রাশিয়ার কুরস্কে ইউক্রেনের সেনা অনুপ্রবেশের ঘটনায় দুই সপ্তাহ পার হয়ে গেলেও তাদের প্রতিহতে এখনও কার্যকর কোন পদক্ষেপ নিতে পারেনি মস্কো।
ইউক্রেনে রাশিয়ার সেনা অভিযানের মোড় ঘুরিয়ে দিয়েছে কিয়েভের সাহসী এই পদক্ষেপ। দুই সপ্তাহে কয়েক হাজার সেনা প্রবেশ করেছে কুরস্কে। এতোদিন মস্কো নিজ দেশের সেনাদেরই ইউক্রেনের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের ময়দানে পাঠিয়ে আসছিলেন। কিন্তু কুরস্কের এই সেনা অনুপ্রবেশের ঘটনার পর রাশিয়া পড়ে গেছে দ্বিধায়। কুরস্ক রক্ষা করতে আরও বেশি সেনা মোতায়েন করবেন নাকি ইউক্রেনের আরও এলাকা দখলে মনোনিবেশ করবে, তা নিয়ে দোটানায় পড়েছে পুতিন প্রশাসন।
তবে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি বলেছেন, এই সেনা অনুপ্রবেশ যুদ্ধের ইতি টানতে ইউক্রেনের পক্ষ থেকে একটি পদক্ষেপ মাত্র।
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট বলেন, ‘দোনেৎস্ক, খারকিভসহ ইউক্রেনের দক্ষিণাঞ্চলে প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা বাড়িয়েছি। কৃষ্ণ সাগরের নিয়ন্ত্রণ নেয়া, কুরস্কে সেনা অনুপ্রবেশ আর রুশ সেনাবাহিনীর বিভিন্ন স্থাপনায় হামলা, সবই প্রমাণ করে, আমরা নিজেদের রক্ষা করছি। এই যুদ্ধ শেষ করতে আর ইউক্রেন স্বাধীন করতে এটা আমাদের একটা পদক্ষেপ মাত্র।’
এই সংকটের মধ্যে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ইউক্রেনে সফরে গেছেন। দেখা করবেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে। মোদি বলেন, ‘রাশিয়ার এই অভিযানের নিন্দা জানায় ভারত।’ এই অঞ্চলে শান্তি প্রতিষ্ঠায় নয়াদিল্লি সহযোগিতা করবে বলেও জানান তিনি।
রাশিয়ার পক্ষে যুদ্ধক্ষেত্রে দেখা দিয়েছে সেনা সংকটও। যে কারণে ইউক্রেনে যুদ্ধ চালিয়ে যেতে বিভিন্ন দেশ থেকে সেনা সদস্য নিয়োগ দিচ্ছে রাশিয়া-সম্প্রতি এমন খবর প্রকাশ করেছে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম। শর্ত দেয়া হচ্ছে, রাশিয়ার জন্য ১ বছর যুদ্ধ করলে পুরো পরিবারকে দেয়া হবে রুশ নাগরিকত্ব। শ্রীলঙ্কা, নেপাল, ভারত, কিরগিজস্তান, তাজিকিস্তানসহ অর্থনৈতিকভাবে বিপর্যস্ত অনেক দেশ থেকেই তরুণরা যোগ দিচ্ছেন রুশ সেনাবাহিনীতে।
সংবাদ মাধ্যম ব্লুমবার্গ বলছে, রাশিয়া জোর করে সেনাবাহিনীতে অভিবাসী কর্মী আর শিক্ষার্থীদের নিয়োগ দিচ্ছে। তাদের শর্ত দেয়া হয়েছে, রুশ সেনাবাহিনীর হয়ে কাজ না করলে ভিসা নবায়ন করা হবে না। পাশাপাশি দেয়া হচ্ছে মাসে ২ হাজার ডলার বেতনের প্রতিশ্রুতি। এদের মধ্যে অনেকেই এরইমধ্যে আটক হয়েছেন ইউক্রেনীয় সেনাবাহিনীর হাতে। জীবনের ঝুঁকি থাকায় পালিয়ে যাচ্ছেন নিয়োগপ্রাপ্ত বহু সেনা সদস্য।
দেশটির সেনাপ্রধান ওলেক্সান্ডার সিরস্কি জানান, এখন পর্যন্ত কুরস্কের প্রায় ১৩শ' বর্গকিলোমিটার এলাকা দখলে নিয়েছেন তারা। যেখানে চলতি বছরের শুরু থেকে এখন পর্যন্ত রাশিয়া দখল করেছে ইউক্রেনের ১১শ' ৭৫ বর্গকিলোমিটার এলাকা। এই পরিসংখ্যান সঠিক হলে রাশিয়া আট মাসে যে এলাকা দখল করেছে, ইউক্রেন দুই মাসে দখল করেছে তার চেয়ে বেশি।
অঞ্চলটিতে জেলেনস্কি বাহিনীর বিরুদ্ধে কোনভাবেই পেরে না উঠে বরাবরেরই মতো রাশিয়ার অভিযোগ, দেশের অভ্যন্তরে সেনা অনুপ্রবেশ আর এলাকা দখলে ইউক্রেন যুক্তরাষ্ট্রের সমরাস্ত্র ব্যবহার করছে। রাশিয়ার অভ্যন্তরে ন্যাটো সদস্য দেশগুলোর দেয়া সমরাস্ত্র ব্যবহার করে এসব হামলা চালানোয় ক্ষোভে ফুঁসছে মস্কো। কুরস্কের পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্রেও ইউক্রেন হামলা চালাতে চেয়েছিলো বলেও অভিযোগ রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের।
ভ্লাদিমির পুতিন বলেন, ‘শত্রুপক্ষ আমাদের কুরস্কের পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্রে হামলা করার চেষ্টা করেছে। আন্তর্জাতিক আণবিক শক্তি সংস্থাকে জানিয়েছি। তারা আসবে বলে কথা দিয়েছে। পরিস্থিতি খতিয়ে দেখবে। আশাবাদী হওয়া ছাড়া কিছু করার নেই।’
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর এই প্রথম এতো বড় সেনা অনুপ্রবেশের ঘটনা ঘটেছে রাশিয়ায়। এরপর থেকে কুরস্কে চলছে দুই পক্ষের তুমুল সংঘাত। বৃহস্পতিবার রাশিয়ার দক্ষিণাঞ্চলের কাভকাজ বন্দরে জ্বালানি ট্যাঙ্কবাহী একটি ফেরি ইউক্রেনের হামলার শিকার হয়। কুরস্কে এই সেনা অনুপ্রবেশের ঘটনায় ন্যাটো জোটের সঙ্গে রাশিয়ার দ্বন্দ্ব আরও বেড়ে গেলো বলে মনে করছেন সামরিক বিশ্লেষকরা।