হিমালয় কন্যা নেপালে মধ্য জুন থেকে বন্যা ও ভূমিধসে প্রাণ গেছে ৯০ জনের বেশি মানুষের। দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার মধ্যেই স্থানীয় সময় শুক্রবার ভোররাত সাড়ে ৩টার দিকে ভূমিধসে সড়ক থেকে নদীতে পড়ে ভেসে যায় দু’টি যাত্রীবাহী বাস।
রাজধানী থেকে ১শ’ কিলোমিটার দূরে চিতওয়ান জেলায় ত্রিশুলী নদীর শিমলতল পয়েন্টে এ দুর্ঘটনায় নিখোঁজ সাত ভারতীয়সহ অর্ধশতাধিক আরোহী।
পুলিশ জানিয়েছে, ভেসে যাওয়া কাঠমান্ডুগামী বাসটিতে ২৪ জন আরোহী ছিলেন। অন্যটিতে ছিলেন ৪১ জন। বাসের জানালা থেকে লাফিয়ে পড়ে প্রাণে বেঁচেছেন তিনজন। বাকিদের সন্ধানে চলছে অভিযান। একই সড়কে কাছাকাছি সময়ে আরেকটি বাস দুর্ঘটনায় নিহত হন আরও একজন। দুর্ঘটনায় শোক জানিয়েছেন নেপালের প্রধানমন্ত্রী পুষ্প কমল দহল প্রচণ্ড।
এদিকে বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী ধুবরিসহ ব্রহ্মপুত্রের তিনটি পয়েন্টে পানি বিপৎসীমার ওপরে, ফলে এখনও পানির নিচে আসামের বড় অংশ। বন্যা দীর্ঘায়িত হতে থাকায় ডুবে গেছে এক লাখ একর কৃষি জমি। ভেসে যাচ্ছে শয়ে শয়ে গবাদি পশু। পানিবন্দি ১৪ লাখ মানুষ, চলতি মৌসুমে রাজ্যটিতে দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ায় প্রাণহানি ১শ’র কাছাকাছি।
আসামের এক বাসিন্দা বলেন, 'বন্যার পানি ঢুকতে শুরু করলে তাড়াহুড়ো করে পালিয়ে আমরা তো প্রাণে বেঁচেছি। কিন্তু ঘরের যতো জিনিসপত্র ছিল, সব ভেতরেই রয়ে গেছে।'
একই পরিস্থিতি ভারতের আরও অনেক রাজ্যে। বৃহস্পতিবার পর্যন্ত শুধু আসাম, উত্তর, মধ্য ও হিমাচল প্রদেশে চলতি মৌসুমে বন্যা-ভূমিধসে মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে অন্তত ২৩৫ জনে। ১৫ জুন থেকে ৯ জুলাই পর্যন্ত তিন সপ্তাহে মধ্য প্রদেশেই দুর্যোগে প্রাণ গেছে প্রায় ১শ’ মানুষের, অতিবৃষ্টিতে ক্ষতিগ্রস্ত ২৬৮ গ্রামের বাসিন্দা, প্রাণ গেছে সাড়ে ৪শ’ গবাদি পশুর। উত্তর প্রদেশে বজ্রপাতে, হিমাচলে পানিতে ডুবে মৃত্যু হয়েছে অর্ধশতাধিক মানুষের। ভারতের উত্তর ও উত্তরপূর্বাঞ্চলের বড় অংশ পানিবন্দি। অতিবৃষ্টির কারণে রাজধানী দিল্লিতেও খাল উপচে পড়ে ভেসে গেছে অনেক এলাকা।
দিল্লির এক বাসিন্দা বলেন, 'রাত সাড়ে ১২টার দিকে জানতে পারি যে (মুনাক খালের) বাঁধ ভেঙে পানি ধেয়ে আসছে। নিজেদের মালপত্র বাঁচানোর কোনো সুযোগ পায়নি মানুষ। কোনোরকমে সন্তানদের নিয়ে ছুটে অল্প পানির এলাকায় আশ্রয় নিয়েছে।"
পশ্চিমবঙ্গে শুক্রবারও ঝরছে অবিরাম বৃষ্টি। বাংলাদেশ সীমান্তে তিস্তা নদীর উপকূলে মেখলিগঞ্জের সংরক্ষিত এলাকা এবং জলঢাকা নদী উপকূলীয় মহাসড়কের অংশবিশেষে সর্বোচ্চ আবহাওয়া সতর্কতা হিসেবে জারি আছে লাল সতর্কতা, তিস্তার দোমহনী অসংরক্ষিত এলাকায় হলুদ সতর্কতা। স্থানীয় সময় সকাল ৬টায় গজলডোবা তিস্তা ব্যারেজ থেকে প্রতি সেকেন্ডে দুই হাজার ১৭৪ ঘনমিটার পানি ছাড়ে কর্তৃপক্ষ।