সিলেটের আখালিয়ার নালিয়া অঞ্চল। এখানে যে কয়টি পাহাড় রয়েছে তার মধ্যে অর্ধেকেরও বেশি কাটা হয়ে গেছে। আবার যে পাহাড় নতুন সেটি কেটেও তৈরি হচ্ছে নতুন স্থাপনা। এইভাবেই সিলেটের প্রত্যেকটি অঞ্চলে পাহাড় নিধন অব্যাহত আছে।
সাম্প্রতিক সময়ে সিলেটের জাহাঙ্গীরনগর, বালুচর, মেজরটিলা, হাওলদারপাড়া সহ গোলাপগঞ্জ বিয়ানীবাজার ও জৈন্তাপুর উপজেলায় পাহাড় কাটার অভিযোগ উঠেছে। রাতারাতি কাটার ফলে পাহাড় পরিণত হচ্ছে ছোট টিলায় আবার টিলা নিমিষেই পরিণত হচ্ছে সমতল ভূমিতে। তবে সবই হচ্ছে রাতের আধাঁরে।
স্থানীয় বাসিন্দারা বলেন, 'এগুলো সবাই প্রভাবশালীদের মাধ্যমে কাটে। প্রকাশ্যে কেউ কাটে না। কে কাটে বা কারা কাটে এইগুলো কিছুই আমরা দেখি না।'
পরিবেশে বাদী সংগঠন বেলার ২০২২-২৩ সালের জরিপ বলছে, সিলেট বিভাগে মাত্র ১৮৭৫টি পাহাড় আর টিলা ভূমি ছিল ৪৮১১.৬১ একরের। অথচ ২০০২ সালের হিসেব অনুযায়ী যা প্রায় অর্ধেক। পরিবেশ কর্মীরা বলছেন গত কয়েক বছরে অন্তত ৪০ শতাংশ টিলা ভূমি কমেছে। এক্ষেত্রে প্রশাসনিক তদারকির দুর্বলতার পাশাপাশি রাজনৈতিক ভাবে প্রভাবশালীদের স্বদিচ্ছার অভাবের কথা জানান পরিবেশবাদীরা।
সিলেটের বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) সাধারণ সম্পদক আব্দুল করিম কিম বলেন, 'অবশিষ্ট যা আছে তার অধিকাংশ ধ্বসে পড়বে। কারণ পাহাড়ের পাদদেশে গৃহহীনদের বসবাসের জন্য ছোট ছোট ঘরবাড়ি বানিয়ে দিয়ে দেওয়া হয়।'
সিলেটের বেলা'র বিভাগীয় সমন্বয়ক শাহ শাহেদা আক্তার বলেন, 'এখানে রাজনৈতিক স্বদিচ্ছার একটা ঘাটতি রয়েছে এবং প্রাকৃতিক সম্পদের দিয়ে আর্থিক মুনাফা লাভের বড় একটা সুযোগ রয়েছে আর এই লোভের জায়গা থেকেই মদদ পাচ্ছেন।'
আর বিশেষজ্ঞদের শঙ্কা, এমন নির্বিচারে পরিবেশ ধ্বংস প্রাণহানির সাথে বন্যা ও ভূমিকম্পের মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগে বড় বিপর্যয় ডেকে আনতে পারে এলাকায়।
সিলেটের শাবিপ্রবি'র পরিবেশ ও পূর:কৌশল বিভাগের অধ্যাপক ড. জহির বিন আলম বলেন, 'যেই টিলাগুলো কাটা হয়েছে সেই টিলাগুলো কাটা সায়েন্টিফিক পন্থায় কাটা হয়নি। এগুলো একদম লম্বালম্বি করে কেটেছে যার ফলে ভূমি ধ্বসের সম্ভাবনা অনেক বেড়ে গিয়েছে।'
তবে পরিবেশ অধিদপ্তর পাহাড় ও টিলা কাটার বিরুদ্ধে অভিযান অব্যাহত রাখার পুরানো কথাই বললেন । আর দোহাই দিলেন জনবল সংকটের।
সিলেটের পরিবেশ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক মোঃ বদরুল হুদা বলেন, 'অনেক সময় আমাদের লজিস্টিকের কারণে যখন পাহাড় কাটে সেই সময়ে যেতে পারি না। যদিও যেতে পারি তখন জরিমানা করতে পারছি কিন্তু মূল যে অপরাধী তাকে ধরতে পারছি না। এজন্য আমাদের লোকবল বাড়ানো দরকার।'
সিলেট পরিবশে অধিদপ্তর জানায় পাহাড় ও টিলা কাটার অভিযোগের ভিত্তিতে বিগত তিন বছরে তারা শতাধিক অভিযান চালিয়ে প্রায় ৩ কোটি টাকা অর্থদন্ড আদায়, সেই সাথে ২৫টি অভিযানে ২১ ব্যক্তিকে নানা মেয়াদে কারাদণ্ড দেয়া হয়।