম সবচেয়ে দুর্বলতম স্তরে নেমে এসেছে।
সাধারণত শুল্কারোপে ডলার চাঙ্গা থাকলেও, দীর্ঘমেয়াদে প্রবৃদ্ধি বাধাগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কায় বৈশ্বিক মুদ্রার বিপরীতে ডলারের মান কমছে। গেল ১০ বছরের মধ্যে মার্কিন ট্রেজারি বন্ড ৪ শতাংশ কমে সর্বনিম্ন স্তরে নেমেছে। ভবিষ্যত নিরাপদের আশায় স্বর্ণের দিকে ঝুঁকছেন বিনিয়োগকারীরা। চলতি বছরেই স্বর্ণের দাম বেড়েছে ১৯ শতাংশ।
এদিকে, ট্রাম্পের দাবি, নতুন শুল্কারোপে ফুলেফেঁপে উঠবে মার্কিন অর্থনীতি। তার যুক্তি এতে করে মার্কিন পণ্যের দাম বাড়বে এবং যুক্তরাষ্ট্রের ব্যবসায়ীরা লাভবান হবেন।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেন, ‘উত্তরাধিকারসূত্রে যুক্তরাষ্ট্রে একটি ভয়াবহ অর্থনীতি পেয়েছে বর্তমান সরকার। এখানে অনেক সমস্যা বিদ্যমান। উৎপাদন হ্রাস এবং সারা দেশে কারখানা বন্ধ হয়ে যাওয়ার পথে। চাকরি হারিয়েছে বহু মানুষ। শুল্কারোপ এই অবস্থা থেকে মুক্তি দেবে। দেশে বিনিয়োগ বাড়বে কর্মসংস্থান তৈরি হবে। যুক্তরাষ্ট্রে ট্রিলিয়ন ডলার আসার পথ তৈরি হয়েছে।’
বিশ্বব্যাপী শেয়ার বাজার ও মার্কিন ডলারের পতনে গভীর উদ্বেগ জানিয়েছে বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থা। তাদের আশঙ্কা চলতি বছরে বৈশ্বিক বাণিজ্য ১ শতাংস হ্রাস পেতে পারে। বিশেষজ্ঞদের মতে, যুক্তরাষ্ট্রে মূল্যস্ফীতি দেখা দিতে পারে। এতে মার্কিন অর্থনীতি মন্দায় পড়ার সম্ভাবনা জেগেছে ৪০ শতাংশ।