২৬ এপ্রিল, ১৯৮৬। রাত ১ টা বেজে ২৩ মিনিট। তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়নের চেরনোবিল পরমাণু পাওয়ার প্ল্যান্টের চার নম্বর রিয়্যাক্টর নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়। শকওয়েভে চলে যায় পুরো ভবন। পারমাণবিক বিক্রিয়া চলে যায় নিয়ন্ত্রণের বাইরে। একজন কর্মী জরুরি ভিত্তিতে শাটডাউন বাটনে চাপ দেন। পরমাণু বিক্রিয়া বন্ধ হওয়ার পরিবর্তে উল্টো ঘটে ভয়াবহ বিস্ফোরণ।
পুরো রিয়্যাক্টরে আগুন ধরে উচ্চ তেজস্ক্রিয় পদার্থ আগুনের সঙ্গে বাতাসে মিশে যায়। যে পরিমাণ পরমাণু তেজস্ক্রিয়তা সেই বিস্ফোরণ থেকে নির্গত হয়েছিল তা কয়েকশ' হিরোশিমা আণবিক বোমার তেজস্ক্রিয়তার সমান। এখন পর্যন্ত এটি পৃথিবীর সবচেয়ে বড় পরমাণু বিপর্যয়, যার প্রভাব গিয়ে পড়ে ইউক্রেন থেকে শুরু করে গোটা ইউরোপে। ইতিহাসের ভয়াবহ এই বিপর্যয় পরিচিত চেরনোবিল বিপর্যয় নামে।
কিয়েভ থেকে উত্তরে ১০৮ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত এই প্ল্যান্টে সেসময় নিরাপত্তার পরীক্ষা চলছিলো। বিস্ফোরণের পর প্ল্যান্টে কর্মরত ৩১ কর্মী আর একজন অগ্নি নির্বাপণ কর্মীর মৃত্যু হয়। তাদের বেশিরভাগই অতিরিক্ত তেজস্ক্রিয়তায় অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন। তারা জানতেও পারেননি এত বড় বিপর্যয় ঘটে গেছে। এই ঘটনার পর ক্যান্সারে আক্রান্ত হন হাজারও মানুষ। বিস্ফোরিত রিয়্যাক্টরে আরও ইউরেনিয়াম থাকায় কয়েক মাস পর এই রিঅ্যাক্টরের চারপাশে বড় দেয়াল তুলে দেয় রাশিয়া। যদিও এখনও পর্যন্ত এই স্থাপনা নিয়ে উদ্বেগ রয়েছে পশ্চিমা বিশ্বের।
ইউক্রেনের উত্তরাঞ্চলীয় প্রিপিয়াত শহরে অবস্থিত এই চেরনোবিল নিউক্লিয়ার পাওয়ার প্ল্যান্টের আশপাশের এলাকা পরিত্যক্ত রয়েছে। ভবন আর হাসপাতালগুলো ফাঁকা, ধ্বংসস্তূপও সেভাবেই রয়েছে। এলাকা দখলে নিয়েছে প্রকৃতি। রয়েছে বন্যপ্রাণীর বসতি। অথচ কোন একসময় এখানে বসতি ছিল ৫০ হাজার মানুষের। বেশিরভাগই কাজ করতেন পরমাণু কেন্দ্রে।
২০২২ সালে ইউক্রেনে রাশিয়ার আগ্রাসন শুরুর পর ২০২৫ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি তেজস্ক্রিয়তায় বিষাক্ত থাকা এই স্থাপনার বাইরে ড্রোন হামলা করে রাশিয়া। সৃষ্টি হয় বড় গর্তের। ৩৯ বছর ধরে এই নগরী রয়ে গেছে পৃথিবীর সবচেয়ে ভয়াবহ পরমাণু বিপর্যয়ের সাক্ষী। চেরনোবিলের আশাপাশ পরিণত হয়েছে ভুতুড়ে এক নগরীতে।