রেকর্ড হারে গলছে হিমবাহ। বাড়ছে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা। জলবায়ুর ক্ষতিকর প্রভাবে উষ্ণতা বাড়তে থাকায় এমন ব্যাধিতে জর্জরিত পৃথিবী। দিনকে দিন এর ভয়াবহতা আরও তীব্র হচ্ছে। ভূমিধস, বন্যা এবং খরার মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগের ঝুঁকিও বাড়ছে প্রতিনিয়ত।
এরইমধ্যে দুঃসংবাদ দিলো বিশ্ব আবহাওয়া সংস্থা (ডব্লিউএমও)। বলা হয়েছে, শিল্প বিপ্লবের আগের তুলনায় ২০২৪ সালে কার্বন ডাই অক্সাইডের মাত্রা রেকর্ড ৫২ শতাংশ বেড়েছে। অর্থাৎ, অতীতের রেকর্ড ভেঙে বায়ুমণ্ডলে কার্বন ডাই অক্সাইডের মাত্রা এমন পর্যায় পৌঁছেছে; যা মানব সভ্যতার ইতিহাসে আর কখনোই দেখা যায়নি।
ডব্লিউএমও জ্যেষ্ঠ গবেষক ওকসানা তারাসোভা বলেন, ‘যখন পৃথিবীতে মানুষ ছিলো না, তখন বায়ুমণ্ডলে একই রকম কার্বন ডাই অক্সাইড ছিলো। এটি প্রায় ৩০ থেকে ৫০ লাখ বছর আগের কথা। এটি শেষবার যখন বায়ুমণ্ডলে ছিলো তখন প্রতি মিলিয়নে ৪০০ ভাগেরও বেশি কার্বন ডাই অক্সাইড দেখা গেছে। তাপমাত্রা ২ থেকে ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেশি ছিলো। সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা ৩২ থেকে ৬৬ ফুট বেশি ছিলো।’
আরও পড়ুন:
১৯৬০ এর দশকের পর কার্বন ডাই অক্সাইডের এ বৃদ্ধির হার তিনগুণ বেড়েছে। এছাড়াও নাইট্রাস অক্সাইডের ঘনত্ব বেড়েছে রেকর্ড ২৫ শতাংশ। এমনকি গ্রিনহাউস গ্যাস ও মিথেনের মাত্রাও রেকর্ড ১৬ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। এসব মাত্রা সার্বিকভাবে ৮ লাখ বছর আগের সঙ্গে মিল পাওয়া যায় বলে জানিয়েছেন ডব্লিউএমও’র জ্যেষ্ঠ গবেষক। যা জলবায়ুকে টার্বো-চার্জ করছে বা জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতিকর প্রভাবগুলো দ্রুত গতিতে তীব্র হচ্ছে। ফলে পৃথিবী আরও উষ্ণ হচ্ছে, প্রাকৃতিক বিপর্যয়গুলো দিন দিন অনেক বেশি তীব্র হচ্ছে।
ওকসানা তারাসোভা আরও বলেন, ‘যদি আমরা এটিকে ঐতিহাসিক দৃষ্টিকোণ থেকে দেখি, তাহলে ৮ লাখ বছর আগে ফিরে যেতে হবে। পর্যবেক্ষণ ইতিহাসে দেখা গেছে, তখনকার কার্বন ডাই অক্সাইড, মিথেন এবং নাইট্রাস অক্সাইডের বর্তমান সর্বোচ্চ মাত্রার সঙ্গে মিল ছিলো।’
নভেম্বরে ব্রাজিলে হতে যাওয়া জলবায়ু শীর্ষক ৩০তম কপ সম্মেলন শুরুর প্রায় এক মাস আগে এ তথ্য সামনে আনলো বিশ্ব আবহাওয়া সংস্থা। এমন পরিস্থিতিতে উদ্বেগের পাল্লা ভারী করেছে আরও একটি তথ্য। তা হলো, ১০ বছর ধরে পৃথিবীর ফুসফুস–খ্যাত আমাজন বন যতটা কার্বন ডাই অক্সাইড শোষণ করছে তার চেয়ে বেশি নির্গমন করছে। বন উজান করতে আগুন দেয়া, দাবানলসহ খরা ও পৃথিবীর উষ্ণতা বাড়ায় আমাজনে বাড়ছে কার্বন নির্গমন।





