তাদের বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে পরামর্শ দিয়েছেন শ্যামলীর ঢাকা পেইন ফিজিওথেরাপি অ্যান্ড রিহ্যাবিলিটেশন সেন্টারের (ডিপিআরসি) বাত-ব্যথা, প্যারালাইসিস ও রিহ্যাব-ফিজিও বিশেষজ্ঞ ডা. মো. সফিউল্যাহ প্রধান।
তার পরামর্শ হুবহু তুলে ধরা হলো—
অনেক রোগীর ক্ষেত্রে হাঁটু ফুলে যাওয়া বা বেঁকে যাওয়াও দেখা যায়। যাকে চিকিৎসার ভাষায় ‘জেনু’ বলা হয়। কিছুক্ষেত্রে হাঁটুতে এমন জেনু ভেরাস বা জেনু ডিফর্মিটি দেখা দিতে পারে। আবার অনেকের ক্ষেত্রে হাঁটু ব্যথা থেকে কোমর ব্যথাও দেখা দিতে পারে।
হাঁটুর গঠন হয়েছে মূলত তিনটি অংশ মিলে। ওপরেরটি হচ্ছে ফিমার, নিচেরটি টিবিয়া এবং সামনের অংশের নাম প্যাটেলা। হাঁটুর ভেতরের পানিকে বলা হয় সাইনোভিয়াল ফ্লুইড।
আমাদের যে কারণে হাঁটুর অপারেশন প্রয়োজন হয় বা রোগী বাধ্য হয় সেটার মূল কারণ হচ্ছে আমাদের মাঝে হাঁটুর সমস্যা নিয়ে জনসচেতনতা তেমন নেই। হাঁটু ব্যথা যে কারণেই হোক না কেন, রোগী যদি ব্যথার শুরুতেই চিকিৎসা শুরু করেন তাহলে অধিকাংশ সময় অপারেশনের প্রয়োজন হয় না। তবে হাঁটু ব্যথার ক্ষেত্রে আমাদের দেশের মানুষ কিছু ভুল করে থাকে। যেমন ব্যথা হলেই চেয়ারে বসে নামাজ পড়া, হাঁটা চলা কমিয়ে দেয়া, সিঁড়ি উঠা নামা না করা ইত্যাদি। এগুলো আসলে ভ্রান্ত ধারণা।
মানুষ হচ্ছে মুভমেন্ট করা প্রাণী। হাঁটা চলাফেরা এগুলো আমাদের করতে হয়। এজন্য দরকার আমাদের জনসচেতনতা। হাঁটুর ব্যথা ট্রিটমেন্ট না করলে রোগীর ভিতরে ইনফেকশন হয় পরে প্রদাহ হতে হতে হাঁটু জোড়া ক্ষয় হয়। দেখা যায় অনেক সময় এই সমস্যা কারণে পা বেঁকে যেতে পারে। অনেক হাঁটুর সামনে যে মাসেল এবং লিগামেন্ট থাকে দুর্বল হয়ে পড়ে একপর্যায়ে শক্তি হারিয়ে ফেলে হাঁটু।
ব্যথা হলে আমাদের যেটা করতে হবে যে এটার সঠিক চিকিৎসা করতে হবে। বিভিন্ন এক্সারসাইজ করতে হবে। তাহলে কিন্তু আমাদের অপারেশনের প্রয়োজন হবে না। এই ক্ষেত্রে বিভিন্ন সাপ্লিমেন্টের প্রয়োজন হয়, বিভিন্ন ইলেকট্রন থেরাপির প্রয়োজন হতে পারে ও জনসচেতনতা বাড়াতে হবে।
হাঁটুর অপারেশনের প্রয়োজন হয় না যেমন পিআরপি থেরাপি, বিভিন্ন ইলেকট্র থেরাপি এইগুলো আধুনিক চিকিৎসার অংশ। যে কারণে হাঁটুর সমস্যাটা হলো সেটা যদি আমরা প্রিভেনশন করতে পারি তাহলে কিন্তু হাঁটুর অপারেশনের প্রয়োজন পরবে না।
কেন হাঁটুর সমস্যাটা হলো তা স্পেসিফিক ডায়াগনোসিস করে বের করতে হবে। ব্যথা হলে, হাঁটু ফুলে গেলে সঙ্গে সঙ্গে অপারেশন করা যাবে না ।
অনেক সময় অপারেশন করতে হতে পারে যদি সিবিআর আর্থাইটিস হয় যে একেবারে ডিজেবল এবং রোগীর বয়স, পেশা এগুলো সব সমন্বয় করে অপারেশনের প্রয়োজন তাকে চলাফেরার বা তার পেশাগত কাজের জন্য তখন হয়ত অপারেশনের প্রয়োজন হবে।
হাঁটু ব্যথা হলে রোগীকে কিছু দিন বিশ্রাম নিতে হবে। আর হাঁটু যদি ফুলে যায় তখন ঠান্ডা সেক বেশ উপকারী। এর সঙ্গে বিভিন্ন এক্সারসাইজ আছে যেগুলো ভালো কাজ করে। এদিকে অ্যাডভান্স রিহ্যাব চিকিৎসা হাঁটু ব্যথার জন্য অত্যন্ত কার্যকরী, এতে অপারেশনের জটিলতা থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব।
পাশাপাশি বিভিন্ন এক্সারসাইজ এবং বিভিন্ন সাপ্লিমেন্ট যেমন গ্লুকোসামিন, হাইলোরনিক এসিড, ভিটামিন-ডি এর মতো সাপ্লিমেন্ট নিয়মিত নিতে হয়। আর যাদের ওজন বেশি তাদের ওজন নিয়ন্ত্রণে আনলে ব্যথা অনেকাংশে কমে আসে। তবে হাঁটুর ব্যথার জন্য জুতা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, সেজন্য অবশ্যই নরম জুতা ব্যবহার করতে হবে। এগুলোর পাশাপাশি নিয়মিত এক্সারসাইজ চালিয়ে গেলে হাঁটু ব্যথার পূর্ণ নিরাময় সম্ভব।