২০২৩ সালে বঙ্গবাজারে লাগা আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে ৭৫ ঘণ্টা পর। এ আগুনে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ ছিল প্রায় ১ হাজার কোটি টাকা। আর দোকান পুড়ে ৪ হাজারের বেশি।
আগুনের তাপে এক ঝটকায় কোটি পতি থেকে রাস্তায় নেমে আসেন বঙ্গবাজারের নাজমুল হোসেন নামের এক ব্যবসায়ী।
বঙ্গবাজারের ব্যবসায়ী নাজমুল হোসেন। ছবি: এখন টিভি
তিনি বলেন, 'আগুন লাগার পরদিনই আমাদের ব্যাংকে ডেকে নিয়ে যায়। আশা দিয়েছে যে, তারা আমাদের সাহায্য করবে। ওখানেই শেষ, তারপর এখনও কোনো সাহায্য করেনি আমাদের। ইন্সুরেন্স কোম্পানিগুলো কাগজের পর কাগজ নিয়ে যাচ্ছে, কিন্তু কোনো কাজ হচ্ছে না।'
অবশ্য একটি ব্যাংকের লোনের বিপরীতে অগ্নি ইন্সুরেন্স করা ছিল তার। অগ্নি ইন্সুরেন্স কতটুকু ঝুঁকি নিরসন করলো নাজমুলের?
তিনি বলেন, 'ইন্সুরেন্স তো ব্যাংকের মাধ্যমে হইছে। কিন্তু ওনারা বলছেন, ইন্সুরেন্সের টাকা সম্পূর্ণ আলাদা। এর সঙ্গে ব্যাংকের কোনো সংযোগ নেই। আজ দেবে কাল দেবে করতে করতে আজ প্রায় এক বছর পার হতে চলছে।'
বঙ্গবাজারে অগ্নি দুর্ঘটনার পর কেটেছে প্রায় এক বছর। এখন পর্যন্ত অগ্নি ইন্সুরেন্সের ক্ষতিপূরণের অর্থ বুঝে পাননি এ ব্যবসায়ী। কবে পাবেন? সে বিষয়ে জানেন না। কেন দিচ্ছে না তারও সঠিক উত্তর নেই তার কাছে।
এমন প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে এখন টিভির টিম যায় মতিঝিলে, ওই ইন্সুরেন্স কোম্পানিটির অফিসে। পরিচয় গোপন করে জানতে চাওয়া হয়, কেন লোনের বিপরীতে করা ইন্সুরেন্সের টাকা ফেরত পাবেন না তারা?
এক কর্মকর্তা বলেন, ‘বীমা পলিসি করার সময় আমরা সেখানে ছিলাম না।’ কেন ছিলেন না? জানতে চাওয়া হলে বলেন, ‘আমাদের কাছে নিয়ে এসেছে ব্যাংক।’
এরপর অভিযোগ নিয়ে বীমা নিয়ন্ত্রণ ও উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের কাছে যাওয়া। সেখানে গিয়ে পাওয়া যায় আরও কয়েকজন ভুক্তভোগী। যারা বিভিন্ন অভিযোগ নিয়ে এসেছেন এখানে।
একজন ভুক্তভোগী বলেন, 'ব্যাংক লোন দেয়ার সময় ইন্সুরেন্স করেই দেয়। এখন পর্যন্ত কোনো কোম্পানি আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করছে না। ২০১০ সালে ১২ বছর মেয়াদি ইন্সুরেন্স করে ২০২২ সালে মেয়াদ শেষ হয়ে গেলেও আমাদের টাকা পাচ্ছি না আমরা। আঞ্চলিক কার্যালয়ে বারবার হয়রান হয়েছি।'
বীমা প্রতিষ্ঠানের টালবাহানায় এ সেক্টরের প্রতি সাধারণ মানুষের কতটুকু আস্থা ফিরবে?
ব্যাংকের সেবা নিতে আসা একজন সাধারণ মানুষ বলেন, 'এমন করলে তো আস্থার জায়গা থাকবে না। ব্যাংক, বীমায় যদি মানুষ আস্থা হারিয়ে ফেলে তাহলে মানুষ যাবে কোথায়। ইন্সুরেন্স কোম্পানিগুলো বলার সময় বলে অনেক কিছু। কিন্তু বাস্তবে সে রকম কোনো মিল পাওয়া যায় না।'
নিয়ন্ত্রণহীন এ সেক্টরকে নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা চলছে বলে জানায় বীমা নিয়ন্ত্রণ ও উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের নির্বাহী পরিচালক ডা. নাজনীন কাউসার চৌধুরী।
তিনি বলেন, 'আমাদের একটা হটলাইন নাম্বার আছে। ওই হটলাইনে প্রতিদিন যেসব অভিযোগ আসে তা আমার এখানেই আসে। আমাদের এখান থেকে লাইফ ইন্সুরেন্সগুলোকে তা ফরওয়ার্ড করে দেয়া হয়।'
নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি গবেষণায় উঠে এসেছে, জীবন বীমার ক্ষেত্রে দাবি নিষ্পত্তির হার ৬৭ শতাংশ। আর সাধারণ বীমার ক্ষেত্রে তা ৩৫ শতাংশ।
জিডিপি অবদানে প্রতিবেশী দেশগুলোর তুলনায় সব থেকে পিছিয়ে বাংলাদেশের বীমা খাত। থাইল্যান্ডের জিডিপিতে বীমার অবদান ৫ দশমিক ৩০ শতাংশ, মালয়েশিয়ায় ৫ শতাংশ, ভারতে ৪ শতাংশ, চীনে ৩ দশমিক ৯০ শতাংশ, ভিয়েতনামে ২ দশমিক ৩০ শতাংশ, ইন্দোনেশিয়ায় ১ দশমিক ৪০ শতাংশ ও বাংলাদেশের জিডিপিতে বীমার অবদান মাত্র দশমিক ৪০ শতাংশ।
পরিকল্পনা ও সুশাসন প্রতিষ্ঠিত হলে ‘করবো বীমা গড়বো দেশ স্মার্ট হবে বাংলাদেশ’- এ স্লোগানের পূর্ণতা পাবে বলে মন্তব্য খাত সংশ্লিষ্টদের।