চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডের সাগর উপকূলে প্রায় ২৫ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে বিশাল আকৃতির জাহাজ ভেঙে ফেলার জন্য রাখা হয়েছে। ভেঙে ফেলার পর লোহা ছাড়াও মেলে ফার্নিচার, রান্নার সরঞ্জাম, বৈদ্যুতিক বাতি ও তারসহ শত রকম মালামাল।
এর মধ্যে বিশাল বাজার রয়েছে ক্যাবল বা বৈদ্যুতিক তারের। ব্যবসায়ীরা জানান, ছোট জাহাজে কমপক্ষে ১৫ থেকে ২০ টন আর বড় জাহাজে ১০০ টনেরও বেশি বৈদ্যুতিক তার পাওয়া যায়। জাহাজভেদে ১০ থেকে ২০ রকমের বৈদ্যুতিক তার ব্যবহার হয়। এক একটি জাহাজে যা খুলে নেয়ার পর মূল্য দাঁড়ায় চার থেকে পাঁচ কোটি টাকা। জাহাজ ভাঙার পর নিলামে তা কিনে নেন ব্যবসায়ীরা।
সীতাকুণ্ড পুরাতন জাহাজের ইলেকট্রিক ক্যাবল ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি মো. আলমগীর বলেন, 'দৈনিক কয়েক কোাট টাকার ব্যবসা হয় এখানে। অনেক টাকার ব্যবসা জড়িত এখানে। প্রায় সব ব্যাংকের শাখা এখানে আছে। জাহাজ থেকে সব ধরনের তার বের হয়।'
স্ক্র্যাপ জাহাজের মালিকের ডাকা নিলাম থেকে কেনার পর বৈদ্যুতিক তারগুলো চলে যায় ডিপোতে। সেখান থেকে কাটিং শেষে চলে যায় পাইকারি দোকানে। সেখান থেকে কিনে দেশের বিভিন্ন স্থানে নিয়ে ব্যবসা করেন অনেক ব্যবসায়ী। সব মিলিয়ে স্ক্র্যাপ জাহাজ থেকে সংগ্রহ করা এসব তার বেশ কয়েকবার হাত বদল হয়ে গ্রাহকের কাছে যায়।
সীতাকুণ্ডে বৈদ্যুতিক তারের ডিপো রয়েছে ২৫ থেকে ৩০টি। এক একটি ডিপোতে ১৫ থেকে ২০ জন শ্রমিক কাজ করে। জাহাজ থেকে তারগুলো ডিপোতে আনার পর শ্রমিকরা প্লাস্টিক কভার থেকে তারগুলো বের করে ভালো ও নষ্ট তার আলাদা করে। এরপর ডিপো মালিকরা ভাল তারগুলো কেজিতে পাইকারি দোকানে বিক্রি করেন।
একজন ডিপো মালিক বলেন, 'এখান থেকে তামার তার বা অন্যান্য যেসব তার বের হয়, সেগুলো সব আমরা পাইকারি দোকানদারদের কাছে বিক্রি করি। আবার এখানের যে লাল তামাগুলো আছে, সেগুলো আমরাও নিয়ে যাই আবার অনেক সময় বিদেশিরাও কিনে নেয় আমাদের থেকে।'
সীতাকুণ্ডের কুমিরা, বারআউলিয়া, মাদামবিবিরহাট, ভাটিয়ারী এবং শহরের কদমতলীসহ বিভিন্ন এলাকায় এসব তারের পাইকারি দোকান রয়েছে শতাধিক। যেখানে প্রায় ২০ রকমের ক্যাবল তার বিক্রি হয়। এর মধ্যে ফ্লেক্সিবল ক্যাবল, পাওয়ার ক্যাবল, স্কিন ক্যাবল, এইচটি ক্যাবল, আরজি ক্যাবল, এলটি ক্যাবল তার বেশি বিক্রি হয়। সর্বনিম্ন ৬০০ থেকে সর্বোচ্চ ১ হাজার ২০০ টাকা কেজিতে বিক্রি হয় বিভিন্ন প্রকারের তার। আবার কিছু কিছু তার বিক্রি হয় ফুট হিসেবে। প্রতিটি দোকানে দৈনিক গড়ে দুই থেকে তিন লাখ টাকার বৈদ্যুতিক তার বিক্রি হয়। দিন শেষে ৩ কোটি টাকার ব্যবসা হয় এসব দোকানে। মাস শেষে যার পরিমাণ দাঁড়ায় শতকোটি টাকা।
কলকারখানা ছাড়াও দোকান, বাসাবাড়িতেও চাহিদা রয়েছে এই বৈদ্যুতিক তারের। কম দাম আর মান ভাল হওয়ায় চট্টগ্রাম তো বটেই ঢাকা, ধোলাইখালসহ দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে ব্যবসায়ীরা আসেন এখানে।
একজন দোকানদার বলেন, 'জাপান থেকে এই তার আমদানি করে নিয়ে আসতে চাইলে এই তারের দাম পড়বে দুই থেকে তিন হাজার টাকা কেজি। কিন্তু এখানে ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা কেজির মধ্যে এরকম ভালো তার পাওয়া যাচ্ছে। সারাদেশে এই তার বিক্রি করি। এখন দেশের সব জায়গাতেই এই তারের জনপ্রিয়তা বেড়ে গেছে।'
তারের পাশাপাশি বড় বাজার তৈরি হয়েছে তামারও। নষ্ট তার থেকে আলাদা করা তামা বিদেশেও রপ্তানি হয়। প্রতিকেজি তামা ১ হাজার ২০০ টাকা কেজিতে বিক্রি করেন ব্যবসায়ীরা।
এই শিল্পের সাথে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে যুক্ত আছেন কয়েক হাজার মানুষ।