বিদেশে এখন
0

ক্ষমতায় ফিরেই ডোনাল্ড ট্রাম্পের ৮০ নির্বাহী আদেশ

ক্ষমতায় ফিরেই শক্তি প্রদর্শনে দেরি করেননি ডোনাল্ড ট্রাম্প। বিগত সরকারের গৃহীত পদক্ষেপ উল্টে দিলেন নতুন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। দায়িত্ব নেয়ার কয়েক ঘণ্টার মধ্যে বাইডেন প্রশাসনপূর্ব অবস্থায় ফিরতে জারি করেন প্রায় ৮০টি নির্বাহী আদেশ। 'যুক্তরাষ্ট্রের স্বর্ণযুগের সূচনা' ঘোষণা করে অবৈধ অভিবাসীদের তাড়াতে মেক্সিকো সীমান্তে জাতীয় জরুরি অবস্থা জারি, ক্যাপিটল হিলে নজিরবিহীন দাঙ্গায় জড়িত দেড় হাজার সমর্থককে ক্ষমা, মেক্সিকো-কানাডার পণ্যে ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ, প্যারিস জলবায়ু চুক্তি-বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা থেকে নাম প্রত্যাহারও ছিল এসব আদেশের মধ্যে।

ক্ষমতায় ফেরার পর থেকে বেশ খোশমেজাজে ডোনাল্ড ট্রাম্প। কেক কাটতে সশস্ত্র বাহিনীর তলোয়ার হাতে নিয়ে যেভাবে নাচতে শুরু করেন, তাতেই ধরা দেয় পাগলাটে নেতার চিরচেনা রূপ। ফার্স্টলেডি মেলানিয়ার সাথে অংশ নেন দিনের তৃতীয় ও বল ড্যান্সেও। দায়িত্ব গ্রহণের প্রথম দিনটি নির্বিবাদেই শেষ করে আগামী চার বছরের বাসস্থান হোয়াইট হাউসে ফেরেন ট্রাম্প দম্পতি।

এর আগে অবশ্য দিনভর তুমুল ব্যস্ততায় কেটেছে ৪৭তম মার্কিন প্রেসিডেন্টের। শপথ নিয়েই শক্তি প্রদর্শনে এক মুহূর্ত দেরি করেননি। দায়িত্ব নেয়ার কয়েক ঘণ্টায় ঝড়ের বেগে প্রায় ৮০টি নির্বাহী আদেশ জারি করে ফেলেন নতুন প্রেসিডেন্ট। এর মাধ্যমে বাইডেন সরকারের গৃহীত বেশ কিছু পদক্ষেপ বাতিলের খাতায় ফেলেন ট্রাম্প। ইতিহাসের সবচেয়ে বাজে আখ্যা দেন সদ্যবিগত প্রশাসনকে। দাবি করেন, তার হাত ধরে স্বর্ণযুগের সূচনা দেখছে যুক্তরাষ্ট্র।

যেখানে দাঁড়িয়ে সোমবার (২১ জানুয়ারি) শপথ নেন ট্রাম্প, চার বছর আগে সেই ক্যাপিটল রোটুন্ডাতেই ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়েছিল তার সমর্থকরা। ২০২১ সালের ৬ জানুয়ারি নজিরবিহীন দাঙ্গার সাক্ষী হয় মার্কিন ক্যাপিটল হিল; পার্লামেন্ট অধিবেশন চলতে থাকার মধ্যেই শুরু হওয়া ওই সহিংসতায় অন্তত চারজনের প্রাণহানি, রাসায়নিক স্প্রেসহ নানা অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে দেড়শ' পুলিশ কর্মকর্তার ওপর হামলা চালানো ফৌজদারি মামলার ১৬শ' আসামিকে গণহারে ক্ষমা করে নির্বাহী আদেশে সই করেন ট্রাম্প। বিতর্কিত এ পদক্ষেপ যুক্তরাষ্ট্রের পুলিশ-আইনজীবীসহ বিভিন্ন পক্ষকে ক্ষুব্ধ করলেও উচ্ছ্বসিত ট্রাম্প সমর্থকরা।

ট্রাম্প সমর্থকদের একজন বলেন, ‘ধন্যবাদ প্রেসিডেন্ট, ক্ষমা ঘোষণা করার জন্য। সবসময়েই সবাইকে বলছি যে মনে রাখবেন, এই প্রেসিডেন্ট প্রতিশ্রুতি দেন, সেগুলো মনে রাখেন এবং রক্ষা করেন।’

বিতর্কিত সিদ্ধান্তের এখানেই শেষ নয়। ওভাল অফিসে জারি করা নির্বাহী আদেশের মধ্যে রয়েছে প্যারিস জলবায়ু চুক্তি থেকে আবারও নাম প্রত্যাহার, জাতিসংঘের বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা থেকে নাম প্রত্যাহারের প্রক্রিয়া শুরু করা ইত্যাদি। প্রেসিডেন্টের ভাষ্য, বছরের পর বছরের প্রতারণা আর পতনের মুখ থেকে দেশকে উদ্ধার করবেন তিনি।

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেন, ‘এই মুহূর্ত থেকে যুক্তরাষ্ট্রের পতনের দিন শেষ। আমাদের মুক্তি, আমাদের জাতীয় গৌরবান্বিত ভবিষ্যৎ আর উপেক্ষিত থাকবে না। মার্কিন সরকারের ন্যায়, দক্ষতা আর বিশ্বস্ততা তাৎক্ষণিকভাবে ফিরিয়ে আনবো আমরা।’

পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী এদিন অবৈধ অভিবাসীদের তাড়াতে মেক্সিকো সীমান্তে জাতীয় জরুরি অবস্থা জারি করেন ট্রাম্প। তবে দেশের কৃষ্ণাঙ্গ আর হিস্প্যানিকদের প্রতি তার বার্তা ছিল ইতিবাচক।

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেন, ‘কৃষ্ণাঙ্গ আর হিস্প্যানিক সম্প্রদায়কে বলছি, ভোট দিয়ে আমার প্রতি যে ভালোবাসা আর আস্থা আপনারা দেখিয়েছেন, সেজন্য আপনাদের ধন্যবাদ। আমরা সব লিখে রেখেছি এবং আমি এসব ভুলবো না। প্রচারণার সময় আপনাদের কথাগুলো আমি শুনেছি। সামনের বছরগুলোতে আপনাদের সাথে আমি কাজ করবো।’

বিদায় নেয়ার আগমুহূর্তে জাতীয় নিরাপত্তার দোহাই দিয়ে মার্কিন ভূখণ্ডে বহুজাতিক চীনা অ্যাপ টিকটক নিষিদ্ধ করে বাইডেন প্রশাসন। সে নিষেধাজ্ঞা স্থগিত করেছেন ট্রাম্প। পাশাপাশি বিগত মেয়াদে চীনের সাথে যে বাণিজ্য যুদ্ধের অবতারণা করেছিলেন, এবারও তা জারি রাখবেন কি না- সে বিষয়ে কোনো আভাস দেননি ট্রাম্প। তবে প্রতিবেশী কানাডা আর মেক্সিকোর সাথে বৈদেশিক বাণিজ্যে শুল্ক আরোপ করছেন তিনি, যা কার্যকর হতে পারে আগামী ১ ফেব্রুয়ারি।

ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেন, ‘মেক্সিকো ও কানাডার ওপর ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপের কথা ভাবছি আমরা। কারণ তারা গণহারে মানুষ পাঠাচ্ছে এদেশে। কানাডা তো আমাদের ভীষণ ক্ষতি করছে। এতো এতো মানুষ তাদের এদেশে আসছে আর মাদক আনছে।’

অন্তত ১৭ কোটি ডলার খরচ করে ইতিহাসের অন্যতম জাঁকজমকপূর্ণ আয়োজনে প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নিয়েছেন ট্রাম্প। তার শপথ আয়োজনে অনুদানের এ পুরো অর্থের বড় অংশ দিয়েছেন টেসলাপ্রধান ইলন মাস্ক, অ্যাপলের প্রধান নির্বাহী টিম কুক, অ্যামাজনের সহ-প্রতিষ্ঠাতা জেফ বেজোস, মেটার সহ-প্রতিষ্ঠাতা মার্ক জাকারবার্গ, গুগলের সত্য নাদেলা এবং ওপেন এআই, জেনারেল মোটরসের মতো বড় বড় সব প্রতিষ্ঠান। ট্রাম্পের শপথে উপস্থিত ছিলেন বিশ্বের শীর্ষ ব্যবসায়ী নেতাদের অনেকে।

ইএ