নজিরবিহীন ঠাণ্ডায় কাঁপছে যুক্তরাষ্ট্র। আবহাওয়াবিদরা বলছেন, চলতি দশকে সবচেয়ে ভয়াবহ তুষারপাত ও বৈরি আবহাওয়ার কবলে পড়েছে দেশটি। কানসাস থেকে নিউ জার্সি, ৩০টিরও বেশি অঙ্গরাজ্যের ৬ কোটির বেশি বাসিন্দা বিপর্যয়ের মুখে পড়েছেন। ২০১১ সালের পর যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে শীতল মাস হতে যাচ্ছে জানুয়ারি।
বছরের প্রথম তুষারঝড় ইন্ডিয়ানা অঙ্গরাজ্যে আঘাত হেনেছে। শহরের ঘরবাড়ি ও পথঘাট একাকার হয়ে আছে সাদা বরফে। বরফ জমেছে ৬ থেকে ৯ ইঞ্চি পর্যন্ত। ঝড়ো বাতাসের পাশাপাশি ক্রমেই তীব্র থেকে তীব্রতর হচ্ছে তুষারঝড়।
ওয়াশিংটন, কেন্টাকি, মিসৌরি, মিসিসিপি, ফ্লোরিডা ও ভার্জিনিয়াসহ বেশ কয়েকটি অঙ্গরাজ্যে জারি রয়েছে জরুরি অবস্থা। প্রচণ্ড ঠান্ডার মধ্যে বৃষ্টি ও তুষারঝড়ে থমকে আছে জনজীবন। কানসাস ও মিসৌরি অঞ্চলে বরফ জমেছে ১০ ইঞ্চি পর্যন্ত। যা গেল ৩২ বছরের মধ্যে সবচেয়ে বেশি তুষারপাতের ঘটনা।
বৈরি আবহাওয়ায় বাতিল ও বিলম্বিত হয়েছে কয়েক হাজার ফ্লাইট। ওহাইও থেকে ওয়াশিংটন পর্যন্ত ১২ ইঞ্চি পর্যন্ত তুষারপাতে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে জনজীবন। বন্ধ হয়ে গেছে শত শত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও সরকারি-বেসরকারি অফিস। বিদ্যুৎবিহীন হয়ে আছে বহু ঘরবাড়ি। ব্যাহত হচ্ছে পণ্য ও যাত্রীবাহী যান চলাচল। ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে অর্থনৈতিক ক্ষতির মুখে পড়েছে বেশকিছু অঙ্গরাজ্য।
আবহাওয়াবিদের মতে, আর্কটিকের চারপাশে সঞ্চালিত ঠান্ডা বাতাস ক্রমেই পূর্ব দিকে অগ্রসর হচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রের পূর্ব উপকূলের দিকে অগ্রসর হয়ে শীতকালীন ঝড়টি শিথিল হবে।
ন্যাশনাল এটমোসফিয়ার অ্যান্ড ওশেনিক অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের আবহাওয়াবিদ রিচ অটো বলেন, ‘প্রশান্ত মহাসাগরে উত্তরপশ্চিমাঞ্চলের জন্য বেশ কিছু সতর্ক বার্তা ও পরামর্শ দেয়া হয়েছে। বিশেষ করে পাহাড়ি অঞ্চলে শীতকালীন ঝড়ের শঙ্কা রয়েছে। ঝড়ো বাতাসের সঙ্গে তীব্র তুষারপাত ও বন্যার আশঙ্কা আছে। ক্যালিফোর্নিয়ার থেকে ওয়াশিংটন পর্যন্ত বৈরি আবহাওয়া বিরাজ করতে পারে।’
এদিকে, যুক্তরাজ্যেও তাপমাত্রা বইছে হিমাঙ্কের নিচে। ইংল্যান্ডের উত্তরাঞ্চলে ১২ হাজারের বেশি বাড়ি বিদ্যুৎবিহীন হয়ে আছে। তীব্র তুষারপাতের সঙ্গে বৃষ্টির পূর্ভাবাস দিয়েছে দেশটির আবহাওয়া অফিস। এতে বিভিন্ন স্থানে বরফ গলে দেখা দিয়েছে বন্যা।
তীব্র তুষারপাতে ইংল্যান্ডের পাশাপাশি আয়ারল্যান্ড ও ওয়েলসেও সতর্কতা জারি করা হয়েছে। টানা ভারী তুষারপাতে আয়ারল্যান্ডের দক্ষিণাঞ্চল বরফের চাদরে ঢেকে গেছে। এছাড়াও, ওয়েলস ও স্কটল্যান্ডসহ ব্রিটিশ দ্বীপপুঞ্জের অন্যান্য অংশেও প্রচুর তুষারপাত হয়েছে। কিছু অংশে ১২ থেকে ১৫ ইঞ্চি পর্যন্ত তুষারপাত রেকর্ড করা হয়েছে।
ভারি তুষারপাতে বন্ধ হয়ে গেছে ম্যানচেস্টার ও লিভারপুল বিমানবন্দরের রানওয়ে। বাতিল ও বিলম্বিত হয়েছে কয়েকশ' ফ্লাইট।