চারশো মানুষ মারার পর নেতানিয়াহু বললেন- ‘কেবল শুরু’

ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনইয়ামিন নেতানিয়াহু
ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনইয়ামিন নেতানিয়াহু | ছবি: সংগৃহীত
0

অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় ১৫ মাসের সবচেয়ে রক্তক্ষয়ী দিনের পর এ হামলা 'কেবল শুরু', বললেন ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী। আজ বুধবারও (১৯ মার্চ) রাফাহ ও খান ইউনিসে হামলায় নিহত মা ও শিশুসহ কমপক্ষে ১৪ জন। বিশ্বব্যাপী সমালোচনার ঝড় উঠলেও ফিলিস্তিনিদের এ দুর্দশার জন্য হামাসের ওপর দায় চাপিয়েছে ইসরাইলের ঘনিষ্ঠতম মিত্র যুক্তরাষ্ট্র। গাজায় নতুন করে সংঘাতের বিরোধিতায় নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে ইসরাইলেই চলছে বিক্ষোভ।

মাথার ওপর বোমার গর্জনই নিয়তি হয়ে দাঁড়িয়েছে ফিলিস্তিনিদের। স্বজন হারানোর শোক বাদ দিয়ে উপত্যকার এ প্রান্ত থেকে ও প্রান্ত শুধুই ছুটে চলেছেন লাখ লাখ মানুষ।

ফিলিস্তিনিদের একজন বলেন, ‘ঘরে ছিলাম। ঘর ধ্বংস করে দিলো। বাচ্চাদের নিয়ে আরেক এলাকায় আশ্রয় নিলাম। সেখানে স্কুলে বোমা মারলো। আমার শেষ আশ্রয় তাঁবুটাও ছিড়ে পড়লো।’

আরেকজন বলেন, ‘আল্লাহর নামে শপথ করে বলছি, আমরা ক্লান্ত। রমজান মাস চলছে। রোজা রেখে আর পারছি না এখান থেকে ওখানে ছুটতে। এটা জীবন নয়। গাজায় মানুষের জীবন বলে কিছু নেই।’

অবিরাম বোমাবর্ষণে একদিনে ৪০০ জনের বেশি মানুষের মৃত্যুতে হতবাক। কিন্তু ১৫ মাসের মধ্যে সবচেয়ে রক্তক্ষয়ী দিনের পর স্থির হয়ে বসার উপায় নেই। ঘোড়ায় টানা ঠেলা, গাড়ি, ট্রাক, কিছুই না পেলে পায়ে হেঁটে খুঁজছেন আশ্রয়। কিন্তু নিরাপত্তা কোথায়? গাজার স্বাধীনতাকামী হামাস যোদ্ধাদের নির্মূলের নামে ১৭ মাসে অর্ধ লাখ নিরস্ত্র মানুষকে হত্যা করেও নিরুত্তাপ ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী জানালেন, এ হামলা কেবল শুরু।

ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী বেনইয়ামিন নেতানিয়াহু বলেন, ‘আমাদের শক্তি গত একদিনে হামাস টের পেয়েছে। আপনাদের আমি নিশ্চিত করছি, হামাসকে বলছি, এটা কেবল শুরু। এই যুদ্ধে নিজেদের সকল লক্ষ্য অর্জন পর্যন্ত লড়াই চালিয়ে যাবো আমরা। আমাদের সকল বন্দিকে মুক্ত করবো, হামাস নির্মূল করবো এবং নিশ্চিত করবো যে ইসরাইলের জন্য গাজা যেন আর কখনো ঝুঁকি হয়ে না ওঠে।’

মঙ্গলবারের (১৮ মার্চ) হামলায় হামাসের শীর্ষ ক'জন কর্মকর্তাকে হত্যার দাবি করেছে ইসরাইল। হামলা-হত্যাযজ্ঞ অব্যাহত আছে বুধবারও। হামাসের কাছে জিম্মি ৫৯ বন্দির সবাইকে মুক্তি না দেয়া পর্যন্ত হামলা চলবে বলে জানিয়েছে নেতানিয়াহু প্রশাসন। যদিও বন্দিদের ফিরিয়ে আনার পথ সংঘাত নয়, মত ইসরাইলিদেরই। গাজায় নতুন করে হামলার বিরোধিতায় রাজধানী তেলআবিবে বিক্ষোভে অংশ নেয় হাজারো মানুষ; সীমান্তে জড়ো হয়ে নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে ক্ষোভ জানান জিম্মিদের স্বজনরাই।

বিক্ষোভকারীদের একজন বলেন, ‘আমার সন্তান মাতান, ৫২৯ দিন ধরে আমাদের কাছ থেকে দূরে। আরও যে ৫৮ জিম্মি আছেন, জীবিত বা মৃত, মাতানের সাথে, আপনাদের আশায় আমরা হাল ছাড়িনি। সংঘাতে ফেরার অনুমতি আমরা দেবো না।’

গাজায় নতুন করে হামলার ঘটনায় সমালোচনার ঝড় উঠেছে সারা বিশ্বে। যুদ্ধকবলিত মানুষের জন্য জরুরি ত্রাণ সরবরাহের পথ আটকে নতুন করে ইসরাইলি আগ্রাসনের বিরুদ্ধে বৈঠক করেছে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদ। যদিও ফিলিস্তিনিদের এ দুর্দশার জন্য বরাবরের মতো হামাসকেই দায়ী করছে ইসরাইলের ঘনিষ্ঠতম মিত্র যুক্তরাষ্ট্র।

জাতিসংঘের যুক্তরাষ্ট্রের ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রদূত ডরোথি শিয়া বলেন, ‘সংঘাত নতুন করে শুরু হওয়ার দায় একমাত্র হামাসের। গত কয়েক সপ্তাহ ধরে উত্থাপিত প্রতিটি প্রস্তাব তারা প্রত্যাখ্যান করেছে।’

জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস বলেন, ‘অস্ত্রবিরতির প্রতি পূর্ণ শ্রদ্ধাশীলতা, গাজায় মানবিক ত্রাণ প্রবেশ নির্বিঘ্ন করা এবং জিম্মিদের নিঃশর্ত মুক্তি- এই তিনটি বিষয়ে সব পক্ষকে রাজি করাতে বিশ্ব সম্প্রদায় যে চাপ বাড়ায়, তা নিশ্চিতে যথাসাধ্য চেষ্টা করছি আমরা।’

এদিকে ওয়াশিংটনের রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে, ইয়েমেনে ট্রাম্প প্রশাসনের হামলা সত্ত্বেও ফিলিস্তিনিদের সমর্থনে লোহিত সাগরে মার্কিন বিমানবাহী রণতরি ইউএসএস ট্রুম্যানসহ বিভিন্ন নৌযান লক্ষ্য করে ৭২ ঘণ্টার মধ্যে চতুর্থ হামলা চালিয়েছে হুতি বিদ্রোহীরা। অন্যদিকে, আন্তর্জাতিক আইন অমান্য করে অবরুদ্ধ পশ্চিম তীরে ফিলিস্তিনিদের ভূখণ্ডে অবৈধ ইসরাইলি বসতি নির্মাণের তোড়জোড় আরও বেড়েছে বলে জানিয়েছে জাতিসংঘ।

ইএ