আন্তর্জাতিক বাণিজ্য
0

ইউরোপে শীতের তীব্রতার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে জ্বালানির দাম

ইউরোপে শীতের তীব্রতার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে জ্বালানির দাম। বিশেষ করে ইউক্রেন হয়ে রাশিয়ার গ্যাস সরবরাহ বন্ধের পর থেকেই এ নিয়ে দফায় দফায় বৈঠক করছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন। যদিও জ্বালানি বিশেষজ্ঞদের দাবি হাঙ্গেরি, স্লোভাকিয়া, অস্ট্রিয়া বা ইতালির মতো কিছু দেশ মস্কোর গ্যাসের ওপর নির্ভরশীল হলেও, কিয়েভ যে এই চুক্তি নবায়ন করবে না সেটা ইউরোপের কর্তাব্যক্তিরা আগে থেকেই জানতেন। আর গ্যাস ট্রানজিট বন্ধ করায় ইউক্রেনকে উপযুক্ত জবাব দেয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছে স্লোভাকিয়া।

একদিকে হাড়কাঁপানো শীত, অন্যদিকে চড়ামূল্যে কিনতে হচ্ছে গ্যাস। নতুন বছর ২০২৫ এর শুরুটা একেবারেই আশানুরূপ হয়নি ইউরোপিয়ানদের জন্য।

১৯৯১ সাল থেকে ইউক্রেনের পাইপলাইন ব্যবহার করে ইউরোপের দেশগুলোতে তুলনামূলক সস্তা দামে গ্যাস সরবরাহ করতো রশিয়া। মস্কো আর কিয়েভের মধ্যে পাঁচ বছরের গ্যাস ট্রানজিটের যে চুক্তি ছিল, নতুন বছরের প্রথম দিন তা অকেজো হয়েছে। তাই গেল ১০ দিনে ইউরোপজুড়ে একটাই আলোচনা, কীভাবে পূরণ হবে তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাসের উর্ধ্বমুখী চাহিদা।

যদিও বিশেষজ্ঞরা বলছেন, রাতারাতি তরল গ্যাসের সংকট মোকাবিলা নয় বরং চড়া দামে গ্যাস মজুদ করাই এই মুহূর্তে ইউরোপের দেশগুলোর জন্য বড় চ্যালেঞ্জ। কিন্তু এতে করে আশ্বস্ত হতে পারছেন না বেলজিয়ামের শিক্ষার্থীরা।

একজন শিক্ষার্থী বলেন, 'বাবা মা কখনও কখনও রুম হিটার বন্ধ রাখতে বলেন কারণ বাজারে জ্বালানির দাম চড়া। প্রতিদিনই অভিযোগ শুনি, জ্বালানির দাম আরও বাড়বে।'

নতুন বছর শুরুর পরপরই লন্ডন, প্যারিস বা বার্লিনের মতো শহরের তাপমাত্রা শূন্যের নিচে নেমে এসেছে। রয়টার্স বলছে, ইউরোপের দেশগুলোতে এই মুহূর্তে যে গড় তাপমাত্রা রেকর্ড করা হচ্ছে, তা গেল ৩০ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন। গেল বুধবার (৮ জানুয়ারি) থেকে বৃহস্পতিবার (৯ জানুয়ারি) সন্ধ্যা পর্যন্ত গোটা বেলজিয়ামে ভারি তুষারপাত হয়েছে, তাপমাত্রা নেমে গেছে মাইনাস এক ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে।

শীতকালে রুম হিটার, গিজার, জেনারেটর থেকে শুরু করে এমন অনেক যন্ত্র আছে, যা ব্যবহারে অতিরিক্ত জ্বালানি প্রয়োজন হয়। ফলে তীব্র শীত আর জ্বালানি মূল্যের উর্ধ্বগতি, এই উভয় সংকটে চাহিদা আর যোগানের বিপরীতমুখী অবস্থানে দাঁড়িয়ে বিপাকে পড়েছেন ইউরোপের অন্তত ৭৫ কোটি বাসিন্দা।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কিয়েভ যে এই চুক্তি নবায়ন করবে না, সেটা ইউরোপের কর্তাব্যক্তিরা আগে থেকেই জানতেন। ফলে ইউক্রেন রাশিয়া যুদ্ধ শুরুর পর থেকে মস্কোর গ্যাসের ওপর নির্ভরশীলতা কমিয়ে যুক্তরাষ্ট্র থেকে চড়া দামে প্রাকৃতিক গ্যাস কেনার পথে ছিল ইউরোপ। পাশাপাশি গেল মাসে ট্রাম্প হুঁশিয়ারি দিয়েছেন, যুক্তরাষ্ট্র থেকে তেল ও গ্যাস আমদানির পরিমাণ না বাড়ানো হলে, ইউরোপীয় ইউনিয়নের সদস্য রাষ্ট্রের ওপর চড়া শুল্ক আরোপ করবেন তিনি।

ইউরোপিয়ান পলিসি সেন্টারের জ্বালানি বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ইউরোপের বাজারে এখনও রাশিয়ার তরল গ্যাসের চাহিদা আছে। ফলে এই সংকট থেকে রাতারাতি পরিত্রাণের উপায় নেই। তবে পাইপলাইন বন্ধ করে দেয়ায় ইউক্রেনেরও আর্থিক ক্ষতি হচ্ছে।

ইউক্রেনের পাইপলাইন হয়ে ইউরোপে রাশিয়ার যে গ্যাস আসে, তার দাম তুলনামূলক কম হওয়ায় বেশ ভালোই লাভ করছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন। ট্রানজিটের অর্থ হিসাব করলে ইউক্রেনের লাভও নেহাত কম নয়।

মস্কো-কিয়েভ দ্বন্দ্বের সুযোগ নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র, কাতার কিংবা নরওয়ের মতো দেশ যখন রাশিয়ার বাজার দখল করছে তখন, স্লোভাকিয়ার প্রধানমন্ত্রী রবার্ট ফিকো বলছেন, অবিলম্বে ইউক্রেন গ্যাসের পাইপলাইন চালুর সিদ্ধান্ত না নিলে, দেশটির বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে দ্বিধা করবে না স্লোভাকিয়া। এমনকি কিয়েভকে মানবিক সহায়তা দেওয়া থেকে বিরত থাকার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন তিনি।

রবার্ট ফিকো বলেন, 'গ্যাস ট্রানজিটের এই সংকটের সমাধান না হলে, স্লোভাক রিপাবলিকও কঠোর পদক্ষেপ নেবে। প্রথমত ইউক্রেনে যে মানবিক সহায়তা পাঠানো হচ্ছে তা বন্ধ করা যেতে পারে। মাইন অপসারণের সরঞ্জাম, ভারি খননকারী যন্ত্র এবং অন্যান্য জিনিস যা ইউক্রেনের জন্য সহায়তা হিসাবে পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে, তা বন্ধ করে দেয়া হবে।'

এদিকে, ক্রেমলিন বলছে, ইউরোপের অনেক দেশ আছে যারা প্রতিযোগিতার মধ্যে দিয়ে হলেও রাশিয়া থেকেই গ্যাস কিনতে চায়। মস্কো মনে করে, সুস্থ প্রতিযোগিতা ইউরোপের অর্থনীতিকে আরও সচল করবে।

এসএস