শুল্কারোপে শুরু বাণিজ্য যুদ্ধ, ক্ষতির মুখে যুক্তরাষ্ট্রের ভোক্তা

.
বিদেশে এখন
0

শুল্কারোপ-পাল্টা শুল্কারোপের মধ্য দিয়ে শুরু হয়ে গেছে বিশ্বের শীর্ষ অর্থনীতির দুই দেশের বাণিজ্য যুদ্ধ। চীনা পণ্যে যুক্তরাষ্ট্রের বাজার সয়লাব থাকায় ক্ষতিটা যুক্তরাষ্ট্রের ভোক্তাদের বেশি হবে বলে মনে করছেন অর্থনীতিবিদরা। তারা বলছেন, কোনোভাবেই যুক্তরাষ্ট্রে চীনের পণ্য আমদানি বন্ধ করতে পারবেন না ট্রাম্প প্রশাসন। বিকল্প উপায় ঠিকই খুঁজে নেবেন ব্যবসায়ীরা। পাশাপাশি বিকল্প বাজার খোঁজার সক্ষমতাও রয়েছে চীনের।

এটা চীনের ইউ ইন্টারন্যাশনাল ট্রেড মার্কেট। ১৫শ' একর জায়গাজুড়ে রয়েছে ৭৫ হাজারের বেশি দোকান। এখন পর্যন্ত বিশ্বের সবচেয়ে বড় পাইকারি বাজার এটি। এই মার্কেটের সব পণ্যের দাম খুব দ্রুতই বেড়ে যাবে, ডোনাল্ড ট্রাম্পের শুল্কারোপের প্রভাব পড়বে চীনের ই-কমার্স প্লাটফর্মে। ছোট্ট লুপহোলের কারণে এই মার্কেটের সাশ্রয়ী পণ্য দিয়ে সয়লাব যুক্তরাষ্ট্রের বাজার। কিন্তু ডোনাল্ড ট্রাম্পের শুল্ক খড়গ শেষ করে দিতে পারে এই সাশ্রয়ী পণ্যের বাজার।

চীনা নাগরিকদের একজন বলেন, ‘সব পণ্যই লাভজনক। পাইকারি বাজারে ৫ ইউয়ান হলে বাইরে ১৫ থেকে ২০ ইউয়ান। শুল্ক আরোপ করা হলে মার্কিনদের জন্য এই পণ্যের দাম বাড়বে। কারণ যুক্তরাষ্ট্রে আমাদের ৮০ শতাংশ পণ্য যায়।’

আরেকজন বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের কোন ভরসা নেই। কিন্তু আমরা মেনে নিয়েছি। আমাদের কিছু করার নেই। যা বলবে তাই করতে হবে। গোড়া থেকে কিছু পরিবর্তন করা কঠিন।’

চীনের পূর্ব উপকূল থেকে খুব কাছে হওয়ায় এই বাজার দেশটির বৃহত্তম বন্দর সাংহাই আর নিংবোর খুব কাছে। তাই যুক্তরাষ্ট্র পর্যন্ত এই মার্কেটের পণ্য পৌঁছানো বেশ সহজ। এখানকার পণ্য যুক্তরাষ্ট্রে গেলে এতোদিন দিতে হয়নি আমদানি কর বা শুল্ক। যুক্তরাষ্ট্র পর্যন্ত গিয়েও এসব পণ্যের দর ছিল তুলনামূলক কম। শুল্ক আইন ১৯৩০ অনুযায়ী, ৮শ' ডলারের মধ্যে যেকোনো পণ্য যুক্তরাষ্ট্রে শুল্কমুক্ত প্রবেশাধিকার পাবে। ২০২৩ সালে শুধু এই শহর থেকে পণ্য রপ্তানি হয়েছে ৭ হাজার কোটি ডলারের। যদিও এই বাজারের ব্যবসায়ীদের যুক্তরাষ্ট্র নিয়ে নেই তেমন মাথাব্যথা।

ব্যবসায়ীদের একজন বলেন, ‘ট্রাম্প ক্ষমতায় আসার আগেই গবেষণা করে রেখেছি, ট্রাম্প আসলে কি করবো। কোম্পানির রপ্তানির কৌশল পাল্টাতে আলাদা কিছু ভেবে রেখেছি। তবে অভ্যস্ত হতে সময় লাগবে।’

আরেকজন বলেন, ‘আমাদের অর্ডার এতো বেশি, যে অনেক সময় আমরা সব অর্ডার গ্রহণও করতে পারি না। চীন-যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক খারাপ হলে আমাদের কিছু যায় আসে না। আমরা অন্য দেশে বাজার খুঁজে নেবো।’

ট্রাম্প শুল্কারোপের পর এখন শুধু অতিরিক্ত অর্থই গুণতে হবে না, সেইসঙ্গে কাস্টমসে পণ্য আটকে রেখে প্রক্রিয়া দীর্ঘমেয়াদি করা হবে।

বিশ্লেষকরা বলছেন, চীনের সুলভ মূল্যের পণ্যে শুল্কারোপ করে ডোনাল্ড ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রে এই পণ্যের বাজার নষ্ট করতে পারবে না। চীনা ব্যবসায়ীরা বেছে নেবে বিকল্প কোন উপায়। মাঝ দিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হবে মার্কিন ভোক্তারা।

হিনরিক ফাউন্ডেশনের বাণিজ্যনীতি প্রধান ডেবোরাহ এলমস বলেন, ‘প্রতীকী অর্থ বলতে পারেন যুক্তরাষ্ট্র চীনের পণ্যের পেছনে লেগেছে। কিন্তু এই পণ্য প্রবাহ বন্ধ হবে না। অন্য রুটে রপ্তানি হবে। কেন এতো প্যাকেজ যাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রে? কারণ মার্কিনরা কিনছে। ব্যবসায়ীরা বলবে, নিয়ম এটাই হলে আমরা মানিয়ে নেবো। কিন্তু চীনা পণ্যের যুক্তরাষ্ট্র যাওয়া বন্ধ করতে পারবেন না। মাঝখান দিয়ে মার্কিন ভোক্তাদের খরচ বাড়বে।’

ব্যবসায়ীদের প্রত্যাশা ছিল, ডোনাল্ড ট্রাম্প আর শি জিনপিংয়ের ফোনালাপের মধ্য দিয়ে অপ্রীতিকর যেকোনো পরিস্থিতি এড়ানো যাবে। কিন্তু কোন আলোচনাই কাজে আসেনি। শুরু হয়ে গেছে বিশ্বের শীর্ষ দুই অর্থনীতির দেশের বাণিজ্য যুদ্ধ। প্রশ্ন উঠছে, এরপর কী হবে? বিশ্লেষকরা বলছেন, ট্রাম্পের প্রথম দফার শুল্কারোপে বেইজিং খুব সহনশীলতার পরিচয় দিয়েছে, আলোচনার জন্য এখনও দ্বার খোলা রেখেছেন শি জিনপিং। তাদের মতে, ট্রাম্প শুল্কারোপ করে চীনকে চাপ দিয়ে আলোচনার টেবিলে আনতে চাইছে।

যদিও, তাদের আশঙ্কা এই বাণিজ্য যুদ্ধের পরিসর আরও বাড়বে। কারণ চীন ৬০ শতাংশ শুল্কারোপের জন্য প্রস্তুত। কর্মকর্তারা এখন বিচার বিবেচনা করে ট্রাম্প প্রশাসনকে বাণিজ্য ইস্যুতে নিজেদের বার্তা দেবে। যেন বাণিজ্য যুদ্ধ এড়ানো সম্ভব হয়। কেননা, মার্কিন অর্থনীতির ক্ষয়ক্ষতির হিসেব নিকেশ করতে ট্রাম্প-শি জিনপিং আলোচনার কোন বিকল্প নেই বলেও মত সংশ্লিষ্টদের।

ইএ