ফোস্কা পড়া গরমে সপ্তাহব্যাপী রেড অ্যালার্ট চলছে ভারতের রাজধানী দিল্লিতে। সর্বোচ্চ আবহাওয়া সতর্কতার মধ্যে শিশুদের সুস্থতা নিশ্চিতে ৩০ জুন পর্যন্ত বন্ধ সরকারি-বেসরকারি সব স্কুল। বছরের এই সময়ে স্বাভাবিকের চেয়ে তিন থেকে পাঁচ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেশি তাপ সহ্য করতে হচ্ছে বলে বিপর্যস্ত জনজীবন।
মঙ্গলবার পর্যন্ত কমপক্ষে টানা পাঁচদিন ধরে তীব্র তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে ভারতের বড় অংশের ওপর দিয়ে। এদিন রাজস্থান, দিল্লি, চন্ডিগড় ও উত্তর প্রদেশে দিনভর তাপমাত্রা ছিল ৪৫ থেকে ৪৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস। হরিয়ানার সির্সায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ৪৭ দশমিক আট ডিগ্রি সেলসিয়াস। এর আগে রোববার দিল্লির নাজাফগড়ে রেকর্ড করা হয় একই তাপমাত্রা। দু'দিনের মাথায় মৌসুমের সর্বোচ্চ গরমে বিপর্যস্ত বিস্তীর্ণ অঞ্চলের জনজীবন। উচ্চ তাপমাত্রার সাথে আর্দ্রতা যোগ হয়ে ভ্যাপসা গরমে শ্বাস নেয়াই যেন দায় হয়ে দাঁড়িয়েছে গুজরাটে। এসব রাজ্যসহ পাঞ্জাব আর মধ্য প্রদেশেও কমপক্ষে আরও পাঁচদিন বইবে তাপপ্রবাহ।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য, ১৯৯৮ থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত ১৯ বছরে ভারতে ১ লাখ ৬৬ হাজারের বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে গরমজনিত অসুস্থতায়। সূর্যের প্রখর রোদে তাই প্রাণঘাতী হিটস্ট্রোকের ঝুঁকি এড়াতে দিনে খুব বেশি চলাফেরা করছে না বাসিন্দারা। সুস্থ থাকার জন্য পর্যাপ্ত পানি পান করার পরামর্শ দেয়া হলেও সে উপায় নেই পানির সংকটে থাকা নিম্নবিত্তদের।
স্থানীয়রা বলেন, সকাল থেকে কিছু খাইনি, গোসলও করিনি। পানির জন্য অপেক্ষা করছি। নির্বাচনের আগে ভোট চাইতে আসেন রাজনীতিবিদরা, আর এদিকে আমরা এমন সংকটে। কাকে ভোট দেয়া উচিত? এই বস্তির বয়স প্রায় ৬০ বছর, কখনোই এখানে ঠিকভাবে পানি পাইনি আমরা। পানির তীব্র সংকটে অনেক সমস্যায় পড়তে হয় আমাদের। গোসল ও খাবার পানি নেই।
গরমের তীব্রতায় কাবু পাকিস্তানও। সিন্ধু প্রদেশের জ্যাকোবাবাদে বছরের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৪৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয় মঙ্গলবার। মহেঞ্জোদারো, শহীদ বেঞ্জিরাবাদ, সাক্রান্দ ও লার্কানায় তাপমাত্রা ছিল ৪৫ ডিগ্রির ওপরে। দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ৩৬ দশমিক তিন ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয় করাচিতে, বাতাসে আর্দ্রতা ছিল ৫৫ শতাংশ। তাপপ্রবাহের কারণে সিন্ধুতে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা একসপ্তাহ পিছিয়েছে রাজ্য সরকার। সবচেয়ে ঘনবসতিপূর্ণ প্রদেশ পাঞ্জাবে গরমের কারণে একসপ্তাহের জন্য বন্ধ সব স্কুল, ক্ষতিগ্রস্ত প্রায় ২ কোটি শিক্ষার্থী।
অভিভাবকরা বলেন, গরম তো বাড়ছেই। তার ওপর লোডশেডিং। সারারাত বিদ্যুৎ ছিল না। প্রতিটা মানুষ ভুগছে। বাচ্চাদের কষ্ট হচ্ছে সবচেয়ে বেশি। আর কেউ অসুস্থ হয়ে পড়লে সে যেন আরেক অভিশাপ।
আরও অন্তত ১০ দিন প্রায় সারাদেশেই তাপপ্রবাহ চলতে থাকবে বলে জানিয়েছে পাকিস্তানের আবহাওয়া বিভাগ। নেই বৃষ্টির সম্ভাবনাও।
পাকিস্তান আবহাওয়া বিভাগের জ্যেষ্ঠ আবহাওয়াবিদ সাকিব হুসাইন বলেন, 'আগামী কয়েক দিনে লাহোরে তাপমাত্রা বেড়ে ৪৫-৪৬ ডিগ্রিতে পৌঁছাতে পারে। পাঞ্জাবের মধ্য ও দক্ষিণাঞ্চল আর সিন্ধুর কয়েকটি অঞ্চলের জন্য নির্দেশনা জারি করেছে আবহাওয়া বিভাগ। এসব এলাকায় তাপমাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে ছয় থেকে আট ডিগ্রি সেলসিয়াস বেশি থাকবে।'
জুন মাসে তাপমাত্রা আরও বাড়বে বলে পূর্বাভাস রয়েছে। অতিরিক্ত গরমে হিমবাহ গলে আবারও বন্যার কবলে পড়তে পারে পাকিস্তান, বাড়ছে এমন শঙ্কাও। ২০২২ সালের প্রলয়ঙ্কারী বন্যায় ১৭০০ এর বেশি মানুষের মৃত্যুর পাশাপাশি তিন হাজার কোটি ডলারের আর্থিক ক্ষতি এখনও কাটিয়ে উঠতে পারেনি দেশটি।