গত মার্চ মাসে ব্রাজিলের রিও ডি জেনেরিও শহরে পৃথিবীর ইতিহাসে সর্বোচ্চ ৬২.৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়। বিজ্ঞানীরা বলছেন, আগের বছরের তুলনায় এ বছর আরও বেশি গরম পড়ার আশঙ্কা আছে। চলতি বছরের শুরুতেই কানাডা, আমেরিকা, ইউরোপসহ বিভিন্ন অঞ্চল তীব্র দাবানলে পুড়েছে। এশিয়া ও মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে খরা ও দাবদাহে জনজীবন বিপর্যস্ত।
বিশ্ব আবহাওয়া সংস্থার মতে, কোনও জায়গায় দিনের গড় তাপমাত্রা পাঁচ ডিগ্রি বেড়ে পরপর পাঁচদিন চলমান থাকলে তাকে হিটওয়েভ বা তাপপ্রবাহ বলে। জলবায়ু পরিবর্তনে গত এক দশক ধরেই পৃথিবী উষ্ণ হচ্ছে। ভূপৃষ্ঠের তাপমাত্রা বছরের ব্যবধানে বেড়েছে গড়ে প্রায় ১ দশমিক ৪৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। যা বিশ্বের জন্য সতর্ক সংকেত।
ফ্রান্সের দক্ষিণে তাপমাত্রা ৩০ ডিগ্রি সেলসিয়াসে রেকর্ড করা হয়। এছাড়া রাজধানী প্যারিসের তাপমাত্রা ২৮ ডিগ্রি সেলসিয়াসে পৌঁছেছে। যা এপ্রিল মাসের ক্ষেত্রে অস্বাভাবিক। ফরাসি আবহাওয়া অফিস বলছে, এবার ইউরোপের বেশিরভাগ অংশে গরম আবহাওয়া থাকবে।
ফ্রান্সের আবহাওয়া অফিসের পূর্বাভাসদাতা ফ্রেডেরিক লং বলেন, 'মৌসুম অনুযায়ী যে তাপমাত্রা থাকার কথা এর চেয়ে ১০ ডিগ্রির বেশি তাপমাত্রা থাকবে। গ্রীষ্ম মৌসুমে এটি চরমে পৌঁছাবে। আরও অন্তত কয়েক দশক এমন আবহাওয়া অব্যাহত থাকবে। ভবিষ্যতে ফ্রান্সে আরও তাপমাত্রা বাড়তে পারে।'
জার্মানিতে জুন থেকে আগস্ট গ্রীষ্মকালীন আবহাওয়া। তবে এবার এপ্রিলে দেশটির কিছু অংশে তাপমাত্রা ৩০ ডিগ্রি সেলসিয়াস ছাড়িয়েছে। বসন্তের শুরুতে গ্রীষ্মের মতো আবহাওয়ায় অতিষ্ঠ ফরাসিরা। জলবায়ু পরিবর্তনে একইসঙ্গে আকস্মিক ঝড় ও বন্যার মতো ঘটনাও ঘটছে।
এদিকে জীবাশ্ম জ্বালানিতে দেয়া ভর্তুকির বিরুদ্ধে প্রতিবাদে নেদারল্যান্ডসের রাস্তায় নামেন জলবায়ু কর্মী গ্রেটা থুনবার্গসহ কয়েকশ' বিক্ষোভকারী। সড়ক অবরোধের অভিযোগে থুনবার্গকে দুইবার আটকের পর ছেড়ে দেয়া হয়।
জলবায়ু কর্মী গ্রেটা থুনবার্গ বলেন, 'আমরা এখন অস্তিত্ব সংকট ও একটি ভয়াবহ পরিস্থিতির মধ্যে আছি। মানুষের জীবন ও জীবিকা হুমকির মুখে আছে। জলবায়ু পরিবর্তনে বিশাল সংখ্যক মানুষ উদ্বাস্তু হতে বাধ্য হচ্ছে।'
২০২২ সালের ১৮ মার্চ অ্যান্টার্কটিকা মহাদেশে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৩৮ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়। পৃথিবীর শীতলতম স্থানে এ ধরনের তাপমাত্রাকে বিস্ময়কর বলছেন বিশেষজ্ঞরা। হিমবাহ গলে বাড়ছে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা। পৃথিবীজুড়ে পড়ছে উষ্ণায়নের নেতিবাচক প্রভাব। বিশেষ করে বন্যা, খরা, চরম তাপমাত্রার প্রভাবে বাড়ছে বাস্তুচ্যুত মানুষের সংখ্যা, সেই সঙ্গে দেখা দিচ্ছে খাদ্য সঙ্কট।