জীবন বাঁচাতে সরবরাহ করা ত্রাণ কেড়ে নিচ্ছে জীবন। যুদ্ধ শুরুর পর ত্রাণ সংগ্রহ করতে গিয়ে ইসরাইলি বাহিনীর গুলিতে প্রাণ হারিয়েছেন কয়েকশ গাজাবাসী। প্যারাসুটের মাধ্যমে ফেলা ত্রাণ মাথায় পড়েও মৃত্যু হয়েছে অনেকের। এবার বিমান থেকে ফেলা ত্রাণ সংগ্রহ করার সময় সমুদ্রে ডুবে নিহত হয়েছেন কমপক্ষে ১২ ফিলিস্তিনি। একইসময় পদপিষ্ট হয়ে প্রাণ গেছে আরও ৬ জনের।
পেন্টাগন জানিয়েছে, প্যারাসুটে কারিগরি ত্রুটির কারণে ত্রাণ পড়েছে সমুদ্রে। তবে ত্রাণ সংগ্রহ করতে গিয়ে কারো মৃত্যু হয়েছে কিনা, সে বিষয়ে তথ্য নেই যুক্তরাষ্ট্রের কাছে। তাই এ প্রক্রিয়া অব্যাহত রাখার ঘোষণা ওয়াশিংটনের। সড়কপথের পরিবর্তে আকাশপথে ত্রাণ সরবরাহের সমালোচনা অনেক আগে থেকেই করছিলো আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো। গাজার নিরীহ মানুষেরও আকুতি, খাবার সংগ্রহ করতে গিয়ে যাতে নিথর দেহে ফিরতে না হয় তাদের।
স্থানীয় বাসিন্দারা বলেন, 'তারা সমুদ্রের মতো বিপজ্জনক স্থানে ত্রাণ ফেলছে। এতে মানুষ পানিতে ডুবে মারা যাচ্ছে। সবচেয়ে সহজে সড়ক পথেই এই ত্রাণ সরবরাহ করা সম্ভব।'
আরেকজন বলেন, 'আমরা সমুদ্রের পাড়ে ছিলাম, হঠাৎ বিমান থেকে সমুদ্রে ত্রাণ ফেলা হলো। সবাই খাবার সংগ্রহে সমুদ্রে নামলো। কিন্তু অনেকই ফিরতে পারেনি।'
জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে প্রস্তাব কার্যকরের দু'দিন পরেও এখনো বাস্তবায়ন সম্ভব হয়নি গাজায় যুদ্ধবিরতি। উল্টো ২টি পারমাণবিক বোমার সমপরিমাণ ২৫ হাজার টন বিস্ফোরকে ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে উপত্যকা। ক্ষুধাকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করছে দখলদারবাহিনী।
কাতারের রাজধানী দোহায় যুদ্ধবিরতি নিয়ে আলোচনারত প্রতিনিধিদের দেশে ফিরে আসার নির্দেশ দিয়েছে নেতানিয়াহু সরকার। ইসরাইলের অভিযোগ, জাতিসংঘে যুদ্ধবিরতি প্রস্তাব পাস হওয়ায় ব্যাহত হচ্ছে জিম্মিদের উদ্ধার নিয়ে আলোচনা। তবে অভিযোগ অস্বীকার করেছে যুক্তরাষ্ট্র। যুদ্ধবিরতি কবে নাগাদ কার্যকর হতে পারে, তার কোনো সময়সীমা জানাতে পারেনি কাতার সরকার।
যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় মুখপাত্র ম্যাথিউ মিলার বলেন, 'জাতিসংঘে যুদ্ধবিরতি প্রস্তাব কার্যকর হওয়ার কারণে হামাসের সঙ্গে সমঝোতা কঠিন হয়ে পড়ছে, এই বক্তব্যটি ভুল। এমন বক্তব্যে জিম্মি ও তাদের পরিবারের প্রতি অন্যায় করা হচ্ছে।'
কাতারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মাজেদ আল আনসারি বলেন, 'যুদ্ধবিরতি প্রস্তাব বাস্তবায়নের সময়সীমা আমার জানা নেই। তবে গাজায় যুদ্ধবিরতির বিষয়ে আমরা আশাবাদী।'
হামাসের সামরিক শাখার ডেপুটি কমান্ডার মারওয়ান ইসাকে হত্যার দাবি করেছে ইসরাইল। দাবির পক্ষে বা বিপক্ষে কোনো বক্তব্য দেয়নি হামাস। তবে ইরান সফরের গোষ্ঠীটির নেতা ইসমাইল হানিয়া জানান, যুদ্ধে এখন পর্যন্ত কোনো ধরনের সামরিক সফলতা পায়নি ইসরাইল। এমনকি গাজায় আগ্রাসন চালানোর কারণে বৈশ্বিক সমর্থন হারিয়েছে নেতানিয়াহু সরকার। ইরান সফরে ইসমাইল হানিয়া দেখা করেন দেশটির সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনির সঙ্গে।
হামাস নেতা ইসমাইল হানিয়াহ বলেন, 'হাজারো মানুষকে হত্যা করেছে ইসরাইল। দুর্বিষহ জীবন যাচ্ছে ফিলিস্তিনিদের। তবে আমি নিশ্চিত করছি, ইসরাইল কোনো প্রকার সামরিক বা কৌশলগত লক্ষ্য পূরণে ব্যর্থ হয়েছে।'
প্রায় ৬ মাসব্যাপী যুদ্ধে নেতানিয়াহুর জনপ্রিয়তা ঠেকেছে তলানিতে। ইসরাইল ডেমোক্রেসি ইন্সটিটিউটের জরিপ বলছে, ৫৭ শতাংশ ইহুদি মনে করেন প্রধানমন্ত্রীর কার্যকলাপ নেতিবাচক। ৪৮ শতাংশ জনসমর্থন নিয়ে সবার ওপরে দেশটির সেনাপ্রধান হার্জি হালেভি। ৪০ শতাংশ নিয়ে তারপরেই আছেন প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্ট।