এশিয়া
বিদেশে এখন
0

নির্ঘুম জম্মু-কাশ্মীর: অজ্ঞাত রোগে ১৪ শিশুসহ ১৭ জনের প্রাণজানি

রহস্যময় অসুস্থতা কেড়ে নিয়েছে ঘুম। ভারতের জম্মু-কাশ্মীরের প্রত্যন্ত এক গ্রামে অজ্ঞাত রোগে প্রাণ গেছে ১৪ শিশুসহ কমপক্ষে ১৭ জনের। অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি অন্তত ১০ জন। খাদ্যে বিষক্রিয়ার উপসর্গ নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হলেও হঠাৎই জ্ঞান হারিয়ে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ছেন ভুক্তভোগীরা। সবার মস্তিষ্কের স্নায়ু ক্ষতিগ্রস্ত ছিল বলে জানা যাচ্ছে। গ্রামটিকে ‘কন্টেইনমেন্ট জোন’ ঘোষণা করে উচ্চ সতর্ক অবস্থানে প্রশাসন, চলছে অনুসন্ধান।

যত বেশি মানুষ অসুস্থ হচ্ছে, ততই জটিল হচ্ছে রহস্য। এমন এক অসুস্থতা, যার কোনো ব্যাখ্যা মিলছে না। অজ্ঞাত কারণে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ছে একের পর এক মানুষ, যাদের বেশিরভাগই শিশু। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অনেকে।

ভারতের জম্মু-কাশ্মীরের রাজৌরি জেলার প্রত্যন্ত বাদল গ্রামে গত ৭ ডিসেম্বর থেকে ঘটে চলেছে ব্যাখ্যাতীত এসব মৃত্যু। শুরুতে খাদ্যে বিষক্রিয়ার মতো কিছু উপসর্গ দেখা দেয় ভুক্তভোগীদের মধ্যে, কিন্তু এর পরপরই হঠাৎ তারা জ্ঞান হারিয়ে ফেলে, জানিয়েছেন স্থানীয় স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা। মৃত্যুর কারণ উদঘাটনে কাজ করছে প্রশাসন।

এক অধিবাসী জানান, আমাদের এলাকায় এর আগে কোনোদিন এমন ঘটনা ঘটেনি। আমার তো মনে হয় যে দেশের ভেতরেই প্রথমবার এমন ঘটনা ঘটলো। সবচেয়ে বেশি প্রাণ গেছে বাচ্চাদের। বাচ্চাদের হাসপাতালে নেয়ার সময়েও ভালোই থাকে, শুরুতে সামান্য জ্বর থাকে, কিন্তু এর পরপরই তারা মারা যাচ্ছে।

হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, বমি-ডায়রিয়াসহ খাদ্যে বিষক্রিয়ার উপসর্গ নিয়ে সর্বপ্রথম চার শিশুসহ মোট পাঁচ রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়। বাকিরা গলা ব্যথা আর শ্বাসকষ্টে ভুগছিল। তারপর একদম হঠাৎ করে সবাই অচেতন হয়ে পড়ে, পরবর্তীতে আর জ্ঞান ফেরেনি তাদের।

এ ঘটনায় গ্রামটিকে ‘কন্টেইনমেন্ট জোন’ ঘোষণা করা হয়েছে। প্রাণঘাতী হলেও রোগটি সংক্রমণ বা মহামারীর শঙ্কা দেখছে না প্রশাসন। তবে রয়েছে উচ্চ সতর্ক অবস্থানে।

রাজৌরির প্রধান চিকিৎসা কর্মকর্তা এমএল রায়না বলেন, ‘যারা মারা গেছেন, তারা তিনটি পরিবারের সদস্য। যা ঘটেছে, তা এই তিন পরিবারের মধ্যেই সীমাবদ্ধ। তাদের পাশের বাড়িটি যাদের, তারা সম্পূর্ণ ঠিকঠাক। আশপাশে আর যারাই আছেন, তাদের ক্ষেত্রেও কোনো সমস্যা দেখা যাচ্ছে না। তাই এটি কোনো জরুরি জনস্বাস্থ্য পরিস্থিতি নয়।’

ঘটনা অনুসন্ধানের নির্দেশ দিয়েছে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার। পুলিশ, বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ও ফরেনসিক বিশেষজ্ঞদের নিয়ে একটি বিশেষ তদন্ত দল গঠন করেছে স্থানীয় প্রশাসন।

এরই মধ্যে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে অর্ধশত মানুষকে। প্রাথমিক অনুসন্ধানের ভিত্তিতে ধারণা করা হচ্ছে, দূষিত পানি বা খাবার খেয়ে রোগাক্রান্ত হয়ে থাকতে পারেন ভুক্তভোগীরা। নিকটবর্তী একটি ঝর্ণার পানিতে কীটনাশকের উপস্থিতি মেলায় ওই পানি পান করা থেকে বিরত থাকতে গ্রামবাসীকে নির্দেশ দিয়েছে প্রশাসন।

জম্মু-কাশ্মীরের উপ-মুখ্যমন্ত্রী সুরিন্দার কুমার চৌধুরী, ‘তরুণ প্রাণ চলে গেছে, ছোট ছোট বাচ্চার মৃত্যু হয়েছে। পুরো জম্মু-কাশ্মীর আর সারা দেশের জন্য দুর্ভাগ্যজনক এ ঘটনা। সরকার, প্রশাসন, এলাকাবাসী-সবাই শোকাহত। এসব মৃত্যু হওয়ার কথা ছিল না। গ্রামের জীবনে এ ধরনের ঘটনা অস্বাভাবিক।’

ভুক্তভোগীদের সবাই তিনটি পরিবারের সদস্য। তাদের বাড়িঘর সিল গালা করে দিয়েছে প্রশাসন। জব্দ করা হয়েছে বাড়িগুলোতে খাওয়ার উপযোগী সবকিছু। প্রাণ হারানো ব্যক্তিদের মধ্যে ছয়জন শিশু ভাইবোন, যাদের বয়স সাত থেকে ১৫ বছরের মধ্যে। একই উপসর্গ নিয়ে ১২ ডিসেম্বর দ্বিতীয় ধাপে যেসব রোগী ভর্তি হয়েছেন হাসপাতালে, তাদের মধ্যে এক বছরের শিশুসহ পাঁচজন সুস্থ হয়েছেন।

রাজৌরির জিএমসি অ্যান্ড অ্যাসোসিয়েটেড হস্পিটালসের অধ্যক্ষ ড. অমরজিৎ সিং ভাটিয়া বলেন, ‘যারা মারা গেছে, তাদের সবার মধ্যে একটা অভিন্ন বিষয় দেখতে পেয়েছি। সবগুলো মৃত্যুর সঙ্গেই মস্তিষ্কের সম্পৃক্ততা রয়েছে। সবারই মস্তিষ্কের স্নায়ু ক্ষতিগ্রস্ত ছিল।’

চিকিৎসকরা সংক্রামক রোগের শঙ্কা উড়িয়ে দিলেও তিনটি পরিবারের সংস্পর্শে আসা ২শ' মানুষকে শনাক্ত করে রাজৌরির একটি সরকারি হাসপাতালে সরিয়ে নিচ্ছে প্রশাসন। তাদের সবাইকে পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে এবং প্রশাসনের সরবরাহকৃত পানি ও খাবার ছাড়া অন্য কিছু খাচ্ছেন না গ্রামবাসী।

এএইচ