ইউক্রেনে ড্রোন হামলায় রাশিয়ার ওপর অসন্তুষ্টি প্রকাশ ট্রাম্পের

ইউক্রেনে রাশিয়ার হামলা, ডোনাল্ড ট্রাম্প
ইউক্রেনে রাশিয়ার হামলা, ডোনাল্ড ট্রাম্প | ছবি: সংগৃহীত
0

ইউক্রেনে ড্রোন হামলার বিষয়ে রাশিয়ার ওপর অসন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। যদিও এর কয়েকঘণ্টা বাদে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জানান, গোটা ইউক্রেন দখল না করে বড় ছাড় দিয়েছে রাশিয়া। যুদ্ধবিরতির জন্য দুই পক্ষের ওপর চাপ প্রয়োগের দাবি করলেও রাশিয়ার ওপর চাপ কার্যকর হচ্ছে না বলে দাবি ভলোদিমির জেলেনস্কির। এদিকে বুধবার (২৩ এপ্রিল) মধ্যরাতের ভয়াবহ রুশ হামলায় কিয়েভে নিহতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১২ তে।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিরুদ্ধে পক্ষপাতদুষ্ট আচরণ করার অভিযোগ বেশ পুরোনো। ক্ষমতা গ্রহণের পর গেলো তিন মাসে ইউক্রেন যুদ্ধে রাশিয়ার প্রতি নমনীয় আচরণের অভিযোগ উঠেছে অসংখ্যবার।

এমন পরিস্থিতিতে কিয়েভে ভয়াবহ ড্রোন ও মিসাইল হামলার ঘটনায় মস্কোর বিরুদ্ধে বিরল সমালোচনা করলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট। ট্রুথ স্যোশালে এক পোস্টে ট্রাম্প লেখেন, ড্রোন হামলার ঘটনায় তিনি অসন্তুষ্ট। পুতিনকে থামতে বলার পাশাপাশি দ্রুত শান্তি চুক্তিতে সম্মত হওয়ার আহ্বানও জানান তিনি।

তবে এর কয়েক ঘণ্টা যেতে না যেতেই স্বরূপে ফিরলেন রিপাবলিকান নেতা। ওভাল অফিসে নরওয়ের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক শেষে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জানান, গোটা ইউক্রেন দখল না করে বড় ধরনের ছাড় দিয়েছে রাশিয়া। যদিও যুদ্ধবিরতির জন্য দুপক্ষকেই চাপ দেয়া হচ্ছে বলে জানান তিনি।

ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেন, 'যুদ্ধবিরতি কার্যকর করা ও গোটা ইউক্রেন দখল না করার মাধ্যমে বড় ছাড় দিয়েছে রাশিয়া। আমরা দু'পক্ষের ওপরই চাপ দিচ্ছি। আমার মনে হয় তারাও একটি চুক্তি চায়। তবে ইউক্রেন সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় তাদের একটি চুক্তি প্রয়োজন।'

তবে ইউক্রেনীয় প্রেসিডেন্টের অভিযোগ, রাশিয়ার ওপর তেমন চাপ প্রয়োগ করছে না যুক্তরাষ্ট্র। পূর্বাঞ্চলীয় ৪ এলাকা ও ক্রিমিয়া উপদ্বীপকে রাশিয়ার অঞ্চল হিসেবে মেনে নেয়া ইউক্রেনের সংবিধান পরিপন্থি হিসেবেও দাবি করেন তিনি।

ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি বলেন, 'রাশিয়ার ওপর যুক্তরাষ্ট্রের চাপ দৃশ্যমান হচ্ছে না। অঞ্চলগুলোর মালিকানা আমরা ছাড়তে পারবো না। কারণ আমাদের সংবিধান এর বৈধতা দেয় না। মিত্রদের আমরা বিষয়টি পরিষ্কার করেছি।'

এর আগে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জানান, যুক্তরাষ্ট্র ছাড়া ন্যাটোর শক্তি আগের মতো থাকবে না। অন্যদিকে, ন্যাটো মহাসচিবের দাবি, রাশিয়াকে দীর্ঘমেয়াদি হুমকি হিসেবে মানতে সম্মত হয়েছে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় মিত্ররা। মার্কিন প্রেসিডেন্টের সঙ্গে বৈঠক শেষে মার্ক রুট জানান, অস্ত্রবিরতির বল এখন রাশিয়ার কোর্টে।

ন্যাটো মহাসচিব মার্ক রুট বলেন, 'ন্যাটোর সকল সদস্য রাশিয়াকে দীর্ঘমেয়াদি হুমকি হিসেবে মেনে নিতে একমত হয়েছে। ইউরো- আটলান্টিক ভূখণ্ডের সকল রাষ্ট্রই এই হুমকির মধ্যে রয়েছে।'

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেন, 'আমাদের ছাড়া ন্যাটোর ভবিষ্যৎ কী হবে, এটি ইউরোপের জন্য গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। আমার মনে হয়, সংগঠনটি আগের মতো শক্তিশালী থাকবে না।'

বুধবার রাতভর হামলায় মৃত্যুপুরীতে পরিণত হয়েছে কিয়েভ। সূর্যের আলো দ্যুতি ছড়ানোর আগেই রাজধানীজুড়ে ছড়িয়ে পড়ে আগুনের লেলিহান শিখা। হতাহতের সংখ্যা ছাড়িয়েছে শতকের ঘর। স্বজনকে জীবিত পাবার আশায় ধ্বংসস্তূপের পাশে অপেক্ষার প্রহর গুনছেন ইউক্রেনীয়রা।

২০১৪ সাল থেকে ক্রিমিয়ার নিয়ন্ত্রণ করছে রাশিয়া। নতুন যুদ্ধবিরতি প্রস্তাবের আওতায় উপদ্বীপটিকে রাশিয়ার অঞ্চল হিসেবে স্বীকৃতি দেবে যুক্তরাষ্ট্র। ইউক্রেনীয় প্রেসিডেন্ট বিষয়টিকে প্রত্যাখান করলেও স্বাগত জানিয়েছে ক্রিমিয়ার অধিবাসীরা। যুদ্ধবিরতি কার্যকর না হওয়ার পেছনে জেলেনস্কির গোড়ামিকে দায়ী করছেন তারা।

ক্রিমিয়ার স্থানীয়দের মধ্যে একজন বলেন, 'ক্রিমিয়া ও রাশিয়ার অধিবাসীরা ইউক্রেন, যুক্তরাষ্ট্র এমনকি পুরো বিশ্বের সঙ্গে সম্পর্ক তৈরিতে মুখিয়ে আছে।'

অন্য একজন বলেন, 'জেলেনস্কির সঙ্গে সমঝোতা করা কঠিন। কারণ তিনি দেশের সব কিছু বিক্রি করেছেন। জনগণের বিষয়ে তিনি চিন্তা করেন না।'

স্থানীয়দের মধ্যে থেকে একজন বলেন, 'জেলেনস্কি ক্ষমতা ধরে রাখতে চান। যদিও তার প্রেসিডেন্ট পদের বৈধতা নেই। তাই আলোচনাকে দীর্ঘায়িত করছেন তিনি।'

এদিকে রুশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অভিযোগ, যুদ্ধবিরতির বিষয়ে সমঝোতায় পৌঁছানোর সক্ষমতা নেই জেলেনস্কির। জ্বালানি স্থাপনায় ৩০ দিনের যুদ্ধবিরতি কার্যকর হলেও তা ১৩৬ বার ভেঙ্গেছে কিয়েভ। এসময় ইউক্রেনীয় প্রেসিডেন্টকে মানসিক বিকারগ্রস্ত বলেও মন্তব্য করা হয়।

রাশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মারিয়া জাখারোভা বলেন, 'জেলেনস্কি কোনো প্রকার ছাড় দিতে রাজি হচ্ছেন না। যা বলে দিচ্ছে সমঝোতায় পৌঁছানোর বিষয়ে তিনি অক্ষম। এমন মানসিক বিকারগ্রস্থ আচরণ প্রমাণ করছে জেলেনস্কি এই ম্যাসাকার থামাতে চান না। শেষ সেনা নিহত না হওয়া পর্যন্ত তিনি যুদ্ধ চালিয়ে যাবেন।'

ক্রেমলিন জানিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে যুদ্ধবিরতির বিষয়ে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে রাশিয়া। দোনেৎস্কের বেশ কিছু এলাকা দখলেরও দাবি করেছে রুশ প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়।

এসএস