ইন্দোনেশিয়া থেকে ভিয়েতনাম, যুক্তরাষ্ট্র থেকে অস্ট্রেলিয়া- বিশ্বের ১৯টি দেশে ছড়িয়ে আছে সেভেন-ইলেভেনের অন্তত ৮৫ হাজার কনভেনিয়েন্ট স্টোর। সুপারশপ চেইনের দুনিয়ায় সেভেন-ইলেভেন তার ব্র্যান্ডভ্যালু ও জনপ্রিয়তা ধরে রেখেছে ১৯৯১ সাল থেকে।
চলতি মাসের শুরুতে জাপানের শেয়ারবাজারে রেকর্ড দরপতন দেখা দেয়। তখন থেকেই গুঞ্জন উঠেছিল, সেভেন- ইলেভেন চেইনটি বিক্রির কথা ভাবছে মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান 'সেভেন অ্যান্ড আই হোল্ডিং'। অবশেষে, প্রায় চার হাজার কোটি ডলারের বিনিময়ে সেভেন-ইলেভেনের মালিকানা কিনতে আগ্রহ প্রকাশ করেছে কানাডার বহুজাতিক কোম্পানি কুশ-টার্ড। চুক্তিটি পাশ হলে, কানাডা ও যুক্তরাষ্ট্রে ২০ হাজার নতুন সেভেন-ইলেভেন সুপারশপ নির্মাণের ঘোষণা দিয়েছে তারা।
১৯৯১ সালে যুক্তরাষ্ট্রের ডালাসে টটেম স্টোর নামের একটি সুপারশপ চেইনের ৭০ শতাংশ শেয়ার কিনে নেয় জাপানের সেভেন ইলেভেন। ২০০৫ এর নভেম্বরে এর একক অংশীদারিত্ব চলে যায় সেভেন অ্যান্ড আই হোল্ডিংয়ের দখলে। ২০২৪ সালে এসে এই সুপারশপ চেইনের মালিকানা নেয়ার জন্য শেয়ারবাজারে নির্ধারিত মূল্যের পাঁচ গুণেরও বেশি অর্থ দিতে প্রস্তুত কানাডার কুশ-টার্ড।
অ্যালিমেন্টেশন কুশ-টার্ডের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, অনানুষ্ঠানিকভাবে সেভেন অ্যান্ড আই হোল্ডিংকে এই প্রস্তাব দেয়া হয়। তবে, এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিক ঘোষণা আসবে দ্রুতই। প্রতিক্রিয়ায় আই হোল্ডিং বলছে, প্রতিষ্ঠানের কর্মী ও শেয়ার হোল্ডারদের স্বার্থ বিবেচনায় নিয়ে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে।
অর্থনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, কানাডা ও জাপানের এই চুক্তি বাস্তবায়নে অন্যতম চ্যালেঞ্জ হতে পারে উত্তর আমেরিকার বিজনেস টাইকুন ও বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানগুলো। তবে, বিনিয়োগকারীরা বলছেন, শেয়ার বাজারে দরপতনের বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে সেভেন ইলেভেনের উচিত কিছু সম্পদ বিক্রি করে দেয়া।
ব্লুমবার্গের ভোক্তা বিশ্লেষক ডায়ানা রোসেরো পিনা বলেন, 'যুক্তরাষ্ট্রের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ চেইন-সুপারশপের মালিক কুশ-টার্ড। তারা খুবই উচ্চাভিলাষী। সেভেন-ইলেভেন কেনার খবরে খুব একটা অবাক হওয়ার কিছু নেই। শেয়ার বাজারে কুশ-টার্ডের আধিপত্য দেখে বোঝা যায় তারা চাইলেই সেভেন-ইলেভেন কিনতে পারে। তবে, সেভেন-ইলেভেন কোনো ছোটখাটো প্রতিষ্ঠান না।'
ব্লুমবার্গ নিউজের বিশ্লেষক ক্রিস্টাল টিসি বলেন, 'জাপানে এমন অনেক ব্যক্তি আছেন, যাদের সেভেন-ইলেভেনের খুচরা শেয়ার আছে। তারা বোর্ডের সদস্যদের নানাভাবে সহায়তা করে আসছে। এখন বাইরের কেউ সেভেন-ইলেভেনের মালিকানা নিতে চাইলে তাদেরকে অন্যভাবে চেষ্টা করতে হবে। শেয়ারবাজারে দর পতনের ফলে জাপানি এই প্রতিষ্ঠানটি মালিকানা হস্তান্তর নিয়ে ভাবছে।'
গেল কয়েক বছরে একের পর এক প্রতিষ্ঠানের মালিকানা অধিগ্রহণের মধ্য দিয়ে ব্যবসা বাড়ানোর লক্ষ্যে কাজ শুরু করেছে সুপারশপ জায়েন্ট কুশ-টার্ড । ২০১২ সালে নরওয়ের তেল কোম্পানি 'স্টার ওয়েল ফুয়েল', ২০১৬ সালে নিজেদের অন্যতম প্রতিদ্বন্দ্বী নর্থ আমেরিকার 'সিএসটি ব্র্যান্ড'কেও কিনে নেয় তারা। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বোর্ডের সিদ্ধান্তে বড় কোনো রদবদল না আসলে সেভেন-ইলেভেনও চলে যাবে কুশ-টার্ডের পকেটে।