অসাবধানতাবশত মার্কিন ম্যাগাজিন দ্য আটলান্টিকের সাংবাদিক জেফরি গোল্ডবার্গের কাছে আগেই ফাঁস হয়ে গিয়েছিলো ইয়েমেনে যুক্তরাষ্ট্রের হামলার পরিকল্পনা। এ নিয়ে তোলপাড় গোটা বিশ্ব।
যেই রিপাবলিকানরা হিলারি ক্লিনটনের বিরুদ্ধে দুর্নীতির তদন্তের আহ্বান জানিয়েছিল, তাদের হাতেই এতো গোপনীয় নথি ফাঁস হয়েছে। যদিও হুতিদের ওপর হামলার পরিকল্পনার খবর প্রকাশের সঙ্গে সেই বার্তায় চলে এসেছে ইউরোপকে নিয়ে কি ভাবে নতুন মার্কিন প্রশাসন।
লিখিত আলোচনায় এটা স্পষ্ট, মোটেও আন্তর্জাতিক সমুদ্র বাণিজ্য কিংবা ইরানকে জবাব দিতে এই হামলা হয়নি। হামলার লক্ষ্য ছিল, ইউরোপকে আরেকবার মনে করিয়ে দেয়া, যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক সক্ষমতার ওপরই তারা নির্ভরশীল। কারণ ভূমধ্যসাগরের জলপথ অবস্থিত ইউরোপ আর মধ্যপ্রাচ্যের মাঝে।
জেডি ভ্যান্সের বক্তব্য ছিল, মাত্র ৪ শতাংশ বাণিজ্য সুয়েজ খাল দিয়ে হয় যুক্তরাষ্ট্রের, যেখানে ৪০ শতাংশ হয় ইউরোপের। এতেই স্পষ্ট, এই হামলার বড় কারণ ছিল ইউরোপকে এই বার্তা দেয়া, যে তাদের কাজটুকুও যুক্তরাষ্ট্রের করতে হচ্ছে। সংবাদ মাধ্যম গার্ডিয়ানের বিশ্লেষণ দিচ্ছে চাঞ্চল্যকর এই তথ্য।
এর আগেও বিতর্ক উঠেছিলো, ইউরোপের নিরাপত্তার জন্য যুক্তরাষ্ট্রকে সামরিক খাতে অনেক বেশি ব্যয় করতে হয়। জেডি ভ্যান্সের লেখনীতে স্পষ্ট হয়ে ওঠে, ইউরোপের সঙ্গে যে পররাষ্ট্রনীতি যুক্তরাষ্ট্র অনুসরণ করছে, এখানে ডোনাল্ড ট্রাম্পের চেয়ে তার প্রভাবই বেশি।
বরাবরই ডোনাল্ড ট্রাম্পের পক্ষ থেকে চাপ ছিল, ইউরোপকে প্রতিরক্ষা খাতে বাজেট বাড়াতে হবে। কিন্তু ট্রান্স-আটলান্টিক অ্যালায়েন্সের বিরুদ্ধে গিয়ে জেডি ভ্যান্সের মত, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ইউরোপ আর জোটবদ্ধ না। ইউরোপের পররাষ্ট্র নীতি বিশ্লেষকরা বলছেন, এটা ইউরোপের জন্য অনেক বেশি বিপজ্জনক। ইউরোপ আর যুক্তরাষ্ট্রের জোট ভাঙতে চাইছেন মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট।
সাংবাদিকের সঙ্গে সেই আলাপচারিতায় কৌশলে ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্সকে সমর্থন করে প্রতিরক্ষামন্ত্রী পিট হেগসেথ বলেন, ইউরোপ ইস্যুতে ভ্যান্সের মন্তব্যকে সমর্থন করেন তিনি। তবে পিট বলেন, হামলার জন্য আরও অপেক্ষা করা যেতো। জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা মাইকেল ওয়ালজ বলেন, যুক্তরাষ্ট্রই মধ্যপ্রাচ্যের জলসীমায় বাণিজ্যিক জাহাজ চলাচল পুনরায় স্বাভাবিক করবে। আলোচনার ইতি টানা হয় এই বলে, প্রেসিডেন্টের কাছ থেকে সবুজ সংকেত পাওয়া গেছে। মিশর আর ইউরোপকে জানিয়ে দেয়া হবে, বিনিময়ে কি চায় যুক্তরাষ্ট্র।
এই আলোচনার মধ্য দিয়ে ইয়েমেনের হামলার তথ্য যে শুধু ফাঁস হয়েছে তা নয়। সেই সঙ্গে ইউরোপের জন্য ট্রাম্প প্রশাসনের নীতির পরিবর্তন চোখে পড়ার মতো। ইউরোপ কিংবা ন্যাটোর পক্ষ থেকে যা প্রতিহত করার মতো কোন বক্তব্য এখনও পাওয়া যায়নি।
এর আগেও এক সাক্ষাৎকারে ট্রাম্পের বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফ বলেন, অর্থনৈতিক স্বার্থে গাল্ফভুক্ত দেশগুলোকে ইউরোপের দেশগুলোর সঙ্গে প্রতিস্থাপন করতে পারে যুক্তরাষ্ট্র। কারণ ইউরোপ আর আগের মতো নেই।