বিদেশে এখন
0

বহুমুখী সংকটের মধ্যেই পাকিস্তানে সাধারণ নির্বাচন

অর্থনৈতিক আর রাজনৈতিক বহুমুখী সংকটের মধ্যে পাকিস্তানে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে সাধারণ নির্বাচন। মূল্যস্ফীতিতে জর্জরিত সাধারণ মানুষের আয় কমলেও ব্যয় বাড়ছে। টিকে থাকার লড়াই করছেন ক্ষুদ্র ও মাঝারি ব্যবসায়ীরা।

পাকিস্তানের অটোরিকশা চালক ইশফাক হোসেন ২০ বছর ধরে এ পেশায় আছেন। ৪৮ বছর বয়সী ছয় সন্তানের এই বাবা ৫ বছর আগেও সারাদিন রিকশা চালিয়ে আয় করতো ১ হাজার থেকে ১২০০ রুপি। কিন্তু দেশটির মূল্যস্ফীতির লাগামহীনতার কাছে এখন তার আয় মূল্যহীন হয়ে গেছে। রিকশার ভাড়া-জ্বালানির খরচ দিয়ে তার কাছে ৫০০ রুপি অবশিষ্ট থাকে। যা দিয়ে এতো সদস্যের পরিবারের মুখে খাবার তুলে দেয়া সম্ভব না।

ইশফাক হোসেন বলেন, 'জ্বালানির দাম অনেক বেড়ে গেছে, বেঁচে থাকাই কঠিন। হতে পারে নতুন সরকার ভালো হবে, কিন্তু সেই সরকার কি ভবিষ্যতে আমাদের নিয়ে ভাববে? আমাদের অনেক সমস্যা হচ্ছে। সরকার নির্বাচনের পর আর সাধারণ মানুষ নিয়ে ভাবে না।'

মাংস আর চিজ নান রুটির জন্য বিখ্যাত লাহোরে অবস্থিত এক দোকান। দৈনিক ২ থেকে আড়াই হাজার নান বিক্রি হয়। মূল্যস্ফীতির কারণে দোকানটি দুই বছরে ৪ বার খাবারের দাম বাড়িয়েছে। দাম বাড়ার সাথে সাথে পুরনো গ্রাহক কমে যাচ্ছে।

দোকান মালিক বলেন, 'মূল্যস্ফীতির কারণে আগের চেয়ে ক্রেতা কমে গেছে। কিন্তু জিনিসপত্রের দাম বাড়ায় আমাদের পণ্যের দাম বাড়াতে হয়েছে। পাকিস্তানে খাবারের দাম এভাবেই বাড়ছে। দেয়ালে দাম টানিয়ে দিয়েছি।'

এক ক্রেতা বলেন, 'যখন কোন দোকানে মূল্যছাড় থাকে, তখন আমরা মধ্যবিত্তরা কেনাকাটা করি। খাবারের দাম পাকিস্তানে অনেক বেড়ে গেছে। আমি শিক্ষিত হয়ে ভালো আয় করেও রেস্টুরেন্টে খেতে যাওয়ার সাহস পাই না।'

মুহাম্মদ আদেল নামের একজন একটি চায়ের দোকান চালান। মূল্যস্ফীতির কারণে তাকেও দফায় দফায় চায়ের দাম বাড়াতে হয়েছে। যেখানে পাকিস্তানের বেশিরভাগ শ্রমজীবী মানুষের দৈনিক আয় কয়েকশ' রুপি, সেখানে চা খাওয়াও যেন বিলাসিতা। তাই তো এই বিক্রেতা অনেক গ্রাহক হারিয়েছেন।

তিনি বলেন, 'চায়ের দাম আগে ২০ থেকে ২৫ রুপি ছিলো, এখন সেটা ১০০ রুপি। কারণ চা পাতা, দুধ, চিনির দাম বেড়েছে। মূল্যস্ফীতি কোনভাবেই কমছে না। ইমরান খান আসলে আমাদের জন্য কাজ করতো।'

এমন গল্প পাকিস্তানের অলিগলিতে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। মূল্যস্ফীতি এখনও ঘোরাফেরা করছে ৩০ শতাংশের আশপাশে। প্রায় ৪০ শতাংশ মানুষ দারিদ্র্য সীমার নিচে বাস করছে। জিডিপি প্রবৃদ্ধির বিপরীতে ঋণ ৭২ শতাংশে পৌঁছেছে। দেশটির সাধারণ মানুষ অর্থনীতির সঙ্গে প্রতিনিয়ত যুদ্ধ করে চলছে।

স্থানীয়রা বলেন, 'গ্যাসের বিল আগে ৩ হাজার রুপি ছিল, এখন ৮ থেকে ৯ হাজার রুপি। বিদ্যুৎ বিল এই মাসে ২৫ হাজার রুপি এসেছে। কারও উপর বিশ্বাস নেই। শুধু আল্লাহকে বিশ্বাস করি।'

অর্থনৈতিক সংকটের মধ্যেই ২০১৮ সালের পর আসছে ৮ ফেব্রুয়ারি দেশটিতে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে সাধারণ নির্বাচন। দুর্বল অর্থনীতি, উচ্চ মূল্যস্ফীতির মধ্যে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের কাছ থেকে ইসলামাবাদ ৩০০ কোটি ডলারের ঋণ সহায়তা পেয়েছে। বর্তমানে তত্ত্বাবধায়ক সরকার দেশ পরিচালনা করছে।

আইএমএফ'র শর্ত অনুযায়ী, ব্যয় সংকোচন নীতির অংশ হিসেবে সাধারণ মানুষের ওপর করের চাপ পাকিস্তান সরকারকে বাড়াতে হয়। যে কারণে গেল মে মাসে মূল্যস্ফীতি ৩৮ শতাংশ ছাড়িয়ে যায়। ২০২৩ সালে এশিয়ায় সবচেয়ে দুর্বল মুদ্রার অবস্থান ছিল পাকিস্তানি রুপির। এরমধ্যেই দেশটিতে রাজনৈতিক সংকট চরমে।