দেশের মণিপুরীদের রাজধানী খ্যাত মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলা। কেউ ব্যস্ত সুতা বুনতে, কেউ আবার বুনছেন শাড়ি। সেখানে ফুটিয়ে তোলা হচ্ছে বাহারি নকশা। জিআই পণ্যের স্বীকৃতি পাওয়ার পর থেকে তাঁতের ঘটঘট শব্দে মুখরিত গ্রাম থেকে পাড়া-মহল্লা।
এরই মধ্যে মনিপুরী কমপ্লেক্সসহ মনিপুরীপাড়ায় ফিরেছে কর্মচাঞ্চল্য। প্রতিটি শাড়ি বিক্রি হয় ৫ হাজার থেকে ১৯ হাজার টাকায়। এতেই চলছে কারিগরদের সন্তানের লেখাপড়াসহ সংসারে যাবতীয় খরচ। তবে সহজে সুতা না পাওয়াসহ রয়েছে নানা জটিলতা।
কারিগরদের মধ্যে একজন বলেন, ‘পড়াশোনার পাশাপাশি র্তঁতের কাজ করে আম্মু-আব্বুকে সাহায্য করি।’
আরেকজন বলেন, ‘সরকার থেকে আমরা তেমন কোনো সহযোগিতা পাই না। আমরা নিজেদের অর্থায়নেই এ কাজকর্ম করে চলেছি।’
ব্যবসায়ীরা জানান, রং, নকশাসহ নিজস্ব বৈশিষ্ট্যের জন্য বেশ জনপ্রিয় এই শাড়ি। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে এই শাড়ি কিনতে ভিড় করেন ক্রেতা ও পাইকাররা।
ব্যবসায়ীদের মধ্যে একজন বলেন, ‘পর্যটকরা আসছে, এতে আমাদের এখানে এই পণ্যের বেচাকেনা ভালোই চলছে।’
সম্প্রতি জিআই পণ্যের স্বীকৃতি পাওয়ায় পর খুলেছে বন্ধ থাকা বেশ কিছু তাঁত। এতে নতুন করে কর্মসংস্থান হবে অনেকের, এমনটাই প্রত্যাশা মণিপুরী নেতাদের।
মণিপুরী কাং ফেডারেশনের সভাপতি ইবাং শ্যামল কুমার সিংহ বলেন, ‘মণিপুরী শাড়ি একটা ব্র্যান্ড হয়ে যাবে এবং ব্র্যান্ড যখন হয়ে যাবে, তখন আমাদের মণিপুরীর তাঁত শিল্পীরা, তাদের আগ্রহ বাড়বে এবং পণ্যের উৎপাদন বাড়বে।’
কমলগঞ্জ আদমপুরের মণিপুরী কালচারেল কমপ্লেক্সের সভাপতি জয়ন্ত সিংহ বলেন, ‘বিপণনকেন্দ্র অথবা বিক্রয়কেন্দ্র নির্দিষ্ট করে পেলে আমরা এই শাড়ি বুননের কাজ আরো দ্রুত গতিতে এবং ভালো করে করতে পারবো।’
আর মণিপুরী শাড়ি, বেডশীটসহ নানা সামগ্রী উন্নয়নে বিভিন্ন প্রদক্ষেপের কথা বলছে জেলা প্রশাসন। এই শিল্পের জারজাতকরণ ও দেশে-বিদেশে ব্রান্ডিংয়ের জন্য ব্যবস্থা নেয়ার আশ্বাস জেলা প্রশাসকের।
মৌলভীবাজারের জেলা প্রশাসক মো. ঈসরাইল হোসেন বলেন, ‘ভবিষ্যতে সরকারের আরো পরিকল্পনা আছে এই ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর মানুষদের সামনে এগিয়ে নেয়ার জন্য। তারা যাতে তাদের এই পণ্যের ঠিকঠাক মার্কেটিং করতে পারে সে ব্যাপারে সরকার এবং জেলা প্রশাসন সর্বাত্মক সহযোগিতা করবে।’
গুণগতমান ধরে রেখে মণিপুরী শাড়িগুলো বাজারজাত করলে জেলায় অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি আসবে, এমনটাই আশা সংশ্লিষ্টদের।