পাল্টাপাল্টি শুল্কারোপে বাড়ছে যুক্তরাষ্ট্র-চীন বাণিজ্যযুদ্ধ

0

যুক্তরাষ্ট্রের ১২৫ শতাংশ শুল্কের জবাবে ৮৪ শতাংশ শুল্ক কার্যকর করলো চীন। দুই দেশের পাল্টাপাল্টি শুল্কারোপে প্রসারিত হলো বাণিজ্যযুদ্ধ। যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে মুক্ত বাণিজ্য ও বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার নিয়ম ভাঙার অভিযোগ তুলেছে চীন। চীনা বাসিন্দাদের মতে, চলমান বাণিজ্যযুদ্ধে চীনের সঙ্গে পেরে উঠতে পারবে না যুক্তরাষ্ট্র। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দু'দেশের এ বাণিজ্য যুদ্ধে গোটা বিশ্ব অর্থনীতিই প্রভাবিত হবে।

যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের পাল্টাপাল্টি শুল্কারোপে তীব্র আকার ধারণ করেছে বিশ্বব্যাপী বাণিজ্যযুদ্ধ। প্রায় সব দেশের জন্য শুল্ক স্থগিত করলেও, চীনকে একচুল ছাড় দিতে নারাজ ট্রাম্প। এদিকে চীনও ছেড়ে কথা বলছে না। দুই অর্থনৈতিক পরাশক্তির লড়াইয়ে অস্থির হয়ে উঠেছে বিশ্ব বাজার।

শুল্কযুদ্ধ এখন রূপ নিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র বনাম চীনের যুদ্ধে। একে অপরের বিরুদ্ধে শুল্ক বৃদ্ধির প্রতিযোগিতায় নেমেছে তারা। কয়েক দফায় চীনের ওপর শুল্ক বাড়িয়ে ১২৫ শতাংশে নিয়ে যায় যুক্তরাষ্ট্র। জবাবে চীনও দফায় দফায় সব ধরনের মার্কিন পণ্যে প্রতিশোধমূলক ৮৪ শতাংশ পর্যন্ত শুল্ক ধার্য করেছে।

আইফোন থেকে শিশুদের খেলনা যুক্তরাষ্ট্রে সবই সরবরাহ করে চীন। সমস্ত মার্কিন আমদানির প্রায় ১৪ শতাংশ চীনের বাজার। ট্রাম্পের অভিযোগ, যুক্তরাষ্ট্রের প্রস্তাবের প্রতি সম্মান দেখায়নি বেইজিং। চীন কোনো চুক্তিতে আসলেই কেবল শুল্কের বিষয়ে নমনীয় হবেন ট্রাম্প। এদিকে, চীন বলছে শুল্কের মাধ্যমে ব্ল্যাকমেইল করার চেষ্টা করছে ওয়াশিংটন। যা তারা কখনোই মেনে নেবে না।

এদিকে বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থা ও মুক্ত বাণিজ্যের সব নিয়মকানুন মেনে চলার অঙ্গীকার করেছে চীন। তাদের অভিযোগ যুক্তরাষ্ট্র কোনো নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে সব দেশের ওপর অন্যায্য শুল্ক চাপিয়ে দিয়েছে। আলোচনার কোনো সুযোগ রাখেনি ওয়াশিংটন।

আরো পড়ুন:

চীনের বাসিন্দাদের মতে, বাণিজ্যযুদ্ধে চীনের সঙ্গে টিকতে পারবে না যুক্তরাষ্ট্র। অনেক ক্ষেত্রেই মার্কিন বাজারকে চীনের কাছে আসতে হবে।

স্থানীয়দের মধ্যে একজন বলেন, 'এটি চীনের জন্য বড় সুযোগ। চীন কড়া পদক্ষেপ নিলে যুক্তরাষ্ট্র অচলাবস্থায় পড়ে যাবে। ডলারের পতন হলে সব ভেঙে পড়বে।'

অন্য একজন বলেন, 'যুক্তরাষ্ট্রের শুল্ক বৃদ্ধিতে ভয় পায় না চীন। চীন সরকারের কাছে মার্কিন শুল্কের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের উপকরণ আছে।'

চীনের স্থানীয় একজন বাসিন্দা বলেন, 'শুল্ক যুদ্ধের ফলে দুই পক্ষ একটি চুক্তি বা সমঝোতায় না পৌঁছালে বিশ্ব অর্থনীতি অস্থির হয়ে উঠবে। দুই দেশের বাণিজ্যে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে।'

মার্কিন জনগণ মুদ্রাস্ফীতি ও অর্থনৈতিক মন্দা নিয়ে শঙ্কায় আছেন। চীনের ওপর উচ্চাভিলাষী শুল্কারোপ ও শুল্ক স্থগিতের ঘোষণা নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া যুক্তরাষ্ট্রের বাসিন্দাদের মধ্যে।

যুক্তরাষ্ট্রের স্থানীয় একজন বলেন, 'ট্রাম্পের এই উদ্যোগকে সমর্থন করা প্রয়োজন। মার্কিন জনগণের চাওয়া পূরণ করতে তিনি এসব উদ্যোগ নিয়েছেন।'

অন্য একজন বলেন, 'ট্রাম্প নিজের এজেন্ডা বাস্তবায়নে ব্যস্ত। শুল্কের কারণে নিম্ন শ্রেণি ও কম বেতনের মানুষদের ভোগাবে। ৯০ দিনের স্থগিতাদেশে কোনো প্রভাব পড়বে না।'

অন্য একজন বলেন, 'যা কিছু ঘটছে তার সঙ্গে আমাদের খাপ খাইয়ে নিতে হবে। শুল্কের কারণে আমাদের খরচ বাড়বে, জিনিসপত্রে দাম বাড়বে। আমাদের অতিরিক্ত অর্থ সংস্থানের প্রয়োজন।'

যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের এই বাণিজ্য যুদ্ধ কোথায় ঠেকবে কেউ জানে না। কোনো পক্ষই পিছু হটতে রাজি না। বিশেষজ্ঞদের মতে, এতে কেবল চীনা অর্থনীতি নয়, ধাক্কা খাবে সমগ্র বিশ্ব অর্থনীতি।

এসএস