আন্তর্জাতিক বাণিজ্য
0

আজ থেকে ইউক্রেন হয়ে ইউরোপে বন্ধ হলো রাশিয়ার গ্যাস সরবরাহ

নতুন বছরের প্রথম দিন থেকেই ইউক্রেন হয়ে ইউরোপে বন্ধ হয়েছে রাশিয়ার গ্যাস সরবরাহ। শেষ হচ্ছে নাফটোগ্যাজ আর গ্যাজপ্রমের ৫ বছরের চুক্তি। এরমধ্যে দিয়ে ইউরোপের হাতছাড়া হচ্ছে সস্তা গ্যাসের বাজার। চলতি শীতে ইউরোপজুড়ে চড়া প্রাকৃতিক গ্যাসের চাহিদা। আর তাই, কিয়েভের এমন সিদ্ধান্ত প্রভাব ফেলতে পারে ভূ-রাজনীতিতে, এমনটাই মত বিশ্লেষকদের।

সোভিয়েত আমলের পাইপলাইনগুলো নতুন বছরের প্রথম দিন থেকেই অকেজো হয়ে পড়ছে। কারণ মস্কো আর কিয়েভের মধ্যে ৫ বছরের গ্যাস ট্রানজিটের যে চুক্তি ছিল, তার মেয়াদ শেষ। এই চুক্তি নবায়ন করতেও ব্যর্থ হয়েছে নাফটোগ্যাজ আর গ্যাজপ্রম। চুক্তি অনুযায়ী, ইউক্রেনকে ট্রানজিট হিসেবে ব্যবহার করে রাশিয়া প্রাকৃতিক গ্যাস সরবরাহ করতো গোটা ইউরোপে। অবশেষে কয়েক দশকের পুরানো গ্যাস সরবরাহের এই রুটটি বন্ধ করে দিতে বাধ্য হলো মস্কো।

পহেলা জানুয়ারির প্রথম কয়েক ঘণ্টা এই পাইপলাইন দিয়ে রাশিয়া থেকে গ্যাস গেছে ইউরোপে। অথচ ২০২২ সালে ইউক্রেনে আগ্রাসন শুরুর আগেও ইউরোপ মহাদেশের সবচেয়ে বড় গ্যাস সরবরাহকারী দেশ ছিল রাশিয়া। একে একে ইউরোপীয় ইউনিয়নের অনেক গ্রাহকই হারিয়ে ফেলেছে ক্রেমলিন। স্লোভাকিয়া আর অস্ট্রিয়া খুঁজছে বিকল্প বাজার। সোভিয়েত আমলের এই পাইপলাইন দিয়ে রাশিয়ার সার্বিয়া থেকে সুদঝা হয়ে কুরস্কের ভেতর দিয়ে ইউক্রেন হয়ে স্লোভাকিয়া যেতো। সেখান থেকে সরবরাহ হতো অন্যান্য দেশে।

বিশ্লেষকরা বলছেন, এই গ্যাস সরবরাহ বন্ধ হওয়ায় ভূ-রাজনীতিতে অনেক প্রভাব পড়বে। ইউক্রেনে আগ্রাসন চালানোয় রাশিয়ার গ্যাসের বাজার দখল করে নিচ্ছে প্রতিদ্বন্দ্বী যুক্তরাষ্ট্র, কাতার আর নরওয়ে। যে কারণে বিশ্বের বৃহত্তম গ্যাস রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান গ্যাজপ্রম ২০২৩ সালে লোকসান গুনেছে ৭০০ কোটি ডলার। অথচ ইউরোপের প্রাকৃতিক গ্যাসের বাজারে বরাবরই আধিপত্য ছিল রাশিয়ার। ২০২২ সালের পর ইউরোপে গ্যাস সরবরাহের রুট ইয়ামাল ইউরোপ পাইপলাইন আর বাল্টিক সাগরের নিচের নর্ডস্ট্রিম পাইপলাইন পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায়।

এমনকি একসময় সোভিয়েত ইউনিয়নের অংশ মলদোভাতেও আর গ্যাস দিতে পারবে না রাশিয়া। তবে কৃষ্ণসাগরের তুর্কস্ট্রিম পাইপলাইন দিয়ে রাশিয়ার গ্যাস পাবে হাঙ্গেরি, তুরস্ক ও সার্বিয়া। শীতের শুরুতেই রাশিয়া গ্যাস সরবরাহ বন্ধ করতে বাধ্য হওয়ায় বিপাকে পড়তে যাচ্ছে গোটা ইউরোপ। আগামী দিনে লন্ডন, প্যারিস আর বার্লিনের তাপমাত্রা নামতে পারে হিমাঙ্কের কয়েক ডিগ্রি নিচে। যখন প্রয়োজন পড়বে আরও বেশি গ্যাস। সেপ্টেম্বর থেকে ২০ শতাংশ কমে গেছে ইউরোপে গ্যাসের মজুত। ফলে, ৫ শতাংশ বেড়ে গেছে গ্যাসের দাম।

২০২৩ সালে রাশিয়া থেকে ১০ শতাংশ গ্যাস আমদানি করেছে ইউরোপ, ২০২১ সালে যা ছিল ৪০ শতাংশ। ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি বলেছেন, কোনোভাবেই নবায়ন করা হবে না চুক্তি। কারণ এই আয় দিয়ে ইউক্রেনেই আগ্রাসন চালান ভ্লাদিমির পুতিন। ১৯৯১ সাল থেকে ইউক্রেন হয়ে ইউরোপে গ্যাস সরবরাহ করছে রাশিয়া।

ইএ