জলবায়ুর ক্ষতিকর প্রভাব থেকে রক্ষায় জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার থেকে বেরিয়ে আসার অংশ হিসেবে বৈদ্যুতিক যানবাহনে ভরসা বাড়ছে বিশ্বব্যাপী। তাই এই খাতে প্রতিযোগিতা তুঙ্গে। যেখানে তুলনামূলক কম দামে গাড়ি সরবরাহ করে অনেকটাই এগিয়ে চীন। এতে নিজেদের তৈরি বৈদ্যুতিক গাড়ি কম বিক্রি হওয়ায় দুশ্চিন্তায় ইউরোপ ও যুক্তরাষ্ট্র।
বৈদ্যুতিক গাড়ি উৎপাদনে চীন ভর্তুকি দেয় কি না দীর্ঘদিন ধরে তা নিয়ে তদন্ত করে আসছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও যুক্তরাষ্ট্র। যার পরিপ্রেক্ষিতে মে মাসে চীনা বৈদ্যুতিক গাড়ির ওপর শুল্কের হার প্রায় চার গুণ বাড়িয়ে ১০০ শতাংশ করার ঘোষণা দেয় যুক্তরাষ্ট্র। এক মাস না যেতেই আরও ৩৮ শতাংশের বেশি শুল্ক আরোপের ঘোষণা দেয় ইউরোপীয় ইউনিয়ন। তবে তদন্তে সহযোগিতা করবে এমন প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য শুল্ক বাড়বে ২১ শতাংশ। এই সিদ্ধান্ত কার্যকর হতে যাচ্ছে আগামী জুলাই থেকে।
ইউরোপের এমন পদক্ষেপে নড়েচড়ে বসেছে চীন। এ পরিস্থিতিতে চীনের সঙ্গে পশ্চিমাদের বাণিজ্য যুদ্ধ নতুন উচ্চতায় উঠেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে নিজেদের বৈদ্যুতিক গাড়ির বাজার রক্ষায় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছে বেইজিং।
চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র লিন জিয়ান বলেন, 'চীনের শিল্প, কোম্পানি এবং ব্যবসায়িক সমিতিগুলো এর দৃঢ় বিরোধিতা জানায়। এমন কিছু স্বার্থ রয়েছে যা চীনকে অবশ্যই চীনকে অবশ্যই রক্ষা করতে হবে। বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার নিয়ম এবং বাজারের নীতি মেনে আমরা আমাদের অধিকার এবং স্বার্থ রক্ষায় কাজ করব। প্রয়োজনীয় সমস্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।'
প্রশ্ন উঠেছে নিজেদের স্বার্থ রক্ষায় ইউরোপের বিরুদ্ধে কী ধরনের ব্যবস্থা নেবে চীন? উত্তরে দেশটির বাণিজ্য বিশ্লেষক জো মাজুর জানান, ইতোমধ্যে বাণিজ্য যুদ্ধ সম্ভাবনার উপর গুরুত্ব দিয়ে এগুচ্ছে বেইজিং। ইউরোপকে শাস্তি দেয়ার নানা উপায় চীনের কাছে রয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বড় টার্গেট হতে পারে কৃষি খাত। কারণ চীনের বাজারে মাংস ছাড়াও অনেক কৃষি পণ্য রপ্তানি করে ইউরোপ। তাদের রপ্তানি পণ্যে তদন্ত হতে পারে বলে ইঙ্গিত পাওয়া গেছে। তবে চীন যেহেতু অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারে লড়াই করছে। তাই ইউরোপ কিংবা যুক্তরাষ্ট্র কোনো দেশের সাথেই বাণিজ্য যুদ্ধ করতে চায় না চীন।
চীনের বাণিজ্য বিশ্লেষক জো মাজুর বলেন, 'চীন নিজস্ব অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারের সাথে লড়াই করছে। তাই চীন কোন ধরনের বাণিজ্য যুদ্ধে জড়াতে চায় না। কিন্তু অনেক ক্ষেত্রেই চীন মনে করে যে, তাদের উপর একটি বাণিজ্য যুদ্ধ চাপাতে চাইছে ইউরোপ ও যুক্তরাষ্ট্র। এ উত্তেজনা শীতল হওয়া উচিত।'
এদিকে ইউরোপ ও যুক্তরাষ্ট্রের নেয়া পদক্ষেপে ক্ষতি এড়াতে ইতিমধ্যেই গাড়ি নির্মাতারা চীন থেকে তাদের উৎপাদন কার্যক্রম ইউরোপে স্থানান্তরের চেষ্টা করছে। চীন সম্ভবত প্রতিশোধমূলক ব্যবস্থা নেয়ার পরিবর্তে বন্ধুত্ব বাড়ানোর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। এর জন্য ইউরোপীয় ইউনিয়নের পার্লামেন্ট নির্বাচনের চূড়ান্ত ফলাফলের দিকে তাকিয়ে চীন।