ট্রাম্পের শুল্কনীতিতে অর্থনীতিতে ধস, সতর্ক ফেডারেল রিজার্ভের প্রধান

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প | ছবি: সংগৃহীত
0

ট্রাম্পের শুল্কনীতিতে ধস নামছে যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতিতে। শুল্কের সম্ভাব্য নেতিবাচক প্রভাব নিয়ে কঠোর সতর্কবার্তা দিয়েছেন মার্কিন ফেডারেল রিজার্ভের চেয়ারম্যান জেরোম পাওয়েল। মার্কিন শেয়ার বাজারও পতনের দিকে। চলতি বছরেই মন্দার পূর্বাভাস দিয়েছে বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থা। এদিকে যুক্তরাষ্ট্র-ইউরোপ বাণিজ্য সম্পর্ক নিয়ে আলোচনার জন্য ওয়াশিংটন সফরে গেছেন ইতালির প্রধানমন্ত্রী।

ক্ষমতায় এসেই বিভিন্ন দেশের পণ্যের ওপর শুল্ক বসিয়ে বিশ্ব অর্থনীতিকে এলোমেলো করে দিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। চীনের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের পাল্টাপাল্টি উচ্চাভিলাষী শুল্কারোপে আরও অস্থির হয়ে উঠেছে বিশ্ববাজার। ট্রাম্পের এমন পদক্ষেপে বিপদের মুখে খোদ মার্কিন জনগণও।

মার্কিন ফেডারেল রিজার্ভ চেয়ারম্যান জেরোম পাওয়েল বলেন, শুল্কসহ ট্রাম্পের বাণিজ্য নীতির পরিবর্তন অপ্রত্যাশিত বিপদ ডেকে আনছে যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতিতে। তার মতে, এখন পর্যন্ত ঘোষিত শুল্কের মাত্রা প্রত্যাশার চেয়ে বেশি। যা দীর্ঘস্থায়ী অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা তৈরি করছে। এতে বেকারত্ব ও মুদ্রাস্ফীতি বাড়ার শঙ্কা দেখা দিয়েছে। প্রায় অর্ধ শতাব্দী পর এমন কঠিন পরিস্থিতির মুখে পড়েছে ফেডারেল রিজার্ভ।

ফেডারেল রিজার্ভের চেয়ারম্যান জেরোম পাওয়েল বলেন, 'ট্রাম্প প্রশাসন উল্লেখযোগ্য নীতিগত পরিবর্তন বাস্তবায়ন করছে বিশেষ করে বাণিজ্যকে রাখা হচ্ছে কেন্দ্রবিন্দুতে। এর প্রভাব যুক্তরাষ্ট্রের লক্ষ্য থেকে দূরে সরিয়ে দিতে পারে। অর্থনীতির গতি কমে যাওয়ার সঙ্গে বেকারত্ব ও মুদ্রাস্ফীতি বাড়ার শঙ্কা রয়েছে। শুল্কের অতিরিক্ত বোঝা বইতে হবে মার্কিন জনসাধারণকে।'

শুল্কের সম্ভাব্য অর্থনৈতিক পরিণতি নিয়ে ফেড চেয়ারম্যান পাওয়েল কঠোর সতর্কতা দিয়েছেন। প্রথম প্রান্তিকে মার্কিন অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ধীরগতির কারণে বাড়ছে ভোক্তা ব্যয়। শুল্কের প্রভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন যুক্তরাষ্ট্রের ব্যবসায়ীরা। সুদের হার স্থিতিশীল রাখা এবং মুদ্রাস্ফীতির লক্ষ্যমাত্রা অর্জনও কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে বলে মন্তব্য করেন পাওয়েল।

ফেডারেল রিজার্ভের চেয়ারম্যান জেরোম পাওয়েল বলেন, 'ট্রাম্প প্রশাসনের বাণিজ্য, অভিবাসন, রাজস্ব ও নিয়মনীতির কারণে অর্থনীতিতে দেখা দিয়েছে চরম অনিশ্চয়তা। সেগুলো বুঝতে এবং এর সঙ্গে খাপ খাওয়াতে সময় প্রয়োজন। অর্থনীতি স্থিতিশীল পর্যায়ে আসতে একটা দীর্ঘ সময় লাগতে পারে। এর পেছনে সবাই শুল্কারোপকে দায়ী করছে।'

সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের বাণিজ্যযুদ্ধে অস্থির হয়ে উঠেছে মার্কিন শেয়ার বাজার। পতনের দিকে যুক্তরাষ্ট্রের শেয়ার বাজারের প্রধান ৩ সূচক এস অ্যান্ড পি ফাইভ হান্ড্রেড, ডাও জোন্স এবং নাসদাক।

আরো পড়ুন:

এদিকে বিশ্বব্যাপী বাণিজ্যিক প্রবৃদ্ধি শূন্য দশমিক ২ শতাংশ কমার পূর্বাভাস দিয়েছে বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থা। করোনা মহামারির সময় থেকেও বড় মন্দার দিকে নিয়ে যেতে পারে বিশ্ব অর্থনীতিকে। সংস্থাটি আরও জানিয়েছে, ট্রাম্প শুল্কনীতিতে পরিবর্তন না আনলে বাণিজ্য প্রবৃদ্ধি কমবে শূন্য দশমিক ৮ শতাংশ।

বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার মহাপরিচালক এনগোজি ওকনজো-ইওয়ালা বলেন, ‘বিশ্বব্যাপী পণ্য বাণিজ্যের প্রবৃদ্ধিতে সংকোচন দেখা যাচ্ছে। এতে উদ্বেগের বিষয় হল বিশ্বব্যাপী জিডিপি প্রবৃদ্ধিতে প্রভাব ফেলবে। বাণিজ্যের এই উদ্বেগ আর্থিক বাজারসহ অর্থনীতির অন্যান্য বৃহত্তর ক্ষেত্রেও নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। দরিদ্র ও উন্নয়নশীল দেশগুলোও উদ্বেগের মধ্যে আছে। যা সত্যিই ভাবার বিষয়।’

শুল্ক নিয়ে প্রথম দেশ হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আনুষ্ঠানিক আলোচনা শুরু করেছে জাপান। বৈঠকে বিরাট অগ্রগতি হয়েছে বলে জানিয়েছে জাপানের বাণিজ্যিক প্রতিনিধি দল। এদিকে, ইউরোপীয় পণ্যের ওপর মার্কিন শুল্ক আরোপের বিষয়ে ট্রাম্পের সঙ্গে আলোচনা করতে এরই মধ্যে ওয়াশিংটনে গেছেন ইতালির প্রধানমন্ত্রী জর্জিয়া মেলোনি। রপ্তানি নির্ভর ইতালির অর্থনীতি নিয়ে চাপে আছেন মেলোনি। গেল বছর যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে দেশটির বাণিজ্য উদ্বৃত্ত ছিল সাড়ে চার হাজার কোটি মার্কিন ডলার।

এসএস