কর্পোরেট
স্বাস্থ্য
0

স্ট্রোকের কারণ ও চিকিৎসা

পর্ব: ৭

স্ট্রোক বা ব্রেন অ্যাটাক মস্তিষ্কে হঠাৎ করে রক্তপ্রবাহ বন্ধ হয়ে যাওয়া বা মাথার ভেতরে রক্তক্ষরণের কারণে হয়ে থাকে। প্রতিটি মস্তিষ্কের কোষগুলিকে কাজ করা বন্ধ করতে বা মারা যেতে পারে। যখন মস্তিষ্কের স্নায়ু কোষগুলি মারা যায়, তখন তাদের নিয়ন্ত্রণ করা শরীরের অঙ্গগুলির কার্যকারিতা ক্ষতিগ্রস্ত হয় বা হারিয়ে যায়। ফলে সেই শরীরের আক্রান্ত অংশের সঙ্গে মস্তিষ্কের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়। একে করে সেই অংশ অবশ হয় এবং নড়াচড়ায় অক্ষম হয়ে যায়। ঠিক কোন কোন কারণে এই রোগ হয়ে থাকে তা হয়তো অনেকেই জানেন না।

এটি নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে সেবা দিয়ে আসছে শ্যামলীর ঢাকা পেইন ফিজিওথেরাপি অ্যান্ড রিহ্যাবিলিটেশন সেন্টার (ডিপিআরসি)। এ বিষয়ে পরামর্শ দিয়েছেন ডিপিআরসির বাত-ব্যথা, প্যারালাইসিস ও রিহ্যাব-ফিজিও বিশেষজ্ঞ ডা. মো. সফিউল্যাহ প্রধান। তার পরামর্শ হুবহু তুলে ধরা হলো:

স্ট্রোকের সাথে অনেকে হার্ট অ্যাটাক মিলিয়ে ফেলে। হার্টের রোগ আসলে কার্ডিওলজি ডাক্তার দেখে থাকেন। আর স্ট্রোক নিউরোলজি ডাক্তার আবার নিউরোসার্জনরা দেখে থাকে।

আমাদের মস্তিষ্কে হঠাৎ করে রক্তপ্রবাহের যদি কোন প্রবলেম হয় তাহলে এমন সমস্যা হতে পারে। মস্তিষ্কের বিভিন্ন অংশ আছে। একেক অংশ একেক ধরনের কাজ করে থাকে। যখন আমি কথা বলছি মস্তিষ্কের স্পিচ সেন্টার থেকে তখন কমান্ড পাঠানো হয়। মস্তিস্কে যদি কোন ডিজঅর্ডার হয় বা সেরিব্রোস্পাইনাল কোন অ্যাকসিডেন্ট হয় তখনই স্ট্রোক হয়ে থাকে।

মস্তিষ্কে রক্তপ্রবাহের নালি যদি কোনো কারণে ছিড়ে যায় তখন ইন্টার্নাল রক্তক্ষরণ হয় বা রক্তপ্রবাহের নালি যদি বন্ধ হয়ে যায় তখন ওই মস্তিষ্কের স্নায়ু কোষগুলি মারা যায়।

স্ট্রোকের রোগী অনেক সময় অজ্ঞান হয়ে যেতে পারে। অনেক সময় রোগী মানুষ চিনতে পারে না। স্ট্রোক থেকে অনেক রোগীর প্রস্রাব পায়খানার সমস্যা দেখা দিতে পারে। এছাড়া মুখে লালা আসতে পারে।

যদি আমাদের হৃদরোগজনিত সমস্যা থাকে অর্থাৎ উচ্চরক্তচাপ থাকে তাহলে এই সমস্যা হবে। এছাড়া যদি রক্তে কোলেস্টেরলের পরিমাণ অতিরিক্ত বেড়ে যায় তা থেকে এই রক্ত চলাচল নালি ব্রেনের সমস্যা করতে পারে।

দীর্ঘদিন ডায়াবেটিস থেকে থাকে তাহলে স্ট্রোক হওয়ার সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি ডায়াবেটিস রোগীদের।

এছাড়া যারা অনিয়ন্ত্রিত জীবনযাপন করে যেমন দীর্ঘদিন বিভিন্ন নেশাজাতীয় দ্রব্য ব্যবহার করে, হেরোইন, প্যাথেডিন, মরফিন, বিভিন্ন গাঁজা, অ্যালকোহল নেন এবং ধূমপান করে তখন স্ট্রোক হওয়ার প্রবণতা বাড়িয়ে দেই।

এছাড়া স্ট্রোক হতে পারে মানসিক অশান্তি, মানসিক রোগ, বিভিন্ন পারিবারিক সামাজিক ধর্মীয় অস্থিরতা থেকে। একটা মানুষকে ন্যূনতম ছয় থেকে আট ঘণ্টা ঘুমানো উচিত। ঘুম ঠিকমতো না হলে স্ট্রোক হতে পারে।

স্ট্রোক হলে করণীয়

স্ট্রোকের চিকিৎসা বুঝতে হলে স্ট্রোক হয়েছে কিনা সেটা আগে আমাদের বুঝতে হবে। যদি কারো মানুষ চিনতে অসুবিধা হয় বা মাথা ব্যথা করে। শরীরের একটা অংশে শক্তি পাচ্ছে না। প্রাইমারি জাতীয় ক্লিনিক্যাল উপসর্গ দেখা দেয় তাহলে বুঝতে হবে তার স্ট্রোক হয়েছে।

তখন তাকে দেরি না করে নিকটস্থ হাসপাতালে নিয়ে যেতে হবে। সেক্ষেত্রে তার উচ্চ রক্তচাপ মেইনটেইন করা, ডায়াবেটিস চেকাপ করাতে হবে। অনেক সময় রোগীর আইসিইউ সার্পোট লাগতে পারে। এছাড়া অন্যান্য মেডিকেল ইমার্জেন্সি চিকিৎসা প্রয়োজনও হতে পারে।

স্ট্রোকের পরে প্যারালাইসিস বা পক্ষাঘাতগ্রস্ত হয়ে পড়লে ওই দিন থেকে অ্যাডভান্স প্যারালাইসিস চিকিৎসা নিতে হবে।

যদি আমরা শুরুতেই বা কয়েক সপ্তাহে পর থেকে চিকিৎসা দিতে পারি তাহলে প্রত্যেকটা রোগীর কিন্তু আস্তে আস্তে রিহ্যাবিলিটেশন হয়ে যায়। তারা সুস্থ হয়ে যায়। স্বাভাবিক চলাফেরা করতে পারে।

এক পা অবশ হয়েছে সেটা ঠিক হয়ে আবার নিজের কাজ নিজে করতে পারে। আবার কথা বলতে পারে এই ক্ষেত্রে আমরা বিভিন্ন থেরাপির মাধ্যমে রোগীদের স্বাভাবিক জীবনে নিয়ে আসতে পারি।

বিভিন্ন এক্সারসাইজ দিয়ে থাকি যেগুলোর মাধ্যমে রোগীকে পুনর্বাসন করা সম্ভব এবং পাশাপাশি রোগীর রিকারেন্ট যেন না হয়। স্ট্রোক রোগীর একটা প্রবলেম অনেক সময় তাদের ইলেক্ট্রোলাইট ইমব্যালেন্স হয়, ডায়াবেটিস বেড়ে গিয়ে বা হাই ব্লাড প্রেসার বেড়ে গিয়ে আবার রিকারেন্ট স্ট্রোক হয়।

যদি রিহ্যাবিলিটেশন চিকিৎসা করা হয় তাহলে কয়েক মাসের মধ্যে রোগী আবার স্বাভাবিক জীবনে চলে আসে।

ইএ