আর্থিক লোকসানের মুখে ২০২০ সালের ১ জুলাই বন্ধ হয়ে যায় রাষ্ট্রায়ত্ত ২৫টি পাটকল। দুটি বন্ধ হয় আরও আগে। বন্ধ হবার আগে ২৫টি পাটকলে ২৬ হাজার শ্রমিক কাজ করতেন। সোনালী আঁশ পাট ঘিরে শত শত শ্রমিকের স্বপ্ন সাড়ে তিনবছর পর আবারও ডানা মেলছে।
বৃহস্পতিবার (১৪ মার্চ) ক্রমান্বয়ে ২০টি রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকল খুলে দেয়ার সিদ্ধান্তের অংশ হিসেবে আনুষ্ঠানিকভাবে বাণিজ্যিক উৎপাদন চালু হলো খুলনার তিনটি পাটকলসহ ৬টিতে।
পাট পণ্যকে লাভজনক করতে ৩০ বছরের জন্য ইজারার মাধ্যমে বেসরকারি খাতে এগুলো ছেড়ে দেয় সরকার। মালিকানার পরিবর্তে মাসিক ভাড়াভিত্তিক ব্যবহার হচ্ছে এগুলো। প্রতি ৫ বছর পর পর ১০ শতাংশ হারে ভাড়া বাড়ানো হবে। আগের যেসব শ্রমিক কাজে আগ্রহী বা সক্ষম, নিয়োগের ক্ষেত্রে তাদের অগ্রাধিকার দেয়ার শর্ত রয়েছে ইজারা চুক্তিতে।
গত ডিসেম্বর থেকে দৌলতপুর জুট মিলে, জানুয়ারি থেকে জেজেআই ও কার্পেটিং জুট মিলে পরীক্ষামূলক উৎপাদন শুরু হয়। বর্তমানে এসব মিলে দৈনিক প্রায় ৬৪ টন পাট ও পাটজাত পণ্য উৎপাদন হচ্ছে। নতুন করে কাজ ফিরে পেয়ে হাসি ফুটেছে শ্রমিকদের মুখে।
পাট শ্রমিকরা বলেন, 'পাটকল চালু হওয়াতে আমাদের খুব ভালো হইছে। আমরা গরিব মানুষ, এখানে আইসা আশ্রয় নিছি। আগের তিন বছর আমরা খুব অসহায় ছিলাম।'
এই তিনটি বাদেও এ অঞ্চলের আরও ৫টি পাটকল চালুর প্রক্রিয়ায় রয়েছে। এর মধ্যে পরীক্ষামূলক উৎপাদন শুরু হয়েছে ইস্টার্ন জুট মিলে। চুক্তি শেষে হস্তান্তরের অপেক্ষায় খালিশপুর জুট মিল। টেন্ডার প্রক্রিয়া শেষে ঢাকা সকসের সাথে চুক্তির অপেক্ষায় ক্রিসেন্ট জুট মিল। আর টেন্ডার প্রক্রিয়ায় রয়েছে স্টার ও প্লাটিনাম জুট মিল। সব মিলিয়ে সুদিন ফেরার অপেক্ষা খুলনার পাট শিল্পে। মিলগুলোতে কয়েক হাজার শ্রমিকের কর্মসংস্থান হবে জানিয়ে লোকসানি মিলগুলো নিয়ে লাভের আশা নতুন মালিক পক্ষের।
দৌলতপুর জুট মিলের জেনারেল ম্যানেজার মো. ইসহাক আলী বলেন, 'প্রায় ২০টা তাঁত আমরা নিয়মিত পরিচালনা করছি। আমরা এখন সম্পূর্ণ উৎপাদনে যাওয়ার সক্ষমতা অর্জন করছি। যখন আমরা পণ্যগুলো উৎপাদন করতে পারবো, তখন লাভের মুখ দেখবো।'
উৎপাদন শুরু হওয়ায় কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে পাট শ্রমিকদের। ছবি: এখন টিভি
নরসিংদীর ঘোড়াশালে রাষ্ট্রীয় পাটকল বাংলাদেশ জুটমিল কর্পোরেশন ২০২০ সালে লোকসানের মুখে বন্ধ হয়ে যায়। বেসরকারিকরণের পর ২০২২ সালে এটির উৎপাদন চালু করে জুট অ্যালায়েন্স লিমিটেড। ৩৪ একর আয়তনের এ কারখানায় মাসিক উৎপাদন হয় ৯০০ টন পণ্য। এটির বর্ধিতকরণের পরিকল্পনা করেছে মালিক পক্ষ।
এ জুট মিলে বর্তমানে কর্মসংস্থান হয়েছে ৩ হাজার মানুষের। নতুন করে কারখানার চাকা ঘুরায় খুশি কর্মচারীরা।
তিনি বলেন, 'আমরা খুব খুশি। এ মিল ভালো চলবো। আমরা অনেকদিন কাজ করে খাইতে পারবো। আশা করি, মিল আর বন্ধ হইবে না। আমাদের সংসার ভালোভাবে চলতেছে।'
এদিন আনুষ্ঠানিক উৎপাদনে আসে সিরাজগঞ্জের রায়পুর জাতীয় জুটমিলস, চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়ার কেএফডি পাটকল, যশোরের রাজঘাটের জুট ইন্ডাস্ট্রিজ।