বিদেশে এখন
0

বিশ্বের প্রতি ছয় শিশুর একজনের বাস বেশি সংঘাতপূর্ণ অঞ্চলে

বিশ্বব্যাপী প্রতি ছয় শিশুর একজনের বেশি সংঘাতপূর্ণ অঞ্চলে বাস করে। এক বিবৃতিতে এই তথ্য জানিয়েছে জাতিসংঘের শিশুবিষয়ক সংস্থা ইউনিসেফ। ২০২৪ সালকে শিশুদের জন্য সবচেয়ে খারাপ বছর হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে। গাজা, সুদান ও ইউক্রেনসহ চলমান বৈশ্বিক যুদ্ধে হুমকির মুখে আছে কয়েক কোটি শিশু।

যুদ্ধে শিশুদের কোনো দায় না থাকলেও, তাদেরকেই সর্বোচ্চ মূল্য দিতে হয়। বোমার আঘাতে প্রাণ দিয়ে হয় তাদেরই। হাইতি থেকে মিয়ানমার, ফিলিস্তিন, সুদান, ইউক্রেনসহ বিশ্বের অনিয়ন্ত্রিত যুদ্ধে শিশুদের একটি প্রজন্ম ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে।

ইউনিসেফের তথ্য বলছে, বর্তমানে ৪৭ কোটির বেশি শিশু সংঘাতপূর্ণ এলাকায় বাস করছে। ২০২৩ সালের শেষ নাগাদ বাস্তুচ্যুত শিশুর সংখ্যা ছিল সাড়ে ৪ কোটি। চলতি বছরে হাইতি, লেবানন, মিয়ানমার, ফিলিস্তিন ও সুদানসহ বিভিন্ন দেশে সংঘাত তীব্রতর হওয়ায় ক্রমেই বাড়ছে গৃহহীন শিশুর সংখ্যাও।

সংস্থাটি আরও জানায়, শিশুদের ওপর যৌন নির্যাতনের ঘটনাও বেড়েছে কয়েক গুণ। একদিকে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে তাদের শিক্ষা, অন্যদিকে অপুষ্টিতে ভুগছে অনেক শিশু। এছাড়া, সশস্ত্র সংঘাত শিশুদের মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর ফেলছে মারাত্মক প্রভাব।

সবচেয়ে ভয়াবহ অবস্থা গাজা উপত্যকার। গেল ১৫ মাসে ইসরাইলি হামলায় প্রাণ গেছে প্রায় সাড়ে ১৭ হাজার কোমলমতি শিশুর। বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার তথ্যমতে, গাজার প্রায় ৯৬ শতাংশ নারী ও শিশু তাদের মৌলিক পুষ্টির চাহিদা পূরণ করতে পারছে না। গাজাকে হৃদয়বিদারক স্থান হিসেবে উল্লেখ করেছেন ইউনিসেফের এই কর্মকর্তা।

ইউনিসেফের নির্বাহী পরিচালক ক্যাথরিন রাসেল বলেন, ‘ইসরাইলি হামলায় প্রায় প্রতিদিনই বহু শিশুর মৃত্যু হচ্ছে। গাজার প্রতিটি ঘটনাই প্রত্যেকটি পরিবারের জন্য হৃদয়বিদারক। এই উপত্যকার হতাহত শিশুর সংখ্যাটা আসলেই ভয়ংকর। গাজা যুদ্ধে যত শিশু মারা গেছে বিশ্বের অন্য কোনো সংঘাতে এমন অবস্থা তৈরি হয়নি।’

অবরুদ্ধ গাজায় প্রতিটি শিশুর জীবন কাটছে দুঃস্বপ্নের মধ্যে। শরণার্থী শিবিরে প্রয়োজনীয় খাদ্য ও পুষ্টিহীনতায় মানবেতর জীবন পার করছে তারা। গায়ে নেই শীতের পোশাক, আবর্জনার ভেতর খুঁজতে হচ্ছে খাবার, জর্জরিত নানা রোগে। চোখের সামনে স্বজনদের হারাচ্ছে অসহায় এসব শিশু।

গাজার এক শিশু বলেন, ‘যুদ্ধের কারণে ঘরবাড়ি ছেড়ে আমাদের পালিয়ে আসতে হয়েছে। আমরা এখানে আশ্রয় নিয়েছি।’

আরেক শিশু বলেন, ‘এক বছরেরও বেশি সময় ধরে আমরা বাড়ি ছাড়া। উত্তর গাজায় আমাদের বাড়িতে ফিরে যেতে চাই।’

এদিকে, সুদানে চলমান সশস্ত্র বাহিনীর সংঘর্ষে বাস্তুচ্যুত হয়েছে ১ কোটির বেশি মানুষ। যাদের মধ্যে ৫২ শতাংশই অপ্রাপ্তবয়স্ক। দুর্ভিক্ষের মুখে পড়া শরণার্থী শিবিরে মিলছে না প্রয়োজনীয় খাবার ও ওষুধ।

জাতিসংঘ বলছে, চলমান বৈশ্বিক সংঘাতে, লাখ লাখ শিশুর হতাহত হওয়ার ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা আরও বাড়বে।

এএম