যুদ্ধ
বিদেশে এখন
0

যুদ্ধে চাঙ্গা পশ্চিমা অস্ত্র উৎপাদন কোম্পানি

যুদ্ধ বাধলে একদিকে ধ্বংস হতে থাকে জড়িত পক্ষগুলোর অবকাঠামো। আর হু-হু করে পকেট ভরে অস্ত্র ব্যবসায়ীদের। এই দৌড়ে সবার চেয়ে এগিয়ে যুক্তরাষ্ট্র, ফ্রান্স, ইতালিসহ পশ্চিমা অস্ত্র উৎপাদন কোম্পানিগুলো।

২০২২ সাল থেকে শুরু হওয়া রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের রেশ থাকতে থাকতেই গেল অক্টোবরে নতুন যুদ্ধক্ষেত্র তৈরি হয় ইসরাইল-ফিলিস্তিন। প্রায় ২-৩ বছর থেকে ভুগতে থাকা বিশ্ব অর্থনীতিতে ফের আঘাত হানে গাজা উপত্যকায় তেলআবিবের আগ্রাসন। আর এসব যুদ্ধক্ষেত্র ঘিরে ফুলে ফেঁপে উঠেছে পশ্চিমাদের অস্ত্র ব্যবসা। সেই সুযোগে রেকর্ড হারে ঊর্ধ্বমুখী প্রতিরক্ষা কোম্পানিগুলোর শেয়ারদরও।

হামাস-ইসরাইল সংঘাতে উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে প্রতিরক্ষা শিল্পের শেয়ারদর। গেলবছর নতুন প্রকল্প, চুক্তি ও ফরমায়েস বাড়ায় এ খাতের শেয়ার মূল্য ছিলো ঊর্ধ্বমুখী। যেকারণে ২০২৩ সালে শীর্ষস্থানীয় প্রতিরক্ষা ও মহাকাশ সংস্থাগুলোর নজর কেড়েছে বিনিয়োগকারীদের।

তুর্কিয়ে সংবাদ সংস্থা আনাদোলুর প্রতিবেদন বলছে, যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক মহাকাশ ও প্রতিরক্ষা প্রতিষ্ঠান 'জেনারেল ডাইনামিকস' এর শেয়ারদর বেড়েছে ৪ দশমিক ৭ শতাংশ আর মার্কিন প্রতিষ্ঠান বোয়িংয়ের শেয়ারদর উঠেছে ৩৬ দশমিক ৮ শতাংশ পর্যন্ত। জেনারেল ডাইনামিকসের সঙ্গে যুদ্ধ ব্যবস্থাপনা পদ্ধতির জন্য ১৩০ কোটি ডলারের চুক্তি করেছে কানাডিয়ান সশস্ত্র বাহিনী।

এর প্রভাবে মার্কিন কোম্পানিটির শেয়ারপ্রতি প্রত্যাশার চেয়ে আয় হয়েছে ৩ ডলারেরও বেশি। এদিকে ২০২৩ সালে ২৪টি এফ-১৫ ইএক্স মাল্টিরোল ফাইটার জেটবিমান কিনতে বোয়িংয়ের সাথে সমঝোতা করেছে ইন্দোনেশিয়া।

জেনারেল ডাইনামিকস ও বোয়িংয়ের পাশাপাশি ফরাসি যুদ্ধবিমান নির্মাতা ডাসাল্ট অ্যাভিয়েশন ও ফরাসি প্রতিরক্ষা ইলেকট্রনিক্স সরঞ্জাম নির্মাতা থ্যালেসের শেয়ারদর বেড়েছে যথাক্রমে ১৩ দশমিক ৩ শতাংশ ও ১২ দশমিক ৩ শতাংশ। ডাসাল্ট জানিয়েছে এবার তারা অগ্রাধিকারভিত্তিতে নতুন অর্ডার আসা রাফাল যুদ্ধবিমান তৈরি করবে।

এছাড়া ইতালীয় শিল্প গ্রুপ লিওনার্দো এসপিএরও শেয়ারদর বেড়েছে রেকর্ড ৮৩ দশমিক ৩ শতাংশ আর ইউরোপের উড়োজাহাজ নির্মাতা এয়ারবাসের শেয়ার বেড়েছে ২৫ দশমিক ৯ শতাংশ। এদিকে এশিয়ান কোম্পানিগুলোর মধ্যে শেয়ারদরে শীর্ষে রয়েছে দক্ষিণ কোরিয়ার হানওয়া অ্যারোস্পেস ও জাপানি প্রতিষ্ঠান মিতসুবিশি হেভি। প্রতিষ্ঠান দুটির শেয়ারদর বেড়েছে যথাক্রমে ৬৯ দশমিক ২ ও ৫৭ দশমিক ৫ শতাংশ।

তবে ভিন্নচিত্র ছিলো কিছু মার্কিন ও চীনা প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে। ২০২৩ সালে আমেরিকান বহুজাতিক মহাকাশ ও প্রতিরক্ষা সংস্থা আরটিএস করপোরেশনের শেয়ারদর কমেছে ১৬ দশমিক ৬ শতাংশ। এছাড়া মার্কিন অস্ত্র প্রস্তুতকারক লকহিড মার্টিনের ৬ দশমিক ৮ ও প্রতিরক্ষা ঠিকাদার নর্থরপ গ্রুম্যানের শেয়ারদর কমেছে ১৪ দশমিক ২ শতাংশ।

একই সময়ে মহাকাশ প্রোগ্রাম ঠিকাদার চায়না অ্যারোস্পেস সায়েন্স এন্ড টেকনোলজি করপোরেশনের শেয়ারদরও কমেছে ২৫ শতাংশ। ব্যয় সম্পর্কিত সমস্যাসহ বিনিয়োগকারীদের সন্তুষ্ট করতে ব্যর্থ হওয়ায় এসব প্রতিষ্ঠানের শেয়ারদর কমেছে বলে ধারণা সংশ্লিষ্টদের।

এরইমধ্যে ভারত ২৬টি ও ইন্দোনেশিয়া ৪২টি রাফাল যুদ্ধবিমান কেনার ঘোষণা দিয়েছে। এছাড়া থ্যালেসের কাছ থেকে যুদ্ধ ব্যবস্থাপনার সিফোআই সিস্টেম ও গ্রাউন্ডমাস্টার ৪০০ টাইপ রাডার সমন্বিত একটি ডাটা শেয়ারিং নেটওয়ার্ক কেনার প্রস্তুতি নিয়েছে ইরাক।

এছাড়া গেলবছর মালেয়শিয়ার বিমান বাহিনীর সঙ্গেও কাজ করার চুক্তি করেছে ফরাসি প্রতিষ্ঠান থ্যালেস। ফ্রান্স ও মালেয়শিয়ার মধ্যে প্রতিরক্ষা সহযোগিতার অংশ হিসেবে প্রতিষ্ঠানটি রয়্যাল মালয়েশিয়ান এয়ারফোর্সকে স্টেশন অবকাঠামোসহ নতুন জিএম ফোরটি হান্ড্রেড মডেলের রাডার সরবরাহ করার কথা রয়েছে।

এদিকে চীনের হংকংয়ের বিশেষ প্রশাসনিক অঞ্চল ক্যাথে প্যাসিফিক ২০২৩ সালে এয়ারবাসকে ৩২টি ক্রয়াদেশ দিয়েছে। একইবছর এইচওয়ানফোরফাইভ-এম মাল্টিরোল মডেলের ৮২টি হেলিকপ্টার কিনতে এয়ারবাসের সঙ্গে চুক্তি করেছে জার্মান সেনাবাহিনী।

গেলবছর জাপান, ব্রিটিশ ও ইতালির প্রতিরক্ষা মন্ত্রীরা ২০৩৫ সাল পর্যন্ত যৌথ ফাইটার জেটপ্লেন উন্নয়ন প্রকল্পের জন্য একটি সমন্বয় বোর্ড গঠন করতে সম্মত হয়েছেন। ১৫৫ মিমি আর্টিলারি শেল ও গোলাবারুদ সরবরাহের লক্ষ্যে যুক্তরাজ্যের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় ও বিএই সিস্টেমস ৩৬ কোটি ১০ লাখ ডলারের চুক্তি করেছে।