হবিগঞ্জের ওলিপুরের ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের আশপাশের বেশিরভাগ জমি একদশক আগেও ছিল চাষাবাদের অনুপযোগী। বিক্রি করতে গেলেও ক্রেতা পাওয়া ছিলো কঠিন। তাই জমির মূল্য ছিল একেবারেই নামমাত্র।
তবে সময়ের সঙ্গে বদলে যায় দৃশ্যপট। ২০১৪ সালে সেখানে ২২০ একর এলাকাজুড়ে গড়ে ওঠে 'হবিগঞ্জ ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্ক'। এরপর থেকে গ্যাস, বিদ্যুৎ আর সহজ যোগাযোগ ব্যবস্থার কারণে দেশের শীর্ষ শিল্প উদ্যোক্তাদের নজর পড়ে এখানে।
ধারাবাহিক শিল্প বিনিয়োগের ফলে উদ্যোক্তাদের মধ্যে শুরু হয় জমি কেনার প্রতিযোগিতা। বর্তমানে শায়েস্তাগঞ্জের ওলিপুর থেকে মাধবপুর উপজেলার জগদীশপুর পর্যন্ত ৪০ কিলোমিটার এলাকায় মহাসড়কের দু'পাশে গড়ে ওঠেছে শতাধিক শিল্প-কারখানা। দেশি কোম্পানির পাশাপাশি সেখানে কারখানা প্রতিষ্ঠা করেছে বিভিন্ন বিদেশি কোম্পানিও।
উন্নয়নের সঙ্গে দ্রুতগতিতে বাড়তে থাকে জমির দাম। ২০১২ সালের আগে যে জমি বিক্রি হয়েছে লাখ টাকায়, তার দাম এখন কোটি টাকার বেশি।
মাধবপুর ও ওলিপুর এলাকায় শিল্পপ্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার মতো জমির সংকট থাকায় শিল্প উদ্যোক্তাদের কাছে গুরুত্ব বেড়েছে বাহুবল ও নবীগঞ্জ উপজেলারও। সেখানে বিনিয়োগের পরিমাণের সঙ্গে বাড়ছে জমির দাম।
জাস রটোফ্লেক্স ইন্ড্রাস্ট্রিজ লিমিটেডের চেয়ারম্যান একেএম জাকারিয়া চৌধুরী বলেন, 'বিদ্যুতের ধারণক্ষমতা অনেকটাই পূরণ হয়ে গেছে। এখন শিল্প কারখানা করতে গেলে নবীগঞ্জ, বাহুবল, শেরপুর ছাড়া বড় ইন্ডস্ট্রিয়াল প্লট বলতে আর কিছু নাই।'
জমি বিক্রি করে মহাসড়কের আশপাশে গ্রামবাসীদের হাতে অর্থের সংস্থান বেড়েছে। তবে জমি বিক্রিতে অনেক সময় দালালের খপ্পরে পড়ে হয়রানির অভিযোগও করছেন ভূমি মালিকরা।
সিনিয়র আইনজীবী শাহ্ ফখরুজ্জামান বলেন, 'ওলিপুর ও মাধবপুরে জমির যে দাম বেড়েছে তা অস্বাভাবিক প্রক্রিয়া। এখানে একটা মধ্যস্বত্বশ্রেণি থাকে যারা মানুষের কাছ থেকে অতি স্বল্পমূল্যে জমি ক্রয় করে। আর কোম্পানিকে সেই জমি দিয়ে লাভবান হচ্ছে।'
প্রতিবছর এই এলাকায় বাড়ছে বিনিয়োগের পরিমাণ। সেই সঙ্গে হু হু করে বাড়ছে জমির দাম। শুধুমাত্র জমি বিক্রি করে এ এলাকার অধিকাংশ পরিবার এখন বিত্তশালী। আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের পাশাপাশি শিল্প-কারখানাকে ঘিরে বহুমুখী কর্মসংস্থানের সুযোগ হয়েছে এলাকার তরুণ-তরুণীদের।